লেখার শিরোনাম পরে কি আশ্চর্য হচ্ছেন?? আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই॥
দেশে এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু কী? প্রিয় পাঠক এক কথায় বলবেন, জঙ্গিবাদ। তা ঠিক। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে, এ দেশের রাজনীতিতে ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দটি বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। শব্দটি একটি বড় অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছিল গত সপ্তাহ পর্যন্ত। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছিল জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা করার। অন্যদিকে বিএনপির ভাষ্য, জঙ্গিবাদের ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জোর গলায় বলে আসছিলেন, দেশের উন্নয়নে বড় বাধা জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ। তবে কি আমরা ধারণা করতে পারি বাংলাদেশে জঙ্গি আছে, না কি নেই??? আসুন খবরের কাগজ গুলো দেখি।
.
"স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। (যায়যায়দিন, অক্টোবর, ১১, ২০১৪: বাংলামেইল২৪ ডটকম ১০-অক্টোবর-২০১৪)।"
.
তাহলে ইতিপূর্বে এতসব হত্যাকান্ড কারা ঘটালো??? বর্তমানে বিএনপিও কিন্তু বলছে, "বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং নির্ধারিত সময়ের আগে টেস্ট সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেট দলকে সফরে পাঠাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এই কথা বলেছেন। (ভোরের ডাক, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ । দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫)।"
.
.
যাক আমরা নিশ্চিত হলাম বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নাই॥ অবশ্য ইতিপূর্বে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, "দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জনক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। (ভোরের কাগজ, ৩০ নভেম্বর ২০১৪)।" কিছুদিন আগে খালেদা জিয়া বলেছেন, "আওয়ামী লীগের মধ্যেই জঙ্গি লুকিয়ে আছে।
(১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, মানবকণ্ঠ)।"
বিএনপির কথা বিশ্বাস করলে বলা যায় আওয়ামী লীগ একটি জঙ্গিবাদ দল। তবে আওয়ামী লীগকে যারা ভোট দিয়েছে বা যারা আওয়ামী লীগ করে তারা কি সব জঙ্গি?? এবার দেখুন আওয়ামী লীগ কি বলছে॥ আজকে শেখ হাসিনা, "বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গিবাদী সংগঠন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। (যায়যায়দিন, অক্টোবর ১,১৫)।" বিএনপি এবং জামায়াতকে এখন আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। ওরা হচ্ছে "সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী দল। (দৈনিক পূর্বকোণ, 01 October 2015 , দেশ টিভি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫)।"
ইতিপূর্বে শেখ হাসিনা বলেছিলেন,জঙ্গিরা যেভাবে কার্যক্রম চালায় ঠিক সেভাবে "বিএনপি দেশে জঙ্গি কার্যক্রমে লিপ্ত। এরাতো জঙ্গির দল। এই জঙ্গি দলের স্থানতো বাংলার মাটিতে হবে না। (মানব জমিন, ১৮ মার্চ ২০১৫)॥" বিভিন্ন সময় নির্বাচনী পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিএনপির সারা দেশে অন্তত ৩ কোটি ভোটার রয়েছে। তবে কি এই ৩ কোটি মানুষই জঙ্গি???
.
.
২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট বাংলাদেশের মোট ৬৪ জেলার ৬৩ টিতেই একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের শক্তির জানান দিয়েছিল জেএমবি ৷ তাছাড়া ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল ৷ হামলায় শেখ হাসিনা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান ৷ তবে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন ৷ জানা যায়, এই হামলা চালায় মুফতি হান্নানের হরকাতুল জিহাদ ৷ এর আগেও ঢাকার রমনা বটমুল এবং যশোরে উদীচী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ ৷ জেএমবি ১৭ই আগস্টের পর সারাদেশে একের পর এক আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন জনকে হত্যা করে ৷ ২০০৫ সালের ১৪ই নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় তখনকার জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ছয়জন জঙ্গির ফাঁসি হয় ৷ ১৭ই আগস্টের বোমা হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে মোট ১৫৯টি মামলা হয় ৷ এর মধ্যে ৯১টি মামলার বিচার শেষে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, ১১২ জনের যাবজ্জীবন এবং ১০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ৷ পলাতক আছে ফাঁসির তিন আসামিসহ ৭৪ জন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ৷ গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চেভেলেকে বলেছিলেন, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান হয়েছে ৷ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে দেড় হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷
.
.
দুই দলের কাদা ছুড়াছুড়ির কারণে, তবে কি আমরা এই ধারণা করতে পারি - বাংলাদেশে জঙ্গি আছে!!! বাংলাদেশে জঙ্গি নাই!!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৭