somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঈদ বোনাস সংকট: প্রতিবছর কেন এই একই দুর্ভোগ?

৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিকী ছবি

বছরের পর বছর, একই চিত্র। ঈদ আসলেই তৈরি পোশাক খাতের কিছু শ্রমিকদের জন্য আনন্দের বদলে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু হয়। মালিকরা নির্দিষ্ট সময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন, কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ—এই গল্প যেন এক পুরনো ধারাবাহিক নাটকের মতোই বারবার ফিরে আসে।

সম্প্রতি টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু একটি কারখানার গল্প নয়; এটি পুরো পোশাক শিল্পের একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। কোম্পানিটি তাদের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে, মালিকপক্ষ বিদেশে অবস্থান করছে, আর বাকি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনের নজরদারিতে। ফলে শ্রমিকদের ঈদের খুশি বিষাদে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, কেন প্রতি বছর এই একই সমস্যা দেখা দেয়? গার্মেন্টস মালিকরা কি একেবারেই অপ্রস্তুত থাকেন, নাকি শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তাদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে? অধিকাংশ কারখানা যেখানে সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারে, সেখানে কিছু কারখানা কেন ব্যর্থ হয়? শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু এই খাতের শ্রমিকরাই যখন বছরের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তে নিজেদের পাওনা টাকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন এটি পুরো ব্যবস্থাপনার একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। সরকার এবং বিজিএমইএ যদিও বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেয়, কিন্তু শ্রমিকদের দুর্ভোগ যেন শেষ হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, কারখানা মালিকরা ব্যর্থ হলে সরকার নিজ উদ্যোগে অর্থ বরাদ্দ দেয়, কিন্তু এটি কি টেকসই সমাধান?

শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ জমে থাকা স্বাভাবিক। তারা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেন, অথচ তাদের প্রাপ্য অর্থ সময়মতো পান না। একদিকে ঈদের আনন্দ, অন্যদিকে পরিবারের চাহিদা মেটানোর চাপ—এই দ্বন্দ্ব তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের মতো হাজারো শ্রমিক প্রতিবছর একই সমস্যার সম্মুখীন হন। তারা ঈদের আগেও রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান দরকার। প্রথমত, শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের জন্য কারখানাগুলোকে কঠোর নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। মালিকরা যেন আগেভাগেই এই খরচের ব্যবস্থা করেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিজিএমইএ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়কে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করা যেতে পারে, যেখান থেকে প্রয়োজনে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে এবং পরবর্তীতে তা মালিকদের থেকে আদায় করা হবে।

তৃতীয়ত, মালিকপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই বিদেশে পালিয়ে যান, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মালিকদের দেশে থাকার বাধ্যবাধকতা এবং কারখানা চালানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ ছিনিয়ে নেওয়ার এই চক্র ভাঙতে হবে। গার্মেন্টস খাতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা জরুরি। যদি তারা সঠিকভাবে তাদের প্রাপ্য পায়, তবেই এই শিল্প এগিয়ে যাবে। অন্যথায়, প্রতিবছর এই অস্থিরতা চলতেই থাকবে, আর শ্রমিকদের ঈদ রাস্তায় কাটবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×