যখন ইন্টামেডিয়েটে পড়তাম সালটা ২০০৪ তখন তিথি প্রিয়া নামক একজন লেখিকা খুবই জনপ্রিয় ছিল স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে। রেলস্টেশনের বইয়ের দোকান গুলিতে তিথি প্রিয়ার বইগুলো খুব চলতো। মুলতো সেই সময়ের যৌন সুড়সুড়ি দেওয়া বইগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল তিথি প্রিয়ার বই। স্কুল লাইফে দেখতাম নায়ক নায়িকাদের ছবি যেটাকে আমরা ভিউ কার্ড বলতাম তার প্রচলন ছিল খুবই।
তবে নীল ছবি পর্নোগ্রাফি বা অশ্লীল সাহিত্য কোনটাই আধুনিক সভ্যতার আবিষ্কার নয়। বহু আগে থেকেই এদের অস্তিত্ব আছে। প্রস্তর যুগে বহু গুহাচিত্র বা ভাষ্কর্যে নগ্নতার ছাপ আছে । ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে নগ্ন মুর্তির চিত্রগুলো কিন্তু বর্তমান সময়ে তৈরি না। গ্রীক এবং রোমান সভ্যতায়ও অশ্লীলতা চর্চা ছিল। মুসলিম সম্রাজ্য গুলোতে অনেক রাজা বাদশাহর হারেমে যৌনতার ব্যাপক চর্চা সবারই কম বেশি জানা। বর্তমানে ইন্টারনেটের কারনে পর্ন এত সহজলভ্য এবং সস্তা যে পর্নের নিষিদ্ধ আকর্ষন অনেকটাই হারাতে বসেছে। বর্তমানে চটি পড়ার জন্য কারোর আর বই কেনার প্রয়জন পড়ে না ইন্টারনেটে আছে চটির ভান্ডার। অশ্লীল সাহিত্য রচনা হচ্ছে সেই আদিম কাল থেকেই। অশ্লীল সাহিত্যের সরস বিবরণ পাওয়া যায় 'বাৎস্যায়ন' আমলে এবং তার লেখা কাম সুত্র বইয়ে॥ 'বাৎস্যায়ন' তাঁর বাল্যকাল কেটেছিল এক বেশ্যালয়ে। এবং সেখানে তাঁর মাসি কাজ করতেন। ঐখান থেকেই তিনি কামকলা সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করেছিলেন। ঐ সময় পতিতাবৃত্তি এবং যৌনতা খুব স্বাভাবিক এবং সন্মানিত বিষয় ছিল। কামসুত্রের ০৬ - ভার্যাধিকারিক (৩.১) এর ৫৩ নম্বর শ্লোকে আছে -"স্বামী যাহাকে প্রচ্ছন্ন ভাবে কামনা করে, তাহার সহিত স্বামীর সঙ্গম করিয়া দিবে ও গোপন করিয়া রাখিবে।।৫৩।।" এই শ্লোক থেকেই বোঝা যায় অনাচার কেমন পর্যায়ে ছিল। তাছাড়া পুরো কামসুত্র বইটাতে রগরগে যৌন উত্তেজনক বাণীতে ভর্তি। এমনকি আইয়্যামে জাহিলিয়া যুগে আরবে প্রচুর অশ্লীল কবিতা রচনা হতো। ইতিহাসবিদ পি.কে হিট্টি বলেন,'মহানবী (সাঃ) এর আবির্ভাবের একশ বছর আগে আইয়্যামে জাহিলিয়া শুরু হয়।' ঐ যুগে ইমরুল কায়স,তারাকা আমর,লবীদ,যুহায়ে নামক কবি অশ্লীল কবিতা রচনা করতো। মধ্যযুগ থেকেই অনেক সাহিত্যে পতিতার প্রসঙ্গ ও অশ্লীলতা পাওয়া যায়। "পঞ্চদশ শতাব্দীতে বিদারের রাজসভায় রচিত হয় গ্রন্থ 'লজ্জত উন নিসা'(একটি ভারতীয় কামোদ্দীপক উপাখ্যান)॥ যা ঐ যুগেরই বিদ্যমান কামোদ্দীপক রচনাগুলির একটি।[ তথ্যসুত্র: Lazzat Un Nisa,translated by Jane Fine,Classex Books,2002]" নবম শতকে 'কুট্টনীমত' গ্রন্থ লিখেছিলেন কাশ্মীরের মন্ত্রী ও কবি 'দামোদর গুপ্ত'। 'বিকরবালা' নামের এক বৃদ্ধা বেশ্যার উপদেশ নামা নিয়েই মুলতো 'কুট্টনীমত' গ্রন্থ লেখা। বাৎসায়নের কামসূত্রের মতোর 'কুট্টনীমত' একটা কামশাস্ত্র গ্রন্থ।" এছাড়া মহাকবি কালিদাসের মহাকাব্য দোনা গাজির- সয়ফুল মুলক বদিউজ্জামাল, আবদুল হাকিমের- লালমতি সয়ফুল মুল্লুক, শুকুর মাহমুদের- গুপীচন্দ্রের সন্ন্যাস -- এইসব কাব্য পুথিতে বেশ্যা-সংস্কৃতির সরস এবং রগরগে বিবরণ দেওয়া রয়েছে। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে অশ্লীলতা
অশ্লীলতা জোর করে আনীত হয় বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের গদ্যে। পুরুষকে প্রতিপক্ষ ভাবতে গিয়ে তিনি যৌনতাকে অশ্লীল মাত্রায় উপস্থাপন করেন। পাঠক এখানে যৌনতাকে তথ্য হিসেবে পায় না বরং সুড়সুড়ি হিসেবে মনে করে। আবার হুমায়ুন আজাদ তার অনেক লেখায় যৌনসুড়সুড়ি দিয়েছেন, উদাহরণ হিসাবে - এক একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি ,মাঝারী স্তন আমার পছন্দ, সরু মাংসল উরু আমার পছন্দ...। সমকালীন বাংলা সাহিত্যে কবি আল-মাহমুদের অনেক কবিতাই যৌন উত্তজক। উপন্যাস-সাহিত্যের চেয়ে আধুনিক কবিতায় আজ অশ্লীলতার অধিক ছড়াছড়ি। আধুনিক পরাবাস্তববাদীরা আজ কবিতার নামে সাহিত্যে আমদানি করে চলেছেন উৎকট যৌনতা আর অশ্লীলতা। আধুনিক কবিরা আজ সাদামেঘের ভেলাতেও খুঁজে বেড়ান কিশোরীর স্তন আর বাতাসের বয়ে চলার মধ্যে শৃঙ্গারের ডাক। এরই সর্বশেষ নজির আমরা পাই প্রথম আলো পত্রিকার মাধ্যমে ঘোষিত কবি সৈয়দ জামিলের কবিতার বইয়ে। কবিতার বইটিতে কারণে-অকারণে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অশ্লীলতা ও যৌনতা এবং গালাগাল ভেসে উঠেছে বন্যার মতো যা লেখা সম্ভব নয়।
.
..... চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২০