somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাইন্দং ট্রাজেডির ৩০ বছরেও বিচার পায়নি স্বজন হারানো ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালী পরিবারগুলো

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ট্রাজেডির ৩০ বছর। ১৯৮৬ সালের এ দিনে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার দুর্গম তাইন্দং-এ তান্ডবলীলা চালায় জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী। সেদিন শান্তিবাহিনীর হাতে ভয়ানক গণহত্যার শিকার হয় তাইন্দংয়ের নিরস্ত্র-নিরীহ বাঙ্গালীরা। এসময় সন্তু বাহিনী তাইন্দং-এ ৫৪ জনকে হত্যা করে আর কয়েক‘শ বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। শুধু তাইন্দং নয় সেসময় শান্তিবাহিনীর বর্বর হামলায় গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার ৩০ বছর পরেও বিচার হয়নি সেই নারকীয় গণহত্যার। বরং বহাল তবিয়তে দামী গাড়িতে দেশের পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নায়ক জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর সে দিনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর ৩০ বছর শেষ হলেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি বাহিনী প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে। এ নিয়ে এখনো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এবিষয়ে মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ বেপারী‘র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি দুই যুগেরও বেশী সময় আগের। এমনকি এ বিষয়ে সে সময় কোন মামলা দায়ের হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

তাদের মতে, একের পর এক সরকার বদল হলেও তাইন্দং হত্যাকান্ডের এখনো বিচার হয়নি। সেদিন সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত মানুষগুলো যখন ঘুমে মগ্ন ঠিক তখনই রাত ৯টার দিকে পাহাড়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী সন্তু লারমার সন্ত্রাসী বাহিনী তাইন্দং বাজার ঘেরাও করে বাজারে আগুন লাগানোর মধ্য দিয়ে শুরু করে তাদের নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এসময় প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলা মানুষগুলোকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই পাখির মতো গুলি করে মেরেছে সন্তু বাহিনী। এসময় তাদের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাইন্দং বাজারের প্রায় ১৫০টি দোকান। তাইন্দং বাজার হত্যাযজ্ঞের পর স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাইন্দং বাজারের পূর্ব দিকে নোয়াপাড়া, বাঘমারা, মাঝপাড়া এলাকায় বাঙ্গালীদের বাড়ি-ঘর অগ্নিসংযোগ করে উল্লাস করে। এসময় তারা যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে বাদ পড়েনি ছোট ছোট শিশুরাও। তারা সাধারণ মানুষকে ঘরে আটকে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। পুড়িয়ে মেরেছে গবাদি-পশুও। রাতব্যাপী সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন চাকমা সন্ত্রাসীদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর সকালে একের পর এক লাশ আসতে থাকে তাইন্দং মাদরাসা মাঠে। লাশের সারি সেদিন হতবাক করেছিল তাইন্দংবাসীকে। এ হত্যাকান্ডকে অনেকেই ৭১ সালের পাকিস্তানী বর্বরতার সাথে মুল্যায়ন করে বলেছেন, সন্তু লারমার সেই হত্যাকান্ড মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানী বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। সেদিন স্বজন হারানোর কান্না তাইন্দংয়ের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল।

তাইন্দং ট্রাজেডির ৩০ বছর পরেও এই হত্যাকান্ডের বিচার হবে কিনা তা জানেনা স্বজন হারানো সেই মানুষগুলো। তবে তাদের স্বজনদের খুনী সন্তু লারমা যখন দেশের পতাকাবাহী গাড়িতে ঘুরে দেশ ও সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেন তখন সেইসব স্বজন হারানো মানুষগুলোর বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকে না।
মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলাম বলেন, বিভীষিকাময় সেদিনের কথা মনে হলে আজো তাইন্দংয়ের মানুষকে শিহরিত করে। স্বজন হারানোদের কান্না আজো থামেনি। বিচার হয়নি খুনী সন্তু লারমার।
মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ট্রাজেডিকে ‘কালোদিবস’ আখ্যায়িত করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া বলেন, তাইন্দং এ সেদিন যে নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল তা ইতিহাসের জঘন্য বর্বরতাকে হার মানায়। সেদিনের তান্ডবলীলার কথা উল্লেখ করে তিনি খুনী সন্তু লারমাকে দেয়া সকল সরকারী সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে তাকের গ্রেফতারের দাবী জানান। তিনি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে তার বিচার দাবী করে বলেন, পাহাড়ের মানুষ সন্তু লারমাকে দেশের পতাকাবাহী গাড়িতে চায় না। দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা গণহত্যা, গুম, অপহরণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ঘটনার বিচার আজো হয়নি। প্রায় গেল দু’যুগে এক সময়ের গেরিলা শান্তিবাহিনীর নৃশংস বর্বর গণহত্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিশ হাজারেরও বেশী মানুষ হত্যা করা হয় ও হাজার হাজার বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব গণহত্যার বিচার হবে এমন আশায় বুক বেঁধে আছে পাহাড়ের স্বজন হারানো ক্ষত-বিক্ষত সেই মানুষগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও আমার ভাবনা

লিখেছেন মেহেদী তারেক, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪০

অবশেষে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলো
আমি সবসময়ই প্রজ্ঞাপন দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনো দলটিকে সমর্থন করে। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর মতামত কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিষিদ্ধ নয়, শুধু নড়াচড়া বন্ধ: আওয়ামী লীগ, ‘কার্যক্রম’ ও বিরোধীদের বিভ্রান্তির রাজনীতি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫২


“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে”—এই লাইনটি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে, চায়ের কাপে তুফান এনেছে, এবং কিছু বিরোধী রাজনীতিকের মুখে সাময়িক হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটু থামুন ! খেয়াল করুন: বলা হয়েছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁচলে বাঁধা সংসার

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০



আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×