শনিবার সকাল । ঘুম থেকে উঠে দেখি যে যার মত ব্যাস্ত । ব্যাস্ততার কারন বাসাই নেট কানেকশন ।আমি থাকি ম্যাচে । কিছু ইন্টারেস্টিং মানুষ আমার চারপাশে থাকে। তার ভেতর শ্রেষ্ঠ আমার রুম মেট। তার প্রধান কাজ রুমে ফিরে এসেই ওফিসে কি হয়েছে সেই ফিরিস্তি দেয়া ।
প্রথমে শুরু করবে এইভাবে , আরে ভাই আইজকা কি হয়ছে জানেন না .... পিয়নরে বললাম যা একটা শসা নিয়ে আ্য় , সে ব্যাটা শসা আনতে গিয়া দুই ঘন্টা হাওয়া ।আমি বললাম , শসা কি রংপুর থেকে আনলি, হালা মফিজ ।
পিয়ন দাত কেলিয়ে হাসে। মেজাজ এত খারাপ হল কি বলব ভাই।
আমি বললাম আমারও মেজাজ অতিশয় খারাপ হচ্ছে কিন্তু বলতে পারছি না ।
সে বলবে কেন ভাই মেজাজ খারাপ হচ্ছে কেন , আপনার পিয়নও কি এইরকম করে! আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ মেরে থাকি।
বাসায় ব্রডব্যান্ড নেয়ার পর তার গল্পের প্যাটার্ন চেন্জ হয়েছে। নতুন ফেসবুক একাউন্ট খুলেছে।
এখন তার প্রধান কাজ ওফিস থেকে এসে ফেসবুকে বসা । এবং মাঝে মঝে চিৎকার দিয়ে উঠা।
হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠবে, ওরে সলেমান তুই এইহানে কি করস । শুধু তাই নই , অবধারিত ভাবে এই সলেমানকে আমার দেখতে হয়।এবং সলেমানের জীবন বৃত্তান্ত শুনতে হয়। মাঝে মাঝে পাশের রুমে সে ম্যাসেজ করে । আমার মনে হয় ফেসবুকের যাচ্ছেতাই ব্যাবহারের কারনে কিছুদিন পর এই ব্যটা ব্লক খাবে।
পাশের রুমে থাকে মিস্টার মজনু। ওফিস বাদে তার প্রধান কাজ মোবাইলে কথা বলা।মোবাইলে যে কার সাথে কথা বলে সেটা সহজেই অনুমান করা যাই। ফ্ল্যাটের চিপা্য় চাপা্য় তার সচ্ছন্দ বিচরন। মাঝে মাঝে কথা বন্ধ থাকে , তখন বুঝি লাইলি বেওয়াফা হয়েছে। আবার কিছুদিন পর নতুন উদ্যোমে শুরু হ্য় । উদ্যোমে তার কোন ক্লান্তি নেই। এক|দিন তারে বললাম, মোবাইলে এত কথা বলো কেন, তোমার সমস্যা কি ? মুখ কাচুমাচু করে বলল মোবাইলে কথা না বললে আমার ভাল লাগে না , জানডার ভেতর ছটফট করে।
আমি বললাম সবার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে , না শুধুমাত্র অপজিট জেন্ডার এর সাথে । সে মুচকি হাসে।
ডে অফের আগের দিন আমি গভির রাত পর্যন্ত মুভি দেখি। খোলা বাতাস খাওয়ার জন্য বারন্দায় গিয়ে চমকে উঠি। দেখি অন্ধকারে চিপায় বসে মোবালইলে কথা বলছে , আর ফিকফিক করে হাসছে । আর হাসিটা , মাশাল্লাহ। রাতবিরাতে এই হাসি শুনে পিলে চমকে যায়। মোবাইলের ওপাসে যে হাসিটা শুনছে সে মানুষ না ভুত সে কথা বড় জানতে ইচ্ছে করে।
তার পাশের রুমে যে থাকে তাকে আমরা ডাকি নাগিনি বলে । কারন তার বাড়ি নাগপুর। সে এই ডাকনামে খুব যে খুসি তা নই। কিন্তু তারে খুসি করার জন্য আমরা নানান অদ্ভুত যুক্তি দেখাই। বলি ভাই দেখেন লন্ডনের বাসিন্দা যদি লন্ডনি হতে পারে আপনি নাগপুরের বাসিন্দা কেন নাগিনি হবেন না। সে মুখ ভার করে বলে ভাই আমার লিংগ চেন্জ হয়ে গেছে । আমরা বলি ধুর ভাই এই ডিজিটাল যুগে লিংগ নিয়া কেউ ভাবে নাকি, এখন তো নারী পুরুষের ভেদাভেদ নাই। তার মুখ আরো ভার হয়ে থুতনি ঝুলে পড়ে বুকের উপর।
আরেকটা ছেলে আছে যে কিনা প্রতি রাতে ভাবে সকলে ঘুম থেকে রবিন্সন ক্রুসোর মতো ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে, আর এই কলকব্জার শহরে ফিরে আসবে না। কাধে থাকবে ব্যাগ, কানে থাকবে হেডফোন। গান বাজবে....
If you miss the train i am on
you will know that i am gone
you can hear whistle blow a hundred miles
সে পারেনা । শনি বার সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সে চলে গেল শহর থেকে দুরে। কাধে ব্যাগ , কানে হেডফোন , চোখে চশমা।
কিন্তু তাকে ফিরে আসতে হয় জীবনের তাগিদে। আবার সেই অফিস বাসা, বাসা অফিস করতে থাকে। তার ক্রসো হওয়ার সাধ মেটে না। সেই ছেলেটি যখন এই লেখা লিখছে তখন পুরো শহর ঘুমিয়ে গেছে আর সে অফিসে বসে ভুতের ব্যাগার খাটছে।
মাঝে মাঝে এই ভুত ভ্রমনে বের হয় । নিচে তার নমুনা.....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩