বাঙালি জাতির উপর মধু ভীষন ক্ষেপা। কথায় কথায় সে বলে উঠে "চোরের দেশ, চোরের জাতি, এখানে ধর্ম নিয়ে ব্যবাসা হয়, অধ্যাপকদের পুলিশে পেটায়, বুক ফুলিয়ে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা হয় "। জাতের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জাত নাকি বাঙালি জাত। আবার দুনিয়ার সবচেয়ে প্রতিভাধর জাতও বাঙালি জাত। এ কারনেই তো যদু মধু কদু সবাই কবিতা লিখতে পারে। জেনেটিক একটা ব্যাপার আছেনা! মধুর ধারনা এ ব্যাপারটা রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে এসেছে। যদিও রবীন্দ্রনাথের সাথে তার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। তাতে কি! তাদের দুজনার মনের সম্পর্কই আসল। তার বন্ধুরা যখন টেকনোলজি নিয়ে ব্যাস্ত তখন সে ব্যস্ত সঞ্চয়িতা নিয়ে। এতে সে ভীষণ গর্বিত হয়।
মধু নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে পারলে খুব খুশী হয়। যদিও কেউ জানেনা যে তার এই জীবনে পড়া এক মাত্র কবিতার বই হলো "সঞ্চয়িতা"। আর কোন বাঙালি কবি আছে কিনা তা মধুর অগোচরে। জীবনানন্দ দাশকে তার বড্ড পাকা মনে হয়। তার ধারনা তার নিজের কবিতাগুলো জীবনানন্দ পড়লে ঈর্ষান্বিত হতেন।
মধুর লেখা কবিতার নমুনা......
ওগো প্রিয়া, তুমি দেখেছ কি?
দেখেছ কখনো
কিভাবে মাটির গভীরে এঁকে বেঁকে চলে লাভা
ঠিক তোমার হৃদয় মাঝে বেঁকে চলি আমি
চার লাইন লিখেই মধু চরমভাবে আত্মতৃপ্ত হয়। নিজের কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বন্ধু কামালকে ফোন দেয়।
"দোস্ত তোর পরিচিত কোন প্রকাশক আছে?"
"ক্যান?"
"আগামী বইমেলায় একটা বই বের করতে চাই?"
"তোর বই তুই নিজেই ছাপা। নীলক্ষেত চইলা যা।"
কারো অপমান বা তিরস্কার মধুকে স্পর্শ করেনা। শানু নামের মেয়েটা তাকে নিয়ে যতই ঠাট্টা করুক মেয়েটাকে তার ভালোলাগে। শানুকে দেখলেই মধু মনে মনে বলে উঠে.....
"ওগো কালার করা চুলের রমনী
তোমায় দেখে
রক্তশুণ্য হয়ে যায় আমার সকল ধমনী"
আবারো নিজের কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয় সে.....
"শানু! দেখো একদিন আধুনিক কবিদের তালিকায় আমার নাম থাকবে সবার উপরে।"
শানু এক ভ্রু উঁচু করে বলে, "তাতো বটেই...."
"তবে একটা সমস্যা"
"কি সমস্যা?"
"আমার নামটা নিয়ে সমস্যা? আমার পুরা নাম সাগীর সরকার....ডাক নাম মধু। এমন নাম কবিদের মানায়না। আমার একটা কবি সুলভ নাম দাও তো।"
শানু অনেক ভেবেচিন্তে দুটা নাম বলে, "নীল মধু, সাগীর সাগর"
মধু হঠাৎ "ইউরেকা" বলে চিৎকার করে উঠে।
"আরে আমারতো মনেই ছিলনা যে মধু নামে একজন কবি ছিলেন।"
"কে তিনি?"
"কেন আমাদের মাইকেল মধু।"
শানুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে......
ধীরে ধীরে দিন যায়....মাস যায়....মধুর ফাইনাল পরীক্ষা এসে যায়। সারাবছর পড়ালেখার সাথে জড়িত না থাকার কারনে সবকিছু উলটাপালটা লাগে তার। শেষ পরীক্ষায় কোনরকম পাশ করার মত উত্তর করে সে খাতার শেষ পৃষ্ঠায় লিখল.....
"প্রশ্নকর্তা তুমি কি চেয়েছ আকাশপানে
যেখানে উড়ে যায় কালো কালো কাক
মাঝে মাঝে উড়োজাহাজ
এই প্রশ্নপত্রকে আমি ফুঁ দিয়ে
উড়িয়ে নিয়ে যাব সেখানে
সেখানে ধবল মেঘের সাথে তারা এক হয়ে ভেসে যাবে...."
হ্যাঁচকা টান দিয়ে স্যার খাতা টেনে নেন....
মধু তার বন্ধুদের দিকে চেয়ে থাকে। এরা এখন তার চেয়ে এক ক্লাস উপরে পড়ে। কিছুদিন পর চাকরি করবে। মধু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে এদেরকে একদিন দেখিয়ে দিবে। বাঙালি আসলেই খারাপ জাত। এরা কবিদের যথাযোগ্য সম্মান দেয়না।
"আমাদের দেশে সবচেয়ে সস্তা জিনিস কি জানো মধু?"
শানুর প্রশ্নে মধু চোখ তুলে তাকায়....."কি? রাজনীতি?"
"সেটাও আছে.....তবে আরেকটা সস্তা জিনিস আছে।"
"কি সেটা?'
"কবি।"
মধুর মনটা ভীষন খারাপ হয়ে যায়।
মানুষগুলো কত খারাপ। তারা কবিদের সস্তা বলে। কবি সস্তা হতে পারেন কিন্তু তার কবিতা নয়।
মধুর বাবা হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "মধু! গাধা! তুই যেখানটায় দাঁড়াবি ঐখানটা যেন হারপিক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়!"
"কেন বাবা? আমি কি এতটাই অবাঞ্চিত?"
"চুপ গাধা! বাঙালির চাঁদে যাওয়া আর তোর কবিতা লিখতে পারা সমান কথা। তুইও কবিতা লিখিস্! আগে কবিতা বুঝবি তারপর লিখবি।"
বাবার কথাকে অমান্য করেনা মধু। এখন সে কবিতা বুঝার চেষ্টা করে।
বুঝতে পারলে সে অবাক হয়ে যায়। নিউটনের মধ্যাকর্যন শক্তির ধারনা পাওয়ার মতই অবাক হয় সে। অবাক হয়েই লিখতে বসে....
"আজ বহুকাল বাদে তোমায় পেলাম
হে কবিতা
এতদিন কেন আমায় রেখেছিলে পর করে?
কেন টাননি তোমার ঐ গগন বিস্তারি অন্তরে
যেখানে বহে কাব্যের ফল্গুধারা
সেখানে আজ লিখে রেখ যতনে
তোমাদের মধুও কবিতা লিখতে পারে...."
মধুটা আর মানুষ হলোনা। কবিই রয়ে গেলো।
(বি:দ্র: কবিদের ভালোবেসেই লেখাটা পোস্ট করেছি)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:২৩