বেড়েই চলেছে আওয়ামি সন্ত্রাসীদের হুঙ্কার , মারণাস্ত্রের গর্জন, দেখার কেউ নেই।
আগামী ৭ মে চতুর্থ দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জয়ী করতে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন ফেনীর ছাগলানইয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ও এক সময়ের জয়নাল হাজারী স্টেয়ারিং কমিটির সেকেন্ড ইন কমান্ড ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল।
প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কেউ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে গেলে তাকে গুলি করে পায়ের নিচে লাশ ফেলে দেব। যদি সে আওয়ামী লীগের হয় তাকেও গুলি করবো। আর যদি ছাত্রলীগ-যুবলীগের কেউ হয় তাকেও গুলি করা হবে।’
ছাগলানইয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাংগঠনিক নেতা হিসেবে আমি নির্দেশ দিচ্ছি সকল দায়িত্ব আমি নিব। যত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আসুক, যত পুলিশ প্রশাসনের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করুক পিঠের চামড়া থাকবে না।’
গত ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ছাগলানইয়া উপজেলার নতুন মুহুরীগঞ্জ বন্ধন কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী সমাবেশে এভাবেই হুঙ্কার দেন তিনি।
প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদ নিয়ে যদি বাড়াবাড়ি করেন অস্তিত্ব বিলীন করে দেব। যেজন্য আমি এখানে এসেছি। চেয়ারম্যান এই মানিক সাহেবকে (আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী) বানাতে হবে। মানিককে আমরা চিনি না, নৌকা মার্কাকে বানাতে হবে।’
আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলতে চাই, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একটা সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আজকে ঘরে থাকার সময় নয়, আজকে যুদ্ধ করে নৌকা মার্কার প্রতীককে বিজয়ী করে নিয়ে আসতে হবে। এরমধ্যে যদি কেউ বেঈমানী করে, যদি কেউ মোনাফেকি করে, গুলি করে লাশ পায়ের নীচে রাস্তায় ফেলে রাখতে হবে।’
মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিচ্ছি ছাত্রলীগ, যুবলীগ আওয়ামী লীগের যত বড় নেতাই হোক না কেন যদি আওয়ামী লীগের সভাপতিও হয় তাকে গুলি করেন। যদি যুলীগের সভাপতি হয় তাকেও গুলি করেন, যদি ছাত্রলীগের সভাপতি হয় তাকেও গুলি করেন। আমি আপনাদের সাংগঠনিক নেতা হিসেবে নির্দেশ দিচ্ছি যত বড় নেতা হোক মরে গেলে দায়িত্ব আমি নিব। বেঈমানদের কোনো সুযোগ নেই। যারা বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে তাদের মাইরের ওপরে রাখুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য) যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন প্রয়োজনে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে একটাও ফেল করার সুযোগ নেই। যত রঙ ঢঙ করুক, যত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আসুক, যত পুলিশ প্রশাসনের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করুক পিঠের চামড়া থাকবে না। আমি বলে দিতে চাই, যদি শান্তিতে ঘুমাতে চাও, তাহলে যড়যন্ত্র বন্ধ করো। কোনো লাভ হবে না।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুল হকের উদ্দেশ্যে মেজবাউল হায়দার বলেন, ‘আগামী ৭ মে শেষ নয়। ৭ মের পরও তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রঙবাজি করে বাঁচার কোনো উপয় নেই, কোনো সুযোগ নেই। তারা তোমার পিঠের চামড়া রাখবে না।’
এ সময় দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ঘোপাল ইউনিয়নকে তিন স্তর বিশিষ্ট অতন্ত্র প্রহরীর মতো ঢেকে রাখুন, আগামী ৭ তারিখ সন্ধ্যায় বিজয়ের মালা নিয়ে আপনাদের যেতে হবে। নির্বাচনের দিন আমি আপনাদের এখানে থাকবো।’
এদিকে, মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের এমন বক্তব্যের পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হকের সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার এমন বক্তব্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় এটি এখন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হক বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য এখন সবার হাতে হাতে। আমার কোনো সমর্থক ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আমি এখন অসহায় হড়ে পড়েছি। সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন তার কর্মী সমর্থকদের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। এতে তার দুই কর্মী মিজানুর রহমান ও সাকিবুল হাসান আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তবে এ ব্যাপারে বিএনপি প্রার্থী আবদুর রহীম পাটোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিত হবে ফেনীর দুটি উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের নির্বাচন। এর মধ্যে ফেনী সদরে চারটি ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় পাঁচটি। তবে সদর উপজেলার চনুয়া ইউনিয়ন, ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নে দুই জন চেয়ারম্যান ও ৩৫ জন মেম্বর প্রার্থী আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হওয়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন।
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১০:৪২