আমাদের সংস্কৃতি কী রকম হবে, তা এখন নির্ধারণ করছে গণমাধ্যম। সমসাময়িককালে সাধারণ মানুষের বাচন ভঙ্গি, পোষাক, চিন্তার ধরন প্রত্যেকটি বিষয়ে গণমাধ্যমের আধিপত্য প্রশ্নাতীত। বহুজাতিকের মুনাফার প্রয়োজনে বিশ্বব্যাপী অভিন্ন সংস্কৃতি নির্মাণে গণমাধ্যমগুলো সক্রিয়।উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান দুই মেট্রোপলিটন শহর ঢাকা এবং চট্টগামের বিষয়ে আলোকপাত করা যেতে পারে। এই শহরগুলোতে লাখ লাখ লোক বসবাস করছে। আকাশচুম্বি বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। বাস, পথে-ঘাটে অজস্র লোকের বিচরণ, বহুতল কর্পোরেট অফিসে শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু এই মানুষেরা পরষ্পর থেকে অসম্ভব বিচ্ছিন্ন। পারষ্পরিক সুখ, দুঃখের ভাবনা বিনিময় এদের মধ্যে হয় না বললেই চলে। হয়তো দেখা যায়, পাশের ফ্যাটের একজন সাত আট দিন যাবৎ মরে পড়ে আছে, কিন্তু এই খবর প্রতিবেশীর নিকট এসে পৌঁছায় না। যদি মৃতের শরীর থেকে দুগন্ধ বের না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যজন খোঁজও নিবে না আসল পরিস্থিতি কি। তাও বাসস্থানের পরিবেশ দূষিত করছে বলে সে এগিয়ে হবে। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, সভ্যতার উষালগ্নে যখন ফ্র্যান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছিল তখন তো এই অবস্থা ছিল না। মিডিয়া গবেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমাজ কাঠামো যেমন দায়ী, তেমনি তার সহায়ক উপরিকাঠামো হিসেবে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করেছে। গণমাধ্যম বর্তমানে কর্পোরেট বাণিজ্যের মুনাফা রক্ষার্থে বিশেষ সংস্কৃতি নির্মাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আর এই সংস্কৃতির নাম হচ্ছে গণ সংস্কৃতি। বর্তমানে যা কর্পোরেট সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত।
বর্তমানে আমাদের দেশেসহ সারা বিশ্বব্যাপী এ সংস্কৃতির প্রসার দেখা যায়। এ সাংস্কৃতিক রূপটা কেমন? বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক- আলোচনার স্যাম্পেল হিসেবে আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত যুব সমাজের দৈনন্দিন ভাবনা এবং আড্ডার জগতে প্রবেশ করা যাক। পোষাকে এবং চলনে এরা যথেষ্ট স্মার্ট। এরা সংবাদপত্র পড়ে, একাধিক চ্যানেলে টিভি অনুষ্ঠান দেখে, বিভিন্ন সাহিত্যিক যেমন হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস পড়ে, বন্য ফুয়াদ বা মিলার গান শুনে, পণ্যায়িত লোকজ পোট্রেট সম্বলিত টিশার্টের সর্বশেষ সংস্করণের বিষয়ে আড্ডা দেয়। মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক সমস্যার বিষয়েও কথা বলে। আবার সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি আলোচনার প্রধান বিবেচ্য হিসেবে স্থান পায় তা হচ্ছে প্রেম সম্পর্কিত আলোচনা। অর্থাৎ এই হচ্ছে তাদের সংস্কৃতির মূল কনটেন্ট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বৃত্তের বাইরে কেন তাদের আড্ডা যেতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎ, বিভূতিভূষণ, তারাশংকর, জ্যাক লন্ডন বা হাওয়ার্ড ফাস্ট কেন আড্ডার বিষয় বস্তু হতে পারে না? উত্তর-গণমাধ্যম। এই মাধ্যমই এখন সংগীতসহ অন্যান্য শিল্পের কাঠামো এবং জনপ্রিয়তা স্থির করে দিচ্ছে। সাহিত্য ও কবিতার বিষয় কি হবে তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে।বিভূতিভূষণের আরণ্যক বা শরতের শ্রীকান্ত পড়তে যতটুকু পরিশ্রম করতে হয়, তার বিপরীতে হুমায়ুন আহমেদের মেঘ বলে যাবো যাবো উপন্যাস অনেক সহজে পড়া যায়। ক্যাসিক্যাল সঙ্গীত অনুধাবন করতে যে সাধনার প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে মিলা বা বন্য ফুয়াদের গান শুনতে কোন পরিশ্রমই করতে হয় না।এসব সস্তা এবং সহজলভ্য সঙ্গীত বা উপন্যাসের কারণে মূল্যবান বিষয়গুলো মার খাওযা শুরু করল। মেলায় হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের বিক্রি ব্যাপক, কিন্তু ক্যাসিক্যাল উপন্যাস খুবই নগণ্য। মানুষের সংস্কৃতি হয়ে গেল সস্তা। যে সব সংস্কৃতি অর্জন করতে পরিশ্রম করতে হয়, নন্দনতাত্ত্বিক এবং শৈল্পিক মূল্য রয়েছে, তা পর্যদুস্ত হওয়া শুরু করল, সুন্দরকে গ্রহণ করার মানসিকতা ধীরে ধীরে হয়ে গেল নষ্ট। সবচেয়ে বড় কথা আমরা সহজ জিনিসে অভ্যস্ত হতে শুরু করলাম। অলস হতে থাকলাম, মনস্তাত্ত্বিক অলসতা। মাথা খাটানো, গভীর ভাবে চিন্তা করার অভ্যাস, অনুধাবন করা ইত্যাদি মানসিক পরিশ্রমের প্রতি অনীহা বাড়তে থাকল। অন্যের চিন্তার উপর নির্ভরশীল হতে থাকলাম, হয়ে পড়লাম অন্যের হাতের পুতুলে।
সারা পৃথিবীর প্রিন্ট মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে এখন তিনটি প্রতিষ্ঠান, যথাক্রমে রয়টার্স (যুক্তরাজ্য), এপি-অ্যাসোসিয়েট প্রেস (যুক্তরাষ্ট্র) এবং এএফপি-এজেন্স ফ্রেঞ্চ প্রেস (ফ্রান্স)। এই মনোপলি সিস্টেম চলে আসছে অনেক বছর যাবৎ। ১৫০ বছর আগে ঔপনিবেশিক শোষণের স্বার্থে তথ্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে তিনটা সংবাদ সংস্থা চালু হয়েছিল। এরা ছিল যুক্তরাজ্যের রয়টাস, ফ্রান্সের হাভাস এবং জার্মানীর উলফ। উলফ এবং হাভাসের কর্তৃত্ব হ্রাস পেলেও রয়টার্সের অব্যাহত কর্তৃত্ব এখনো রয়ে গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা এবং সংবাদপত্রগুলো এদের উপর নির্ভরশীল। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রচারের অধিকার পেলেও নিজেদের সংবাদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচারের অধিকার পায় না। এই ব্যবস্থার খুব একটা বিরুদ্ধাচারণ জাতীয় সংবাদপত্রগুলো করেনি। কারণ, এদের মাধ্যমেই জাতীয় সংবাপত্র স্বদেশী মোড়লিপনার অধিকার পায়। অর্থাৎ নিজের দেশে তারা হয়ে উঠতে পারে বিশ্ব সংবাদের একমাত্র পরিবেশক। যদি কোন কারণে দেশীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বার্থের সংঘাত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক সংবাদের স্বদেশী মোড়লিপনা এরা হারিয়ে ফেলে। প্রধান তিন সংবাদ সংস্থার পুঁজিও বিশাল। উপনিবেশিক সময়কাল থেকেই তথ্য সাম্রাজ্যের সিংহ ভাগের মালিক রয়টার্স ইউরোপের ১০০ টি শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে মধ্যে এর অবস্থান বিদ্যমান।
এই শতকের প্রথমেই সংঘটিত হয়ে গেল দুটি দেশ দখলের ঘটনা। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরপর জায়নবাদী ইহুদীরা প্যালেস্টাইন দখলের পর থেকে অসংখ্য আঞ্চলিক যুদ্ধের ঘটনা ঘটলেও দেশ দখলের মত ঘটনা সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বাজার সংকট এবং খনিজ সম্পদের উপর একচেঠিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ইরাক ও আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্র এবং তার দোসররা দখল করে নেয়। আফগানিস্তানে হামলার ক্ষেত্রে অজুহাত ছিল, আল কায়েদা ওযার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা এবং নিরপরাধ ৫ হাজার মার্কিনিকে হত্যা করেছে। ইরাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তারা মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্রের নির্মাতা, যা মানব সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্র প্রেরিত এসব তথ্যের সত্যতা প্রমাণের দায়িত্ব কাঁধে নেয় মিডিয়া। আফগানিস্তানে হামলার সময় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংসস্তুপের ইমেজ বারবার মার্কিন নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে প্রচারিত হচ্ছিল। স্বজন হারানো আমেরিকানদের কান্নার বিপরীতে সাধারণ আফগানদের দেখানো হচ্ছিল বর্বর, দস্যু হিসেবে। বলা হচ্ছিল- এরা সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদের মূল হোতা। হাজার হাজার আফগানকে হত্যার পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করতে বাধ্য করে আমেরিকান সৈন্যরা। ইরানী চলচ্চিত্রকার মোহসেন মাখমলবাফের কান্দাহার সিনেমাটি দেখলে আমেরিকানদের বর্বরতা ভয়ঙ্করভাবে স্পষ্ট হয়। সে সময় সিএনএন প্রধান ওয়াল্টার আইজ্যাকশন স্পষ্ট নির্দেশ দেন, বিধ্বস্থ আফগানিস্তানকে দেখানো সময় যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়া হয়, এই দেশে এমন সন্ত্রাসীদের পালন করা হচ্ছে যারা ৫ হাজার নির্দোষ আমেরিকানকে হত্যা করেছে। একই সময় ১০ নং ডাউনিং স্ট্রীটে ডেকে নিয়ে আসা হয় সংবাদ মাধ্যমের পরিচালকদের। বলে দেয়া হয়, কোনভাবেই ওসামা বিন লাদেনের বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। সম্প্রচার করা যাবে না আহত এবং নিহত আফগানদের ছবি। ১৯৮৫ সালে উইলিয়াম সি. অ্যাডাসের সম্পাদিত গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মার্কিন টিভি সংবাদ নেটওয়ার্কের প্রচারের অনুপাত হচ্ছে : একজন পশ্চিম ইউরোপীয় মানুষের মৃত্যু, তিন জন পূর্ব ইউরোপীয়, নয়জন ল্যাটিন আমেরিকান, এগার জন মধ্য প্রাচ্যের এবং ১২ জন এশীয় মানুষের মৃত্যুর সমান। গণমাধ্যমের বহুজাতিক কোম্পানির প্রতি আনুগত্যের ধরন যে কি পরিমাণ তা এ ঘটনাটি দ্বারা স্পষ্ট হয়, নিউজ কর্পোরেশন মালিকানাধীন ফক্স টেলিভিশনের ফোরিডায় কর্মরত দু’জন সাংবাদিক জেইন আর্ক এবং স্টিভ উইলসন ‘মনসান্তো’র (জিএম বীজ, বিষ্পোরক এবং কীটনাশক উৎপাদিত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান) বিষয়ে একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের জন্য চাকরিচ্যুত হন। সে সময় ফক্স টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার তাদের বলেন, “এই টেলিভিশন স্টেশনের জন্য তিন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি, আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোনটা খবর। খবর সেটাই যেটা আমরা তোমাদের বলবো।”
উপরোক্ত উদাহরণে স্পষ্ট হয়, বহুজাতিক পুঁজির অবাধ বাজার রক্ষাই হচ্ছে এসব মিডিয়া হাউসের মূল লক্ষ। ইতোপূর্বে ইরাক কিম্বা আফগান আগ্রাসনে তা আরো স্পষ্ট হয়েছে। ইরাকের বহুল কথিত মারাত্মক মারণাস্ত্রের হদিস তারা এখনো পায়নি। তালেবান অজুহাতের বিষয়টি বিশ্ব বিবেকের নিকটও ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তা হচ্ছে, কাস্পিয়ান বেসিনে অবস্থিত ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তেলের রিজার্ভ সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। ইতহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, তালেবান সৃষ্টির নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা ছিল আমেরিকানদের
Hegemony হলো সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য বিস্তারের একটা ইন্ডাইরেক্ট ফর্ম যেখানে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকতৃক তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে সরাসরী সামরিক শক্তি প্রয়েগ না করেও কিছু কৌশল অবলম্বন করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। হাজার বছর পূর্বের সেই প্রিমেটিভ সোসাইটি থেকে শুরু করে বর্তমান পোষ্ট মডার্ন যুগের মধ্যবর্তী দাস প্রথা, রাজাবাদশা প্রথা, জমিদারী প্রথা ইত্যাদি যা বিভিন্ন জনগোষ্ঠিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচলিত ছিলো এর চাইতে সহস্রগুণ শক্তিশালী হলো বর্তমান Hegemony প্রথা। কারণ এখানে বোঝার উপাই নেই যে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে বা একশ্রেণী তাদের শোষণ করছে।
দাস প্রথা, রাজাবাদশা - জমীদারী শাষণ টিকে থাকতে পারেনি কারণ মানুষ একসময় বুঝতে শিখেছিলো যে এই পদ্ধতি সঠিক নয় এবং এই ব্যবস্থাগুলো শুধুমাত্র গুটিকয়েক ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় অনন্তকাল কাজ করে যাবে। মানুষ সংগঠিত হয়ে বিদ্রোহ করে এই সব প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়েছে। কিন্তু বর্তমান Hegemony প্রথায় এটা বোঝার উপয়ও নেই যে মানুষ একটি ধনীক শ্রেণী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা নির্যাতিত হচ্ছে। কিছু কৌশল অবলম্বন করে গোটা বিশ্বে এমন একটা পরিস্থিতি তৌরী করে রাখা হয়েছে যে মানুষ বুঝতেও পারবে না যে তারা বিশেষ শ্রেণী দ্বারা নিয়ন্ত্রীত।
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের শতকরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ সময় ব্যায় করি বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে। হোক সেটা ব্যক্তিগত আর অ-ব্যক্তিগত। এই যে এই লিখাটা পড়ছেন এটাও একধরনের তথ্য আদান প্রদান। এখন ৭০ ভাগ সময়টাই যদি আমাদের পূর্বনির্ধারীত ভুল জানানো হয় বা ভুল বোঝানো হয় এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়, তখন আমাদের বোঝারও উপায় নেই যে আমরা ভুল জানছি।রাজাবাদশাদের সময় রাজ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিলো। তাদের নিয়ন্ত্রীত প্রতিটা অঞ্চলেই দলপতি সহ সৈন্য পাঠাতে হতো যেন কেউ রাজাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে না পারে। কিন্তু এখন সৈন্য পাঠাতে হয়না। দেশে দেশে বিবিসি সিএনএন পাঠালেই চলে. ওয়াল্ড ব্যাংক আমাদের দেশে চালের দাম নির্ধারণ করে দেয়। বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বগুলো কতটা নগ্নভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা আর নাই বলি।
আমরা ভালো আছি। এই "আমরা" বলতে আপনারা কি বোঝেন? আপনি, আপনার মা-বাবা-ভাই-বোন- আত্নীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি। খুজেঁ দেখবেন এদের মধ্যে কেউ রিকশাওয়ালা, কোন দিনমজুর, রাখাল, গার্মেন্ট ওয়ার্কার, পরিচ্ছন্নকর্মী কিংবা ভিক্ষুক নেই। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকরীর সংখ্যা .৯৯%। আপনি আমি এদেশের জনগনের শতকরা ১% এর মধ্যেও পড়িনা। আর "আমরা" পড়ি বিশ্বের সেই ২০% এলিট শ্রেণীর মধ্যে যারা তিন বেলা বেটপুরে খেতে পারি। আর বাকি ৮০% মানুষের সাথে আমাদের নেই কোন যোগাযোগ নেই কোন খোজখবর। শুধু সিজনে সিজনে তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা উথলে পড়ে। যেমন আমরা মাঝে মাঝে তাদের শীতবস্র বিতরণ করি, খাবার দেই, কোরবানির সময় দুই টুকরা গরুর মাংশ দেই। এইটুকুই। এটাই আমার সোনার বাংলা। ইন্ডিয়াতে ও একই অবস্থা। মোম্বাই, দিল্লি, কলকাতা এই শরহগুলাই কিন্তু প্রকৃত ইন্ডিয়া না। এক গবেষনায় দেখা গেছে ইন্ডিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো (শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশি) শুধুমাত্র শ্রেণী এবং ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে (ব্রাম্মন, খত্রিয়, শুদ্র ইত্যাদি) বিশ্ব থেকে কয়েশ যুগ পিছিয়ে আছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ কন্টিনেন্টাল প্রায় সব দেশেরই একই অবস্থা।