পত্রিকায় তোমার সুন্দর সুন্দর ছবি ছাপা হবে। সারা দেশের কত মানুষ তোমার ঐ সুইট চেহারা দেখে বাহবা দেবে। টিভিতে তোমার ওরনা ছাড়া সুউচ্চ স্তন দেখে কতজন কল্পনার সাগরে হাবুডুবু খাবে। তুমি সুপারস্টার হবে। মডেল হবে। তাই কোন সংকোচ নয়। তুমি শরীরের যাদু দেখাও, কোমর দোলাও, উম্মুক্ত হও, সুউচ্চ স্তন দেখাও, জড়তা নিভাও। সামনে তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । ব্যাস নারী এতেই মজে গেলো। নারী অনেক চালাক হয়ে গেলো। আমার দেশের বিজ্ঞাপণে কত সুন্দর বলে, আরসির মজা কত,তোমার মতো যখন যেমন চাই। কি সুন্দর কথা, একটা মেয়ে আরসি সেভেন আপের মতোই সস্তা সহজলভ্য আর মজার জিনিস। আর এইসব বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখে ছেলেরাও তার আশেপাশের মেয়েদের সস্তা ভাবে!! প্রথম আলোর নকশা আমাদেরকে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করিয়ে দেয় ঠিক কতটুকু চিপা জিন্স হলে একটা মেয়েকে সবচেয়ে যৌনাবেদনময়ী দেখাবে। আর ঐ সব যৌনবেদনময়ি মেয়ে দেখে দেখে রাস্তা ঘাটে স্কুল কলেজে যখন আমরা একটা মেয়েকে দেখি আর হিসেব করতে থাকি সে কি ৩৫-২৪-৩৬ ? সে কি ৩৫ সাইজের ব্রা পরে। তার কোমরের দিকে তাকিয়ে তার সারা শরীর কল্পনা করি। আমরা দেখি পর্ণোগ্রাফি, আর নিজেকে নায়ক বানিয়ে রাস্তার সেই মেয়েকে নিয়ে কল্পনা করি। ইন্টারনেটে চটি পড়ে পাশের বাসার মেয়েকে সেখানে কল্পনা করে যৌনতার সাগরে হাবুডুবু খাই॥ মনে করি মেয়েদের কাজ শুধুই সুখ দেওয়া। সে এক মজার জিনিষ, নারী হল ভোগ্যপণ্য। আমরা শরীর সর্বস্ব মডেলদের বিজ্ঞাপন দেখে আবিষ্কার করি মেয়েরা হল বিপনণপণ্য, তাদেরকে কয়টা টাকা দিলেই তারা শরীর দেখায়। রাতের বেলা আমরা ফ্যাশন চ্যানেলগুলো দেখি, আর আমাদের মন অজান্তেই বুঝে ফেলে, মেয়ে মানেই শরীর, সেক্স আর সেক্স। মেয়েরা ভাবে পশ্চিমাদের অনুকরণে যেমন বিশাল নারী দেহ নির্ভর ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে,আমরাও সেভাবেই ‘উন্নত’ হবো! মাথা খাটানোর দরকার নেই, বেগম রোকেয়া হবার দরকার নেই,কে চেনে ওঁদের। চেনেতো সানি লিওনকে প্রিয়াংকা চোপড়াকে আর যারা ফেয়ার এন্ড লাভলীর এড করে ফর্সা চামড়ার শরীর দেখিয়ে বেড়ায় তাদের। নারীদের শেখানো হয়, নারী স্বাধীনতার মাপকাঠি নারী দেহের পরিধেয় হ্রাসের সমানুপাতিক - যার কাপড় যত ছোট হয় তার স্বাধীনতা তত বাড়ে ॥ এই যদি আমরা শিখি, আমরা কিভাবে আশা করতে পারি একটা ছেলে একটা মেয়েকে সম্মান করবে ? সম্মান অর্জন করা যায় শরীর দেখিয়ে? সৌন্দর্য দিয়ে ? সেক্সি পোশাকের মেয়ে দেখলে ছেলেদের চোখ কি বিনয়ে নুয়ে পড়বে নাকি অন্য কিছু খুঁজে বেড়াবে?? আর এই রকম সমাজেই গড়ে ওঠে পরিমলের মত মানুষ। তাদের উদ্দেশ্য হয় ভোগ, তাই তাদের সামনে যখন এসে পড়ে কোন ছাত্রী, তাদের ড্রেস শালীন হোক আর অশালীন হোক, তার মাথা চাড়া দেয় জন্মের পর থেকে তার চারপাশ থেকেই শিখে আসা নোংরামি গুলো। পরিমলের মনের এই নোংরামি এক মূহুর্তেই সৃষ্টি হয় নি॥ এটা বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ মূহুর্তে শিখে আসা অনেকগুলো ঘটনা থেকে গড়ে ওঠা দৃষ্টিভঙ্গির ফলাফল। এই সমাজই তৈরি করে পরিমলের মতো ধর্ষকদের॥ এই সমাজ ধর্ষক তৈরির কারখানা আর আমরা হলাম তার কারিগর।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৪