ফ্ল্যাপ থেকে-
"ধ্বংস হয়ে মঙ্গোলিয়ার মাটিতে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আই অফ গড নামক স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতে দেখা যায় আমেরিকার তিনটি শহর : নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, ওয়াশিংটন ডি.সি. আগুনে ধোঁয়ায় ধিকিধিকি জ্বলছে। অথচ শহর তিনটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাহলে এই ইমেজটি আসল কোথা থেকে...
অন্যদিকে ১০ বছর আগে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ফাদার জসিপ আবার ফিরে এসেছেন দৃশ্যপটে। ভিগোর ভেরোনাকে মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা বই এবং তের শতাব্দীর অজ্ঞাত একজনের মাথার খুলি পাঠিয়েছেন তিনি। ডিএনএ টেস্টিং-এর পর জানা যায়, খুলির মালিক স্বয়ং চেঙ্গিস খান। খুলিটিতে লেখা: চার দিনের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে এই দুনিয়া।
কমান্ডার গ্রে পিয়ের্সের এবারকার মিশন... ঠেকাতে হবে দুনিয়ার কেয়ামত। হাতে সময় ৯০ ঘন্টা। মিশন ব্যর্থ হলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে পৃথিবী এবং ধ্বংস হয়ে যাবে মানবসভ্যতা।"
.
কাহিনী সংক্ষেপ
একই দিনে দুনিয়ার দুই প্রান্তে ঘটলো এমন বিপরীতধর্মী দুইটি ঘটনা, যার ফলাফল একই। এবং ফলাফলটা ভয়াবহ। চারদিনে ধ্বংশ হয়ে যাবে পৃথিবী। সিগমার অভিজ্ঞ কয়েকজন সদস্য দুই দলে বিভক্ত হয়ে নেমে পড়লো মিশনে। একদলে রয়েছে পূর্বপরিচিত মঙ্ক, ফাদার ভিগোর, নবাগত জ্যাডা আর ডানকান। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই দলটি নেমে পড়লো একশনে।
ওদেরকে একই সাথে খুঁজে বের করতে হবে আই অফ গডের ধ্বংসাবশেষ, আর সেই সাথে লুকিয়ে রাখা রেলিক (সংরক্ষিত স্মৃতিচিহ্ন। এই বইয়ে চেঙ্গিস খানের দেহের সং্রক্ষণ করা অংশাবশেষকে রেলিক বলা হয়েছে) গুলি। আবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেলিকে রাখা ধাঁধার সমাধান করতে হবে।
অপর দলে রয়েছে, কমান্ডার গ্রে, তার সঙ্গিনী সেইশান আর কমান্ডার কোয়াস্কসি। দ্বিতীয় দলের পৃথিবী বাঁচানোর মিশনে নামতে খানিকটা দেরি হয়ে গেল। কারণ ওই সময়টায় তাদের সেইশানের মাকে খুঁজতে এবং পরবর্তীতে বন্দী সেইশানকে উদ্ধার করতে উত্তর কোরিয়ায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।
.
দুইদল একত্র হয়ে কঠিন আর দূর্গম পথ অতিক্রম করে দুর্যোগ আর বিপর্যয় মোকাবেলা করে চরম মুহূর্তটায় পৌঁছে গেল। কিন্তু সেখানেও তাদের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল কঠিন বাঁধা।
.
রোলিন্সের বইয়ে শেষটা কক্ষনো নির্বিঘ্নে শেষ হয় না। প্রাকৃতিক বৈরিতা, শত্রুপক্ষের আক্রমণ দুইটাই উপস্থিত থাকে লক্ষে পৌঁছুতে দেরি করানোর জন্য।
.
পাঠপ্রতিক্রিয়া
ছোটবেলায় যখন তিন গোয়েন্দা পড়তাম, তখন গল্পগুলিতে পরিচিত মুখগুলিকে (মেরী আন্টি, রাশেদ চাচা, রোরিস-রোভার, জিনা, হ্যানসন, ডেভিড ক্রিস্টোফার, এমনকি শুঁটকি টেরি) পেলে খুব উৎফুল্ল হয়ে পড়তাম। আবার মাসুদ রানার ক্ষেত্রেও যখন রাহাত খান, সোহানা, সোহেল, গিলটি মিঞা প্রমুখদের কাহিনীতে খুঁজে পেতাম, তখন অন্যরকম অনুভূতি হত। বই পড়ার আনন্দটা স্বাভাবিকের চেয়েও বেড়ে যেত।
একই কথা খাটে রোলিন্সের সিগমা ফোর্সের ক্ষেত্রে। দ্য জুডাস স্ট্রেইনের পর আই অফ গড ধরেছি। মাঝের চারটা বই বাদ পড়ে গেলেও যখন দেখলাম জুডাস স্ট্রেইনে সাগরে তলিয়ে যাওয়া মঙ্ক আই অফ গডে স্বশরীরে বেঁচে আছে, খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। আবার সেইশান আর গ্রে'কে একসাথে থাকতে দেখেও খুব ভালো লেগেছে। এখানে উল্লেখ্য, গ্রে আর সেইশান জুডাস স্ট্রেইনে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
.
রোলিন্সের অন্যান্য বইয়ের মত এটাতেও রয়েছে - ধর্ম, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অ্যাডভেঞ্চার, একশন এর সবকিছুর পারফেক্ট সংমিশ্রণ।
.
এমন সব অস্থির বিষয় এক বইয়ে রাখার পরেও লেখক সাহেব থেমে যান না। একটু আধটু জীবনবোধও থাকে বইয়ে! যদিও খুব সূক্ষ, তবুও থাকে। উদাহরণ স্বরূপ আমি কয়েকটা লাইন বলতে পারি যেগুলি আমার খুবই ভালো লেগেছে -
"আমাদের নশ্বর শরীরের আয়ু অল্প। ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া একটি উপহার। এই উপহারকে অপচয় কোরো না, ভবিষ্যতে কাজে লাগাবে ভেবে আলমারিতে তুলে রেখো না, দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরো আর কাজে লাগাও।"
কী অসাধারণ জীবনবোধ!
.
পৃথিবীর আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা ইতিহাস, সংস্কৃতি আর থ্রিলকে সংমিশ্রিত করে একজন পশু চিকিৎসক আমায় পুরো পৃথিবী ঘুরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছে! সেই অভিযান প্রচন্ড রোমাঞ্চকর এবং রহস্যে মোড়া। একমূহুর্ত রেস্ট করার কোন চান্স নেই।
.
সিগমাফোর্স সিরিজে সবচেয়ে ভালো লেগেছে যেই জিনিসটা, লেখক প্রতিটা বইয়েই শত্রু মিত্র দুই পক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে মেয়েদের রাখছেন। আর সেই মেয়ে চরিত্রটাও হবে একদম কমপ্লিট প্যাকেজ। বুদ্ধিমতী, করিৎকর্মা, একরোখা। বিশেষ করে সিগমার চিরশত্রু গিল্ট'এর হয়ে কাজ করা মেয়েগুলি; স্যান্ডস্টর্মে ক্যাসান্দ্রা, দ্য জুডাস স্ট্রেইনে শেইচান - অসাম লাগে!
তাই বলে সিগমার হয়ে কাজ করা মেয়েগুলি যে পিছিয়ে আছে, তাও নয়। তারাও অ-সা-ধা-র-ন!
.
সবমিলিয়ে রোলিন্সের বই হাতে নেওয়া মানেই অসম্ভব ভালো কিছু সময় পার করা।
.
ঝরঝরে অনুবাদে বইটা পড়তে বেশ ভালো লেগেছে। অনুবাদ পড়ে মনেই হয়নি, এটা অনুবাদকের প্রথম অনুবাদ।
.
বই পরিচিতি
বই: দ্য আই অফ গড (সিগমা ফোর্স #৮)
লেখক: জেমস রোলিন্স
রূপান্তর: Arif Zaman
প্রকাশক: রোদেলা প্রকাশনী
প্রকাশকাল: আগস্ট, ২০১৬
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৪০০ ( লেখকের সংযোজিত অতিরিক্ত তথ্য সহ)
মূদ্রিত মূল্য: ৪৬০ টাকা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৩৫