somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নোত্থিত

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শুভ জন্মদিন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
শুভ জন্মদিন সাহেল।


(জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে আমার স্বপ্নোত্থিত রিপোস্ট করলাম।)





পরিচয়

মাশরাফির সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের ঘটনাটা ঠিক বলে বেড়াবার মত নয়। ক্রিকেটের ক ও জানি না তখন। বিকেলে তানভী আপুদের বাসায় দৌড়ে গিয়েছি ওকে খেলতে ডাকার জন্য। গিয়ে দেখি ওরা ভাইবোন দুজনে মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। টিভিতে খেলা চলছে।

সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে চেঁচিয়ে বললাম, 'তানভী আপু, খেলতে আয়!'
আপুর বড় ভাই তোহা ভাইয়া চোখ গরম করে চুপ করে থাকতে ইশারা করল। তারপরই আবার টিভিতে মনোযোগ। ওদের এত মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখে আমি নিতান্তই অনিহা নিয়ে তাকালাম টিভিতে। দেখলাম, হ্যাংলামত লম্বা একটা ছেলে কলার উঁচু করে বল করতে ছুটে আসছে। ওই বলেই সম্ভবত আউট হয়েছিল। কারণ তখন তোহা ভাইয়ার থমথমে মুখে হাসি ফুটেছে।

ওকে হাসতে দেখে খানিকটা সাহস পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, 'যেই ছেলেটা বল করছে, ওর নাম কী? ছেলেটা তো দারুণ!'
সাথে সাথে তানভী আপু নাক মুখ কুঁচকে বলল, 'দারুণ না কচু! এক নম্বরের বেয়াদব! দেখছিস না, কেমন বেয়াদবের মত কলার উঁচু করে রাখছে!'
মুখ ফসকে বলে ফেলতে যাচ্ছিলাম, আমার তো এই উঁচানো কলারেই ওরে দেখতে ভাল লাগছে। শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে ফেললাম। তানভী আপুকে ক্ষেপিয়ে দিলে একা একা স্কুলে যেতে হবে। তোয়াজ না করলে চলবে কেন?
তোহা ভাইয়া বলল, 'বোলারের নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা। আমি ডাকি মাঠে আইয়া মুইত্তা যা! নামটা শুনলেই এই কথাই মাথায় আসে।'
বলেই সে দাঁত কেলিয়ে হিরোইনখোরদের মত হাসতে শুরু করলো। আমি বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে এলাম।
ধুর! আজকের বিকেলের খেলাটাই মাটি! কী যে ক্রিকেট দেখে! ক্রিকেট কি দেখার জিনিস? - আনমনে বিড়বিড় করতে করতে ঘরে ফিরে গেলাম।

কিন্তু কলার উঁচানো, তানভী আপুর ভাষায় 'বেয়াদব' ছেলেটাকে ভুলতে পারলাম না। কত কিছু বদলালো। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাগলা ভক্ত হলাম। কত প্লেয়ার এল, কত প্লেয়ার গেল। কিন্তু ওই 'বেয়াদব'টার জায়গা কেউ নিতে পারলো না।

ঘোর

ধবধবে সাদা পর্দায় ঢাকা দৃশ্যপট। দুই আঙ্গুল মোটা, ফাঁপা সিলিন্ডারের মত একটা জিনিস। জিনিসটা কী, জানিনা। মোটা আঙ্গুলের মত লাগছে। কিন্তু ওটা নিরেট না, ফাঁপা। জিনিসটাকে অনবরত স্লাইস করে কাটা হচ্ছে। আর ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। ফাঁপা অংশ থেকে নয়, কেবল গোলাকার নিরেট অংশ থেকে রক্ত পড়ছে।
অতিপ্রাকৃত ব্যাপারটা কিছুতেই আমি সহ্য করতে পারছি না। ভয়ে থরথর করে কাঁপছি। কিন্তু কিছুতেই ওটা দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারছি না।

হঠাৎ সব স্বাভাবিক হয়ে এল।
আমি স্পষ্ট দেখছি ধবধবে সাদা পরিবেশটা কেমন যেন শ্যাওলা সবুজ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর পর তৈরি হওয়া গোল রক্তের বৃত্তটা কেন্দ্রও গাঢ় লাল হয়ে যাচ্ছে। চারপাশের রক্ত কেন্দ্রে জমা হয়ে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। বিস্তৃত দৃশ্যপট চোখের সীমানায় চলে এসেছে। ওটা এখন আর কোন আভা নেই, কোন একটা বস্তুতে পরিণত হয়েছে। জিনিসটা ধরে রেখেছে একজন মানুষ। খুব প্রিয় আর আকাঙ্ক্ষিত একজন মানুষ। তাঁর শরীর থেকে মেহেদি ফুলের গন্ধ আসছে। হালকা অথচ স্পষ্ট। কিছু কিছু ভালো লাগা তীব্র ঘোর সৃষ্টি করে। আমি মোহাচ্ছন্ন হয়ে ভালো লাগাটা উপভোগ করছি।

মোবাইলের রিংটোনের তীব্র শব্দে আমার ঘোর কেটে গেল। মনে হচ্ছিল, মেহেদি ফুলের সেই মিষ্টি ঘ্রাণটা তখনো আমার নাকে লেগে আছে।

রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর একটা ফ্রেন্ড
কল করেছিল। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ফোন রিসিভ করেছি। চোখ বন্ধ। এই তন্দ্রাবিষ্ট থেকেই এই দৃশ্যটা দেখেছি। এটা স্বপ্ন কিনা জানিনা। স্বপ্ন হলে, বলতে হবে এই ধরনের স্বপ্ন আমি আর কখনো দেখিনি। আবার দেখব কিনা তাও জানি না। খুব করে বুঝতে পারছি, আমি ভীষণভাবে ওই মানুষটার মোহে ডুবে আছি। যতদিন পর্যন্ত তাকে সরাসরি না দেখতে পাব, ঘোর কাটবে না।

পাগলামি

রোজা রেখে চিটাগাংএ ছুটে গেলাম জীবনের প্রথম লাইভ খেলা দেখতে। আসলে যে আমি ওই 'বেয়াদব'টাকেই দেখতে গিয়েছি, সেটা আমার চেয়ে ভাল কে জানে? কাছ থেকে না দেখি, দূর থেকে তো দেখতে পারব!

কিন্তু ভাগ্য সহায় হল না। অনেক অনেক দূর থেকে শুধু ২ নাম্বার জার্সির মানুষটাকে এদিক থেকে ওদিকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখলাম। আমার গ্যালারির সামনের মাঠে সে এল না। ওই মুহূর্তে আমার মনে হল, আমার মত সাধারণ একজন মানুষের কি ওঁর মত একজন বিখ্যাত মানুষের দেখা পাওয়া আদৌ সম্ভব?

ক্রিকপ্লাটুনের সৈনিক তামিম ভাই ক্ষুদেবার্তা দিয়ে জানালেন, ১৮২ মাইল দূরে গিয়ে আমার খেলা দেখার অভিজ্ঞতাটি তার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। ওই লেখার মাধ্যমেই তিনি জানতে পেরেছেন মাশরাফিকে একনজর দেখার জন্য, তাঁর সাথে দুদন্ড কথা বলার জন্য আমি কী পরিমাণ উতলা হয়ে আছি! তিনি আশা জাগালেন, তিনি হয়তো আমাকে ক্যাপ্টেনের সাথে একবার আলাপ করিয়ে দিতে পারবেন। আমিও আশায় আশায় বুক বাঁধলাম।

সুযোগ এলো না। দেখা করার আশা ছেড়ে দিয়ে কেবলমাত্র তাঁকে নিয়ে আমার লেখা গল্পের বইটা তাঁর হাতে পৌঁছাতে চাইলাম। মুনাপু বললেন যে বইমেলায় আসবেন তিনি। আমি আপুর কাছে বইটা দিলে তিনি ওটা ঠিক মাশরাফির হাতে পৌঁছে দিতে পারবেন।

মেলায় গিয়ে আলতো পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আপুর জন্য অপেক্ষা করলাম। "মাশরাফি" বইটা কিনলাম। আপু এল না। আমার সঙ্গীরা জিজ্ঞেস করলো আমার মন খারাপ কিনা। আমি বললাম, না।

মেলার পিছনে ঘাসে আপুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে "মাশরাফি"। পড়তে শুরু,করলাম। কোন নির্দিষ্ট জায়গা থেকে পড়ছি না। একেকবার একেক জায়গা থেকে পড়ছি। অনেকটা সময় কেটে গেল। একটা পাতায় দেবুদা আর ওর কথোপকথন পড়ে আমি বই বন্ধ করে উঠে পড়লাম। আর কারোর জন্য অপেক্ষা করার দরকার নাই। বাচ্চাদের মত অভিমান নিয়ে বেরিয়ে এলাম মেলা থেকে।
আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কী এমন দেখলাম যা দেখে আমার আগ্রহ উবে গেল? দেবুদা ম্যাশকে প্রশ্ন করেছিলেন, "আপনি কি বই পড়েন?"
মাশরাফি উত্তর করেছেন, "না।"

স্বপ্নলোক

তামিম ভাই বললেন, 'ক্যাপ্টেনকে তোমার কথা বলেছি। উনি সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বললেন, তোমার বই পড়তে চায়।'
লোকে অধিক শোকে পাথর হয়, আমি অধিক খুশিতে পাথর হয়ে গেলাম। তবে তামিম ভাইয়ের পরের কথাটা শুনে আমাকে পাথর থেকে মানুষে পরিণত করলো।
'আগামিকাল তোমাকে স্টেডিয়ামে নিয়ে যাব। চেষ্টা করে দেখব, মাশরাফির সাথে দেখা করানো যায় কিনা।'
শুধু এটুকু শুনেই আমি খুশিতে ধেই ধেই করে নাচতে বাকি রাখলাম। কত শত কল্পনা জল্পনা যে শুরু হয়ে গেল আমার উর্বর মস্তিষ্কে …
কীভাবে কথা বলবেন তিনি আমার সাথে? তিনি কি আদৌ আমাকে সময় করে দিতে পারবেন? কত কত ফ্যান আছে তাঁর, আমার মত নগণ্য একজনের সাথে কি তিনি দেখা করবেন? দেখা হলেও কথা কি হবে?

"আমার অনুভূতি" নাম দিয়ে ভূমিকার মত করে খানিকটা লিখে রাখলাম। আগামিকাল মাশরাফির সাথে দেখা করে এসে পুরো অভিজ্ঞতাটুকু লিখে রাখব। যদিও এখনো,কোন নিশ্চয়তা নেই সত্যিই দেখা হবে কিনা। কিন্তু তবুও আমার উচ্ছ্বাসের কোন কমতি নেই। মন বলছে, এবার দেখা হবেই।

জেগে দেখা স্বপ্নগুলো ঘুমেও এসে ধরা দেয়। প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে ঘুমাতে গেলেও গাঢ় ঘুম হল। স্বপ্নে দেখলাম, আমি আর পিনি নাসির আর তাসকিনের সাথে দেখা করতে গিয়েছি। পিনি নাসির-তাসকিনের সাথে দেখা করবে, আর আমি তো তাঁকেই দেখতে চাই। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের দেখা হলে খারাপ কী?

যাওয়ার আগে ক্রিকপ্লাটুনের এক প্রতিবেদনে দেখেছি ঠিক কোথায় থাকেন তারা! সেই ঠিকানা অনুযায়ী চলে এলাম। এসে দেখি বিশাল এরিয়া নিয়ে থাকেন তারা। সবার ঘর আলাদা আলাদা। ঘরগুলি খুবই অদ্ভুত, ইট সিমেন্টের নয়, ছনের! সবগুলি ঘরের সামনে নাম আছে। প্লেয়ারদের নাম নয়, ঘরের নিজের নাম! প্রতিবেদন অনুযায়ী নাসিরকে খুঁজতে একদিকে গেলাম। পেয়েও গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, 'কী খবর ভাই?' মন খারাপ করে মাথা নাড়ল সে। আমি বললাম, 'আরে ধুর! এখনো খেলার শেষ ওভার নিয়ে মন খারাপ করে পড়ে আছেন? এটা কোন ব্যাপার না। খারাপ দিন তো আসেই।'

বলতে না বলতেই পিনি চলে এল। বলল, 'আপনি দাঁড়ি কেটে ফেলছেন? দাঁড়িতে আপনাকে সুন্দর দেখাচ্ছিল তো!'
বলেই ছবি তোলার তোড়জোড় শুরু করলো। ছবি তোলার পর নরম সুরে নাসিরকে জিজ্ঞেস করলাম, 'ভাই! ক্যাপ্টেনের সাথে দেখা করা যাবে?'
সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, 'যাবে না।'

বিষণ্ণ মন নিয়ে পিনিকে কিছু না বলে চলে এলাম তাসকিনের ঘর খুঁজতে। ঘর খুঁজে পেয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলাম, তখন দেখি তাসকিন কোত্থেকে যেন দৌড়ে এসে ঘরে ঢুকে গেল। এসেই বই নিয়ে পড়তে বসলো। সুর করে টেনে টেনে পড়ছে। ঠিক যেন একটা বোর্ডিং স্কুলে আছে! টিচার পড়তে না দেখলে পিট্টি লাগাবে।
আমিও ঢুকে গেলাম খোলা দরজা দিয়ে। পিনিকেও ডেকে নিলাম। তাসকিনের সাথে কথা বলতে শুরু করতেই সে বলল, 'আস্তে কথা বলেন! শুনে ফেললে রক্ষা নাই!'
তক্ষুনি কে যেন তাসকিনের জানালায় উঁকি দিল। আমরা সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম। ভেবেছিলাম অন্ধকারে লোকটা দেখতে পাবে না আমাদের। কিন্তু সে বাঁজখাই গলায় বলে উঠল, 'দরজা খোল!'
তারমানে দেখে ফেলেছে!
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আরেকটা দরজা আছে। খিড়কি খুলে পিছন দিয়ে চম্পট মারলাম।

কিছুদূর হেঁটে দেখি, রাজকীয় কাপড় পরা এক লোক পুকুরে অজু করছে। কে, চিনতে পারলাম না। নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছিলাম, বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সবাইকে আমি চিনি না!
যাকগে, তিনি উপরে উঠে আসতেই জিজ্ঞেস করলাম, 'আংকেল, ক্যাপ্টেনের সাথে দেখা করা যাবে? প্লিজ?'
তিনি বললেন, 'তুমি কিসে পড়ো?'
কেন কে জানে, বললাম, 'ইঞ্জিনিয়ারিং!'
তিনি উত্তর করলেন, 'বাসায় গিয়ে পড়াশোনা করো।'
বলেই হাঁটা ধরলেন। কয়েক পা এগিয়ে আবার ফিরে এলেন। আমি তখন ছলছল চোখ নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি। বললেন, 'ওর অসুখ নিয়ে কথা বলবে না তো?'
আমি জানিইনা প্রিয় ম্যাশ অসুস্থ। তবুও বললাম, 'না, বলব না।'
বললেন, 'চলো।'

আমি তখন ভাবছি, কল্পনাই করিনি ম্যাশের সাথে কথা বলার সুযোগ পাব! কী কী বলব মনে মনে রিহার্সাল দিয়ে নিচ্ছি। আংকেল একটা রিকশা নিয়ে এলেন। আংকেলের সাথে আমি একা রিকশায় চড়ে বসেছি। পিনি নাই। কই আছে জানি না। ওকে ডাক দেওয়ার কথা মাথাতেও এল না। আমি তখন পুরাই ঘোরের মধ্যে।

সংকীর্ণ মেঠো পথ দিয়ে রিকশা চলছে তো চলছে। কত খানাখন্দ রাস্তার দুই পাশে। ভাবছি, মাশরাফি থাকে কই?
রিকশা চলছে তো চলছে। হঠাৎ মেহেদি ফুলের সেই মোহময় মিষ্টি গন্ধটা পেলাম। বুঝতে পারলাম কাছাকাছি চলে এসেছি। হাত-পা কাঁপছে …
কিন্তু …
ঘুম ভেঙ্গে গেল ………

পরিশিষ্ট

তামিম ভাইয়ের সাথে স্টেডিয়ামে এসেছি।
ঝকঝকে একটা দিন। ক্রিকেটাররা নাকি মাত্র মিনিট বিশেক নেটে প্র‍্যাক্টিস করছিল। ঘন্টা দুয়েক প্র‍্যাক্টিক্স করে রেস্ট নিতে ড্রেসিংরুমে গেছে। তামিম ভাই বলল, 'তোমার সাথেই কেন এমন মিস টাইমিং হয়, কে জানে!'
একটু থেমে বললেন, 'তুমি স্টেডিয়ামটা ঘুরে দেখ, আমি ভিতরের অবস্থাটা দেখে আসি।'

আমি একটা একটা করে সবগুলি গ্যালারি ঘুরে ঘুরে দেখছি। প্রত্যেকটা গ্যালারিতে ঢোকার জন্য প্রত্যেকবার স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে আলাদা আলাদা গেট দিয়ে ঢুকতে হয়। আমি ঢুকছি, দেখছি, বেরোচ্ছি।
ঢুকছি, দেখছি, বেরোচ্ছি।
ঢুকছি, দেখছি, বেরোচ্ছি।

কত সময় পর জানি না, আমার মনে হল অনেকক্ষণ ধরেই একজায়গায় ঘুরে মরছি। মেইন গেইট খুঁজে পাচ্ছি না কিছুতেই। তামিম ভাই তো মনে হয় আমাকে খুঁজছে। মরিয়া হয়ে মেইন গেইট খুঁজতে লাগলাম। যখন মনে হল আর খুঁজে পাবোই না, তখনই দেখলাম তামিম ভাই জান প্রাণ দিয়ে দুই হাত নাড়াচ্ছে। এক হাতে মোবাইল। নিশ্চয়ই কল ও করেছে অনেকবার? ফোনের কথা তো মাথাতেই ছিল না।
তামিম ভাইয়ের হাসিমুখ দেখে বুঝলাম, আমার অনুমতি মিলে গেছে। আমার উচিৎ উড়ে চলে যাওয়া। অথচ আমি যেন পা ই নাড়াতে পারছি না। সিসার মত ভারি লাগছে পা দুটোকে।

হঠাৎই মনে হল, যাব না আমি। তাঁর সাথে দেখা হবার পর আমি হয়ত আমার নিজের কল্পনার মানুষটার সাথে মিল পাব না। তখন আমার মোহমুক্তি হবে। সেই সাথে আমার মন ভেঙ্গে যাবে।
আমি আমার মনকে ভাঙতে চাই না। সব অধরা স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলে জীবনের কোন মানেই হয় না।

কত হাজার হাজার পাগল ভক্ত আছে তাঁর। আমি তো সাধারণ একজন। তাঁর সাথে আমার দেখা হওয়াটা তো সাধারণ একটা ঘটনার মতই হবে।
আমি সেটা চাই না। আমি চাই ব্যাপারটা অসাধারণ থাকুক। হোক না কেবল আমার চোখেই।

মোবাইল বের করে কালার নোট থেকে "আমার অনুভূতি" লেখা নোটটা ডিলিট করে দিলাম।
তামিম ভাই চিৎকার করে ডাকছে, 'মাদিহা! করছো টা কী! জলদি এসো!'
তার ডাক সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আমি পিছন ঘুরে ছুটে বেরিয়ে গেলাম।
তামিম ভাইয়ের ডাক থেকে দূরে।
স্টেডিয়াম থেকে দূরে।
তাঁর থেকে দূরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৫০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×