Narcissist: আত্মনিবিষ্ট, আত্মকামী বা আত্মগর্বিত ব্যক্তি। Narcissism: আত্মনিবিষ্টতা, আত্মগর্ব বা আত্মকাম। এই ইংরেজি শব্দ দুটি আমরা সবাই জানি এবং কেউ কেউ কথায় কথায় প্রয়োগও করি। কিন্তু আমরা হয়ত অনেকেই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে কিভাবে জানিনা। ইংরেজি শব্দভান্ডার অনেকাংশেই গ্রিক মিথলোজির কাছে ঋনী।
Narcissus কে ছিলেন?: গ্রিক পুরাণে নার্সিসাস সেই অহংকারী পৌরাণিক যুবক যার রূপ মাধুর্য ভাষার মাধ্যমে বর্ণনা করা যাবেনা, যার রূপকে কোন চিত্রকর কোনদিন ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারবেননা। নার্সিসাস হলেন নদীর দেবতা সেফিয়াস ও নীল অপ্সরী লিরিওপের পুত্র। নার্সিসাসের জন্ম কাহিনী আরেক বিশাল ইতিহাস।
রূপবান নার্সিসাস শিশুকাল থেকেই ছিলেন আত্মগর্বিত ও অহংকারি।
এমন কোন অপ্সরী নেই যে নার্সিসাসের প্রেমে পড়েনি। নির্বিশেষে সবাই নার্সিসাসের রূপের প্রেমে পড়েছিলেন এবং প্রত্যেকেই হয়েছিলেন প্রত্যাখ্যাত ও তার নিষ্ঠুরতার শিকার। তিনি মনে করতেন তার যোগ্য ও সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি যখন জানতে পারতেন কোন অপ্সরী তার প্রেমে পড়েছে, তাহলে সেই অপ্সরীকে তিনি ঘৃণাভরে অভিশাপ দিতেন বা হত্যা করতেন।
মিথোলজিতে নার্সিসাসের নিষ্ঠুরতার সবচেয়ে বড় উদাহরন হিসেবে দেবী অপ্সরী ইকোর নামটি উল্লেখযোগ্য (Echo শব্দটির উৎপত্তি এই বিখ্যাত গ্রিক দেবীর কাছ থেকেই হয়েছে। তার ইতিহাস আরো লম্বাচওড়া ও চমকপ্রদ)। ইকো হলেন সঙ্গীতের দেবীদের মধ্যে অন্যতম, সুন্দরী ও অপূর্ব মিষ্টি কন্ঠস্বরের জন্য তিনি বিখ্যাত। তিনি বাস করেন গভীর জঙ্গলে ও পাহাড়ে। নার্সিসাস মাঝে মাঝে তার অনুসারী দলবল নিয়ে জংগলে শিকার করতে আসতেন। একদিন ইকো নার্সিসাসকে দেখে ফেললেন এবং দেখামাত্রই প্রেমে পড়লেন। জঙ্গলের দেবতার অভিশাপে অভিশপ্ত ইকো নিজ থেকে কথা বলতে পারতনা, অন্যজন কিছু একটা বলার পরই কেবল সে কথা বলতে পারত। নার্সিসাস প্রতিদিন শিকারে আসলে ইকো তাকে অনুসরন করতেন এবং মনে মনে আশা করতেন নার্সিসাস যেন কিছু একটা বলে। একদিন নার্সিসাস তার দল থেকে আলাদা হয়ে পড়লেন। কাউকে না পেয়ে সে চিৎকার করে বলল, “এখানে কেউ আছ?”। তখন ইকো উত্তর দিল “কেউ আছ?”। এরপর নার্সিসাস যাই বলেন অপ্সরী ইকো আড়াল থেকে হুবুহ সেটাই উত্তর দেন। একসময় নার্সিসাস বললেন, “কাছে আস, এসো আমরা পরস্পরকে দেখা দিই”। ইকো ঠিক এই উত্তরটি দেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন এবং তার হৃদয়ের সকল ভালোবাসা উজাড় করে সুমিষ্ট কন্ঠে একই উত্তর দিলেন এবং নার্সিসাসের কাছে গেলেন। প্রেমান্ধ ইকো যখন নার্সিসাসকে ছুঁয়ে দেখতে গেলেন অহংকারী নার্সিসাস তখন তার কাছ থেকে সরে গেলেন এবং বললেন, “তুমি আমার কাছে আসার আগে আমার মৃত্যূ অধিক ভালো”। নার্সিসাস নিজের প্রতি এতই মগ্ন ছিলেন যে অন্যকারো ভালোবাসা তিনি ঘৃণার চোখে দেখতেন। লজ্জিত ও বিমর্ষ ইকো তখন থেকে পাহাড়ের গুহায় বসবাস করা শুরু করলেন। বেদনায় ও যন্ত্রনায় ধীরে ধীরে তার শরীরের চামড়া ও মাংস শুকিয়ে গেল এবং তার হাড়গুলো পরিণত হলো শক্ত পাথরে। পৃথিবীতে তার একটিমাত্র জিনিসই রয়ে গেল…তার কন্ঠস্বর। আজও কেউ বনে বা পাহাড়ে গিয়ে কিছু বললে ইকো সেটার জবাব দেন (Echo= প্রতিধ্বনি)।
নার্সিসাস নিজের রূপ নিজ চোখে স্পষ্টভাবে কোনদিন দেখেননি। এই দেখাটাই তার জীবনে পরিণতি ডেকে আনে। নার্সিসাসের নিয়তি নিয়ে নানান গল্প চালু আছে তবে সবচেয়ে অধিক প্রচলিত গল্পটিই আমি দিলাম।
হরিণ শিকার করার পর ক্লান্ত নার্সিসাস একদিন পানির আশায় নদী তীরে আসলেন, এই নদী যার নাম ডোনাকন হলো জগতের সবচেয়ে স্বচ্ছ পানির নদী যে নদীর পানিতে কোনদিন কেউ হাত দেয়নি, কখনো কোন পশু এ নদীর পানি পান করেনি। নার্সিসাস যখন পানির জন্য নিচু হলেন তখনি প্রথমবারের মত নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পেলেন এবং পানিতে প্রতিফলিত নিজের রূপ দেখে মুগ্ধ বিস্ময়ে বার বার বলতে লাগলেন, “এত সুন্দর! এত সুন্দর!”। নিজের প্রতিফলনকে ছুঁয়ে দেখার জন্য তিনি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং পানিতে ডুবে মারা গেলেন। আরেকটি গল্পে চালু আছে নার্সিসাস নিজের প্রতিফলনের কাছে যেতে না পারার হতাশায় গ্লানিতে ধীরে ধীরে মৃত্যূবরন করেন।
(নার্সিসাস ফুল)
তার মৃত্যূর পর দেবতারা তাকে অপূর্ব একটি শাদা ফুলে রূপান্তরিত করেন। ড্যাফোডিল গোত্রীয় “নার্সিসাস” ফুলটির নাম এসেছে এই রূপবান নার্সিসাসের নাম থেকেই। ফুলটি আজও তার অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে যাচ্ছে।
আর এই মিথ থেকেই "Narcissism", "Narcissist" শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১২:১৯