কোরবানি ঈদ আসলেই দেখি কিছু তথাকথিত পশুপ্রেমীর (??!!) আর্তনাদ, চিৎকার বেড়ে যায়। তাদের পশুপ্রেম যেন উথলে উঠে। অবশ্য এটা তাদের নিজেদের আধুনিক, মুক্তমনা(??), মানবিক(?) এবং প্রগতিশীল (পরগতিশিল) দেখাতে চাওয়ার একটা চেষ্টা। হাতে কেএফসি এর ফ্রাইড চিকেন নিয়ে তারা কোরবানির বিপক্ষে গলা ফাটিয়ে যান। মুরগীর রোস্টে কামড় দিতে দিতে তারা বলেন "একদিনে এতগুলো প্রান নিধন বর্বরতা ইত্যাদি ইত্যাদি" যেন তারা প্লাস্টিক খেয়ে জীবন ধারণ করেন। যেন তারা কোন প্রান(গরু মুরগি হাস ছাগল,গাছ ইত্যাদি ইত্যাদি) নিধন করে না নিজের খাদ্যের সংস্থানের জন্য বা ঐধরনের খাবার ই খান না।
তারা নিজেদের নাস্তিক বলে আধুনিক চিন্তাধারার দেখাতে চান। কিন্তু নিজের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করা নাম বদলাতে পারেন না, বদলাতে চান না। তারা বলেন কোন স্রষ্টা নেই, পরকাল, বেহেশত দোযখ নেই যেখানে মৃত্যুর পর নিজের কৃতকর্মের বিচার হবে।
তারপর যদি প্রশ্ন করেন “কেন আমি ভাল কাজ করব?”
- তারা উত্তরে বলবে “ সমাজের, রাষ্ট্রের আইন মেনে চলতে হবে, আইনের বিপক্ষে গেলে শাস্তি পেতে হবে। আইন যদি ভাল কাজ করতে বাধ্য করে তাহলে করবে। “
- রাষ্ট্রের আইন তো কোন মানুষের সৃষ্টি এবং কিছু মানুষ দ্বারা পরিচালিত। তাহলে তারা যদি তাদের নিজেদের তৈরি আইন মেনে না চলে তখন কি হবে? বা তারা যদি তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী অন্যায় করে তার কি হবে? কে তাদের বাধা দেবে? খারাপ কিছু করলেও তো তার কোন সমস্যা নেই। শাস্তি তো আর পাচ্ছে না। আমি অপরাধ করেও তো পার পেয়ে যেতে পারি যদি উপযুক্ত জায়গায় লবিং করতে পারি। তখন কি হবে? কেন আমি ভাল থাকব, সৎ থাকব? যখন দেখব অসৎ হয়ে অনেক আয়েশে জীবন যাপন করা যায়। বা একজন মাফিয়া ডন, রাষ্ট্রের আইন তার পকেটে, সে সবসময় নিরাপত্তা বলয়ে থাকে। সে স্মাগ্লিং, খুন ইত্যাদি ইত্যাদি অপরাধ পরিচালনা করে। আপনি কিভাবে তাকে বুঝাবেন যে সে যেটা করছে তা খারাপ? সে তো আয়েশে জীবন যাপন করে পরিশেষে মাটীতে মিশে যাবে। তার অপকর্মের কোন শাস্তিই সে পাবে না। তাহলে কিভাবে আরেকজন কে আইন মেনে চলতে বলবেন? কিভাবে সৎ থাকতে বলবেন?
-- দেখুন সৎ থাকা, সৎ কাজ করা ইত্যাদির প্রশান্তি বা অনুভূতি মানুষের মনের মাঝেই থাকে, মানবিকতা থেকে সে সৎ কাজে আকৃষ্ট হয়, ভাল কাজে আকৃষ্ট হয়, মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে চায়।
--- খুব ভাল কথা। তাহলে ২ টা প্রশ্ন এসে যায়। ১)আমাকে বলুন আপনি এই যে মানবিকতা, মানুষের নিজের ভেতরের মানুষ ইত্যাদি বিষয়গুলো বললেন তা মানুষের ভেতর আসলো কিভাবে? কোন বিবর্তনের ফলে তার সৃষ্টি? কোন সে জিনিষ যা মানুষের ভেতর ভাল খারাপের পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়। যার ফলে ভাল খারাপ আলাদা করতে পারে? কিভবে এর সৃষ্টি? অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে তো এই জিনিষ নেই। তারা তো ভাল মন্দ বিচার করতে সক্ষম নয়। মানুষের মাঝে কিভাবে আসলো এটা যদি বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের উৎপত্তি হয়? আর ২য় প্রশ্ন হচ্ছে আমি যদি ঐসব “মানবিকতা “ (যার ব্যাখ্যা আপনারা জানেন না, যা দেখেন না কিন্তু বিশ্বাস করেন এবং তা অন্ধ বিশ্বাস বলে মেনে নিতে রাজি নন ) বাদ দিয়ে আমি যদি যা আমার জন্য সুবিধা তাই করি তাহলে আপনি কি আমাকে দোষ দিতে পারেন? কি বলে আমাকে ফেরাবেন? ঐ সব প্রয়োগ করে তো আমি কোন লাভ দেখছি না, উলটো অনেক লস। (প্লিজ আমাকে অনুভূতি, প্রশান্তি এসবের কথা বলবেন না কারন আপনাদের তথাকথিত বিবর্তনবাদ এসব ব্যাপার সমর্থন করেনা। এসব ব্যাপার হওয়া সম্ভব নয় আপনাদের তত্ত্ব অনুযায়ী)
---- ( কিছুক্ষণ ইতস্তত করে) আসলে মানুষ যখন আরও জ্ঞান অর্জন করবে, আরও পড়াশুনা করবে তখন তারা বুঝতে পারবে এসব গুণাবলী চর্চার মাহাত্ম্য এবং সুবিধা। মেনে চললে ই হয় , না চললে কি হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। *আর মানুষের মধ্যে কিভাবে এর সৃষ্টি তা জানতে হলে আরও অপেক্ষা করতে হবে। বিজ্ঞান যত উন্নত হবে তত বিষয়গুলো পরিস্কার হবে, তত জানতে পারবে এসব প্রশ্নের উত্তর।
-- তার মানে এসব কেন করব বা মেনে চলার জন্য আমাকে আগে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে? আচ্ছা তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নি কিন্তু পৃথিবীর কয়জন মানুষ এত উচ্চ জ্ঞানসম্পন্ন হয়? আর সব লোক যাবে কই? পৃথিবী শুধু কি ঐ উচ্চ শিক্ষিত দের জন্য হবে? আর সবাই কে কিভাবে বুঝাবেন?
* তারমানে আপনি বলতে চাইছেন বিজ্ঞান এখনো এত উন্নত নয় যে এসব প্রশ্নের উত্তর দেবে, তাইতো? আপনারা বলেন বর্তমান বিজ্ঞান তার উন্নতির শিখরে আছে তারপরও বিজ্ঞান এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা? নাকি ইচ্ছে করেই দেয়না? আর আপনার এই বিজ্ঞানের কতিপয় অপ্রমাণিত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বলে দিচ্ছেন স্রষ্টা বলে কেউ নেই। যে বিষয় প্রমান হয়নি তা বিশ্বাস করা কি অন্ধ বিশ্বাস নয়?
এরপর শুরু হবে তাদের কথা ঘুরানো, পেঁচানো, অন্য বিষয়ে যাওয়ার চেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি এবং সবশেষে সালিশ মানি তালগাছ আমার। তাই আমি এসব নাস্তিকদের জন্য একটা কথা বলি " হয় তারা বোকা, অজ্ঞ,অন্ধ নাহয় তারা ভণ্ড"