কাদেসিয়া প্রান্তর। পারস্যের সম্রাটের বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। মমতাময়ী মা খানসা তাঁর বুকের ধন চার ছেলে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে এসেছেন। যুদ্ধ শুরুর পূর্বেই ছেলেদের কাছে ডেকে বলে দিলেন “ তোমাদের আমি বহুকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছি, বহু দুঃখ বিপদের মধ্যে দিয়ে মানুষ করে তুলেছি। এখন আমার কথা শোন, সত্যের জন্য যুদ্ধ করার মহত্ত্বের কথা স্মরণ কর আর স্মরণ কর কোরআনের কথা। কাল প্রভাতে সুস্থ মনে শয্যা ত্যাগ করে শঙ্কাহীন চিত্তে সাহসের সাথে যুদ্ধে যোগদান করবে। প্রতিপক্ষের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী যোদ্ধার সম্মুখীন হবে এবং প্রয়োজন হলে নির্ভীক চিত্তে শহীদ হবে।“
পরদিন খানসার চার ছেলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরলেন এবং একে একে চারজনই শহীদ হলেন। সংবাদ বীর মাতার কাছে পৌঁছলে তিনি দুহাত উপরে তুলে বললেন “ আল্লাহ্, আমাকে আপনি শহীদের মাতা হবার সৌভাগ্য দান করেছেন, আপনাকে সহস্র ধন্যবাদ। “ কোন শোকোচ্ছ্বাস নেই, দুঃখবোধ নেই। এক পরম তৃপ্তিতে মায়ের বুক ভরে গেছে- কারন তাঁর পুত্ররা সত্যের জন্য, ইসলামের জন্য প্রান দিয়েছে।এর চাইতে গৌরবজনক মৃত্যু আর কি হতে পারে।
ইসলামের স্বর্ণযুগ তখন এমনি এমনি আসেনি। এমন মা, বোন, স্ত্রী ছিল বলেই এসেছিল। কারন তারা তাদের নিজের সন্তান, ভাই, স্বামীকে ইসলামের পথে লড়তে সাহস যুগিয়েছিল, ত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিল। আজকের দিনে ইসলামের বিজয় কামনা করে, ইসলামের স্বর্ণযুগ প্রত্যাশা করে এমন পুরুষ,মহিলা, বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী অনেক পাওয়া যাবে কিন্তু কয়জন পুরুষ পাওয়া যাবে যে ইসলামের জন্য প্রয়োজন হলে নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত? কয়জন মা পাওয়া যাবে যে শহীদের মাতা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে? কয়জন স্ত্রী পাওয়া যাবে যে স্বামীকে জিহাদে যেতে দিতে এক পায়ে খাড়া? কোন জন বোন পাওয়া যাবে যে ভাইকে ইসলামের পথে লড়তে উৎসাহ দেবে? অনেক মা পাওয়া যাবে যিনি ইসলামের পথে আত্মত্যাগকারীকে বাহাবা দেয় কিন্তু কোনক্রমেই সেই আত্মত্যাগকারী নিজের ছেলে হোক তা চায়না। এমন অনেক স্ত্রী পাওয়া যাবে যে ইসলামের পথে জিহাদকারি বীর দেখতে চায় কিন্তু সেই বীর হোক তার স্বামী ছাড়া অন্য কেউ। অনেক বাবা পাওয়া যাবে যিনি ইসলামের পথে শহীদ কে দেখে আবেগে আপ্লুত হন কিন্তু নিজের ছেলেকে সেই শহীদের যায়গায় দেখতে চান না। তাহলে ইসলামের জয় হবে কি করে? স্বার্থপর , ভিতু মুসলিমদের দ্বারা ইসলামের বিজয় কখনোই সম্ভব নয়। তারা শুধু অত্যাচারিত হয়েই যাবে। তারা কখনোই এটা অনুধাবন করতে পারে না যে ইসলামের পথে, সত্যের পথে, আল্লাহ্র পথে লড়াই এবং প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ কখনোই ব্যর্থ হয়না। কোন দিনই ব্যর্থ হয়না। একটি প্রাণের একটি পবিত্র জীবনের আত্মাহুতি সত্যের আলোক শিখা, সত্যের উদাত্ত বানীকে আরও তীব্রতর আরও জ্যোতির্ময় করে তোলে। মৃত্যুভয় যাদের নেই, সাহস ও অটল বিশ্বাস যাদের বুকে তাদের জয় সুনিশ্চিত। ইসলাম একটি অজেয় শক্তি। অন্যায়, অন্ধকার, ও অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ। তাই যুগে যুগে ইসলামকে মোকাবেলা করতে হয়েছে বহু বাধা। একে ধ্বংস করার জন্য প্রতিমুহূর্তে চলেছে ষড়যন্ত্রের নীল নক্সা এবং এখনো চলছে। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্র সফল হবেনা। ইসলামের বিজয় হবেই। কারণ এর রক্ষক মহান আল্লাহতায়ালা। একদিন সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয়ের কেতন উড়বে। আমাদের এই বাংলাদেশেও ইসলামের বিজয় হবে। যেদিন বাংলার তথা বিশ্বের সব মুসলমানের ঘরে ঘরে এমন অকুতোভয়, আত্মত্যাগী মা/বোন/ স্ত্রী থাকবে সেদিন পৃথিবীর কোন শক্তি ইসলামকে, ইসলামের জয়যাত্রাকে রুখতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৭