ঠিক রিভিউ যেটাকে বলে, আমি সেটা লিখি না। বই নিয়ে আমার যাবতীয় অনুভূতি লিখে রাখি। তা হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপন্যাসের কাহিনির বাইরের কথাও এসে যায়। বই নিয়ে আমার এই অনুভূতিকে বইকথা হিসেবে প্রকাশ করি। পারফেক্ট রিভিউ এখানে পাওয়া যাবে না।
জহির রায়হানকে নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। একটা সময় পর্যন্ত শুধু জানতাম, মানুষটা তাঁর ভাইকে খুঁজতে গিয়ে হারিয়ে গেছেন। এটুকুই। বই পুস্তকগুলিতে কেবল বলা হয়েছে তিনি স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ই জানুয়ারি নিখোঁজ হন। অথচ স্বাধীন দেশের একজন বুদ্ধিজীবী নাগরিক কেন নিখোঁজ হল, সে ব্যাপারে কোনও তথ্য নাই।
হুট করেই একদিন মনে হলো, জহির রায়হানের মত এত ট্যালেন্টেড একটা মানুষকে কারা গুম করে ফেললো? জহির রায়হানের ব্যাপারে যত জায়গায় যত আর্টিকেল পেয়েছি, সব খুঁজে বের করে পড়ে ফেললাম। উনি যত উপন্যাস, ছোটগল্প লিখেছেন, সব পড়ে ফেললাম। মাসিক ২০০০ নামে একটা ম্যাগাজিনে পিতার অস্থি'র সন্ধানে নামে অনল রায়হানের একটা আর্টিকেল পেয়েছিলাম, যেটা আমাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
জহির রায়হানের অন্তর্ধান রহস্য বাঙ্গালিরাই ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্যাপারগুলি যতটা সম্ভব আড়ালে আবডালে রাখা হয়েছে। কারণ? অজানা।
আমরা যে কী সম্পদ হারিয়েছি, সেটা কখনো উপলব্ধি করতে পারিনি। আসলে করার চেষ্টাও করিনি। করি না।
কেপির আগুনের দিন শেষ হয়নি সেজন্যই খুব আগ্রহ করে কিনেছিলাম। কিন্তু বইটা যেদিন এলো, মেজাজ খিচড়ে গেল। এইটুকু একটা বইয়ের দাম ১২০ টাকা - এটা কোন হিসেবে নির্ধারণ করলো হৃদি প্রকাশ? এই ক্ষোভেই এতদিন পড়া হয়নি বইটা।
বছর দুয়েক আগে জহির রায়হান সম্পর্কে রিসার্চ করে যা যা পেয়েছিলাম, তার সবটুকু তথ্য এই বইয়ে আছেই, সাথে আরো অনেক তথ্য আছে। লেফটেন্যান্ট সেলিমের ব্যাপারেও বিস্তারিত তথ্য আছে এতে। এই অকুতোভয় সেলিমের নাম আমরা কয়জনে জানি? অথচ তাঁর বীরত্ব মুখে মুখে ঘুরে বেড়ানোর কথা।
এঁদের মত সূর্যসন্তানের এমন পরিণতির আক্ষেপ সারা জীবনেও ঘুচবে না আমার। ঠিক যেদিন জহির কিছু অসাধু রাজনীতিবিধদের মুখোশ খুলে দিতে চেয়েছিলেন, ঠিক সেদিনই কেন এটা ঘটলো? আর সেইসব তথ্য প্রমাণ কই হারিয়ে গেল? লেফটেন্যান্ট সেলিমের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে করা ফাইলগুলি কই উধাও হল? কেন তাঁরা বেঁচে ফিরতে পারলেন না? এই বাংলাদেশীদের একটা গোষ্ঠীই এসবের জন্য দায়ী। মিরপুরের ওই এলাকায় ঢুকে পড়ার আগে সেলিমের সাথে জহিরের বাকবিতণ্ডার সময়টুকুতে ভেতরটা এত বেশি কেঁপে কেঁপে উঠছিল! এইটুকু অন্যায় না হলে হয়তো তখনকার রাজনীতির ভিতটা কিছু সত্যিকারের দেশপ্রেমিক মানুষের হাত ধরে হত। বাংলা সাহিত্য, বাংলা চলচিত্রের একটা স্বর্ণযুগ তৈরি হত।
যারা জহির রায়হানের অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কে জানতে চান, তাদের এই উপন্যাসিকাটা অবশ্যই পড়া উচিৎ। উপন্যাসিকা হিসেবে নয়, ইতিহাস হিসেবেই পড়া উচিৎ। এটা এমন একটা উপন্যাসিকা, যেটা পাঠ্যবইয়ে অনায়াসেই জায়গা পেতে পারে। আর হৃদি প্রকাশের উচিৎ বইটার দাম অর্ধেক করা। এমন একটা বই যদি দামের জন্য পাঠক না পড়ে, এরচেয়ে বেশি আফসোস আর কিছুই হতে পারে না।
বই পরিচিতঃ
বইঃ আগুনের দিন শেষ হয়নি
লেখকঃ কিশোর পাশা ইমন
প্রকাশনীঃ হৃদি প্রকাশ
সময়কালঃ বইমেলা - ২০১৬
প্রচ্ছদঃ কিশোর পাশা ইমন
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২
মূল্যঃ ১৬০ টাকা (মলাটমূল্য)
জহির রায়হান নিয়ে রিসার্চ করে আমিও একটা ছোট গল্প লিখেছিলাম। পড়তে চাইলে এইখানে খোঁচা দিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১২