নিজেকে যতটা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায় সবার সামনে আপনি তা করেছেন। কিন্তু ধরা পড়ে যাচ্ছেন তখনই যখন আপনি কথা বলার জন্য মুখ খুলছেন। আপনি হয়তো নিজেই বুঝতে পারছেন যে, আপনি স্মার্টলি কথা বলতে পারছেন না। কিন্তু এর সমাধান ও খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে নিচের লেখাটায় একটু চোখ বুলান, হয়তো পেয়েও যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সমাধান।
তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন সুন্দর করে কথা বলা মানে ‘র’ কে ‘ড়’ বলা, একটা বাক্যের অর্ধেক ইংরেজি, অর্ধেক হিন্দি, আর সামান্য বাংলা বলা, অথবা বিদঘুটে অঙ্গভঙ্গি করা, তাহলে আপনাকে হতাশ করার জন্য দুঃখিত।
১. আঞ্চলিকতা পরিহার করুনঃ
আমাদের দেশে বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে কিছু শুনে তো প্রথমে বোঝার কোন উপায়ই নেই যে সেগুলো বাংলা ভাষা নাকি অন্য কিছু! নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষাকে সম্মান করতে শিখুন। সে ভাষায় কথা বলুন। তবে এটাও খেয়াল রাখবেন তা যেন আপনার কথায় কোন ছাপ না ফেলে যায়। আপনার কথায় যদি আঞ্চলিক উচ্চারণ ভঙ্গি চলে আসে বা কোন আঞ্চলিক শব্দ ঢুকে পড়ে তবে অফিস, ক্লাসে বা বন্ধুদের সামনে যেখানেই যান, আপনাকে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে চাকরির ইন্টারভিউ দেবার সময় সর্বাবস্থায় আঞ্চলিক বাচনভঙ্গি পরিহার করুন।
২. কিছু শব্দের উচ্চারণ সঠিক করুনঃ
অনেক সময় দেখা যায় আমরা ঠিকঠাক কথা বলছি। কিন্তু কিছু শব্দের বেলায় আমরা সেই ভুল উচ্চারণই করে যাচ্ছি। প্রথমে চিহ্নিত করুন ঠিক কোন কোন শব্দ উচ্চারণে আপনার সমস্যা হচ্ছে। যেমন, আমরা অনেকেই বলি “কেমন আসেন” “ভাল আসি” । কিন্তু ‘স’ এর জায়গায় যদি ‘ছ’ ব্যবহার করা যায় তাহলে “কেমন আছেন” কথাটা অনেক শ্রুতিমধুর শোনায়। অনেকে ‘প’ এর জায়গায় ‘ফ’ ব্যবহার করেন, অথবা ‘ব’ র জায়গায় ‘ভ’ । এই সামান্য কিছু শুব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ কিন্তু আপনার কথা আকাশ পাতাল ফারাক এনে দিতে পারে। তবে পরিবর্তন একদিনে হবে না। নিজে প্র্যাকটিস করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। নিজের বাসা থেকেই।
৩. মিশ্র ভাষা পরিহার করুনঃ
অনেকে মনে করেন ইংরেজিতে কথা বলা, হিন্দিতে কথা বলা বেশ একটা ভাবের ব্যাপার। আপনি ইংরেজিতে অবশ্যই কথা বলবেন। কারন এটা আন্তর্জাতিক ভাষা। তবে তখনই, যখন আপনার দরকার হবে এই ভাষায় কথা বলা। অথবা বন্ধুদের সাথে অনুশীলন করতে পারেন। আপনার উপকারই হবে। কিন্তু বিনা কারণে ইংরেজিতে কথা বলা অন্য একজন বাঙ্গালির সাথে শুধু মাত্র স্মার্টনেস দেখানোর জন্য! এটা বোকামি। তার উপর আবার একটা বাক্যের অর্ধেক ইংরেজি অর্ধেক বাংলা! আপনি যদি ভেবে থাকেন এভাবে কথা বললে সবাই আপনাকে বেশ স্মার্ট ভাববে, তাহলে আপনার ধারণা ভুল।
৪. বলার আগে চিন্তা করুনঃ
মেয়েদের যা কিছুই বলবেন সরাসরি বলবেন। সরাসরি কথা শুনতে তাঁরা ভালোবাসে। এমনকি আপনি যদি কোনো মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেন তাহলে সেই কথাটিও তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে না বলে সরাসরি বলে ফেলুন। হুট করে কোন কথা বলে ফেলার চেয়ে বরং একটু সময় চিন্তা করুন আপনি কি বলতে যাচ্ছেন, যেটা বলতে যাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে কি না এবং আপনার কথায় শ্রোতার কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কথা বলার আগে একটু চিন্তা করার ফলে অনেক বেফাঁস কথা বলার হাত থেকে বেঁচে যাবেন, এবং আপনার কথা হয়ে উঠবে অনেক বুদ্ধিদীপ্ত।
৫. একটু বিরতি দিয়ে কথা বলুনঃ
আমরা যখন বাসায় বা বন্ধুদের সাথে কথা বলি তখন আমাদের খেয়াল থাকে না যে আমরা কি বলছি। হড়বড় করে সব কথা বলে ফেলি অনেক দ্রুত। এর চেয়ে একটু ধীরে প্রত্যেকটা শব্দের উপর পর্যাপ্ত জোর দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার কথা সবাই প্রথমবারেই বুঝবে এবং আপনাকে দেখবে একটু আলাদা দৃষ্টিতে।
৬. শব্দভান্ডার বাড়ানঃ
হোক বাংলা কিংবা ইংরেজি, সব ভাষার ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত শব্দ জানা আবশ্যক। এতে করে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না যে এই শব্দের পর আপনি অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করবেন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব শব্দ ব্যবহার করি, বাংলা অভিধান খুলে তার সমার্থক শব্দগুলো দেখে নিতে পারেন। অথবা এমন অনেক শব্দ খুঁজে নিতে পারেন যেগুলো সাধারণ কথায় আমরা খুব কমই ব্যবহার করি, এবং তা প্রয়োগ করুন উপযুক্ত ক্ষেত্রে বুঝে। এতে আপনার কথা যেমন সুন্দর হবে তেমনি শ্রোতার মনে আপনার জ্ঞান সম্পর্কে ভাল ধারনা জন্মাবে।
৭.অঙ্গভঙ্গিঃ
আপনার কথার মুল্য অনেকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে সঠিক বডি ল্যাংগুয়েজ। আপনার এক্সপ্রেশন, দাঁড়ানো বা বসার ভঙ্গি, হাত নাড়ানো এসব দিকে মনযোগ দিন। কোন কিছুই অতিরিক্ত করার দরকার নেই। তবে কথার সাথে যেন অঙ্গভঙ্গি খাপ খায় সে চেষ্টা করুন। অনেকের অভ্যাস থাকে অন্যের সাথে কথা বলার সময় কাঁধে হাত দেয়া, বা বারবার গায়ে খোঁচা দিয়ে নিজের দিকে মনযোগ ফেরানোর। আপনার যদি এমন কোন অভ্যাস থেকে থাকে, দয়া করে এখনি পরিহার করুন।
৮. আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুনঃ
ধরা যাক, ক্লাস বা অফিসের কোন প্রেজেন্টেশন। টপিক সম্পর্কে আপনার খুবই ভাল ধারণা থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র আত্মবিশ্বাসের অভাবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন আপনি। ভয়েস টোন বাড়ান। যেখানে জোরে কথা বলা দরকার সেখানে জোরে, যেখানে আস্তে কথা বলা দরকার সেখাসে আস্তে কথা বলুন। এবং এমন ভাবে কথা বলুন, যাতে শ্রোতার মনে ধারনা জন্মে আপনি যা বলছেন তা সঠিক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৩৬