অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট
এরিক মারিয়া রেমার্ক
কাহিনি সংক্ষেপ
সতেরো বছর বয়সী এক জার্মান কিশোর পল বোমার। সাথে তার সাত বন্ধু কাট, ক্রপ, মুলার, লিয়ার, জাদেন, ডেটারিং আর হাই। দুইজন ছাড়া বাকি সবার বয়স পলের মতোই। যাদের সবাইকেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে পাঠিয়ে দেওয়া হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। ট্রেনিং ক্যাম্পের কঠোর পরিশ্রম, ওপরওয়ালার অপরিসীম দুর্ব্যবহার আর যুদ্ধের নারকীয় তান্ডবে অনুভব করল, হাজার বছরের সভ্যতাও মানুষের পশুত্বকে মুছে দিতে পারেনি। অনুভব করলো, যুদ্ধের প্রথম বোমাটা ঠিক হৃদয়ের মধ্যেই পড়ে; গুড়িয়ে দেয় সমস্ত চেতনা আর মানবিক মূল্যবোধ।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
যুদ্ধ কতটা নৃশংস হতে পারে? একজন মানুষ যদি যুদ্ধের নৃশংসতা কল্পনা করতে চায়, কতটুকু করতে পারবে? আমি আমার কথা বলতে পারি। আমি যুদ্ধ সম্পর্কে যেটুকু জানি, সেটা হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। একসময় ভাবতাম, পাকিস্তানীরা যেসব নৃশংসতা করেছে, তার সাথে কোনও কিছুর তুলনা হয় না।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। যুদ্ধ কতটা বীভৎস, ভয়ঙ্কর, অমানুষিক, একঘেয়ে, পাশবিক (বিশেষণ খুঁজে পাচ্ছি না আর) হতে পারে - বইটা না পড়লে জানা হত না। আহত সৈনিকগুলির যখমের বর্ণনা, গাদা গাদা লাশের মধ্যে ভয়ঙ্করভাবে আহত হয়ে বেঁচে থাকা একজনের বাঁচার ব্যর্থ আকুতি, ছোট্ট ছোট্ট অনভিজ্ঞ বাচ্চা ছেলেগুলিকে ফ্রন্টে মশামাছির মরতে পাঠানো, প্রচন্ড গরম কিংবা প্রচন্ড বৃষ্টিতে অমানুষের মত মানুষ মারার ওই যুদ্ধগুলির স্বার্থকতা কী ছিল, আমার মাথায় আসে না। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের আকুতি ছিল স্বাধীনতার আর পাকিদের ছিল ঘাড়ত্যাড়া বাঙালিদের শায়েস্তা করা - যুক্তিযুক্ত কারণ তো ছিল! কিন্তু দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধ যে হল, ওগুলির লক্ষ কী ছিল? বছরের পর বছর ধরে এই হত্যাযজ্ঞ করে কী ফায়দা হয়েছিল?
যুদ্ধের নারকীয় বর্ণনাগুলি পড়ে শিউরে উঠলেও, ঘৃণায় মন তিক্ত হয়ে উঠলেও চোখ ভিজে আসেনি। গল্পকথক যখন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিরতি নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো, ছুটি শেষে আবার ফিরে যাবার সময় হল - সে সময়ের অনুভূতিগুলির বর্ণনা পড়তে গিয়ে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। পলের বোন যখন চিৎকার করে বলছিল, "মা মা তোমার পল এসেছে, পল এসেছে তোমার!" - কেমন যেন শিরশিরে অনুভূতি হচ্ছিল। এরকম ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে বাড়ি ফিরে যাবার অনুভূতি বুঝি এরকম অপার্থিব হয়! বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া বুঝি এত হৃদয়বিদারক হয়!
বইয়ের অর্ধেকটা পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের মধ্যেই আশ্চর্য অবসাদ, বিষণ্ণতা জেঁকে বসলো। এই যে প্রাত্যাহিক সাদামাটা জীবন, লৌকিকতা সব কেমন অর্থহীন লাগলো।
একটা লাইন অসাধারণ লেগেছে।
"বৃষ্টি তো প্রকৃতির সমস্ত ময়লা ধুয়েমুছে চলে যায়, হৃদয়ের ময়লা মুছে যায় না?
এরকম আরো লাইন ছিল।
রেমার্কের তিনটা বই পড়েছি। দ্য রোড ব্যাক, থ্রি কমরেডস আর এইটা। তিনটার মধ্যে আর কোনটা এটার মত নাড়া দেয়নি।
বই পরিচিতিঃ
বইঃ অল কোয়ায়েট অন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট
লেখকঃ এরিক মারিয়া রেমার্ক
রূপান্তরঃ জাহিদ হাসান
পৃষ্ঠাঃ ১২০
মূল্যঃ ১৮০ টাকা
প্রচ্ছদঃ আলীম আজিজ
প্রথম প্রকাশঃ ১৯৮৬
প্রকাশনীঃ প্রজাপতি প্রকাশন
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৫১