একবার একটা বাংলা ছবির দৃশ্য দেখে ভীষণ পুলকিত এবং আবেগাপ্লুত হয়েছিলাম। দৃশ্যটা ছিল এমন.....
ভিলেন সাহেব নায়ক আলমগীরের বুকের মাঝ বরাবর গুলি করেছেন। নায়কেরতো কিছুই হয়নি উল্টো সে শার্ট খুলে বুকের মাঝ থেকে একটা টিনের পাতের তৈরী সাইনবোর্ড বের করলেন। সেই সাইনবোর্ডে লেখা, "মায়ের দোয়া"।
পরিচালকের কি সাহসী আইডিয়া! ভিমরি খেয়ে উঠার মত আইডিয়া।
আরেকটা ছবিতে দেখলাম চম্পা ও ববিতার ছোটকাল। দুজনের বয়স ১৬ এর নিচে। কিন্তু একজন আরেকজনকে রক্ত দিচ্ছে। রক্ত দেয়ার ব্যবস্থাও খুব আবেগী। দুজন পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছে। একজনের দেহ থেকে রক্ত নলের মাধ্যমে সরাসরি আরকজনের দেহে যাচ্ছে। সেই রক্তধারার সেইরকম স্পীড! কি অসাধরণ প্রযুক্তি! ব্যাগের পর ব্যাগ রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। টানটান উত্তেজনা।
আমাদের ঢালিউডে একজন ভীষন সিরিয়াস নায়ক আছেন। মার্শাল আর্ট এক্সপার্ট। প্যান্ট টা তিনি বুকের কাছাকাছি পরেন। তো একটা গানে তিনি পিটি করছিলেন। নায়িকাকে নিয়ে কক্সবাজারে অনেকক্ষন নাচানাচি করলেন। তার পরের দৃশ্য হলো...তিনি দৌড়ে ঘরে ঢুকে সেলাই মেশিনে সেলাইরত মমতাময়ী মাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, "মা মা আমি ফার্স্ট হয়েছি।" খুবই আবেগময় দৃশ্য।
এইটা একটা মনে রাখার মত দৃশ্য। একটা ছবিতে দেখলাম শাবনূর আন্টির ব্রেনে জটিল এক অসুখ করেছে (স্বাভাবিক)। সেটা ক্যান্সার বা টিউমার ছিল কিনা আমার তা মনে নেই। অসুস্থ নায়িকাকে হাসপাতালে নেয়া হলো। নায়ক মদটদ খেয়ে গান গাইতে গাইতে কাহিল। আবেগে চোখে পানি এসে যায়। ডাক্তার যখন সব আশা ছেড়ে দিচ্ছিলেন তখন কোথা থেকে এক নার্স উদয় হয়ে বললেন, "স্যার এইমাত্র খবর এসেছে এই রোগের ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে। রোগীকে এক্ষুনি আমেরিকা নিতে হবে।" আর যায় কোথায়.....এক্ষুনি ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে....ঔষধের প্রথম এক্সপেরিমেন্ট আমাদের শাবনূরের উপর চালানোর উদ্দেশ্যে পরের দৃশ্যে একটা প্লেন উড়ে যেতে দেখা গেল।
বাংলা সিনেমায় ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়ার বা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার কথা বাদই দিলাম। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভিলেন এসে বাবাকে গুলি করবে আর মাকে তুলে নিয়ে যাবে....তারপর নায়কের হারিয়ে যাওয়া অতঃপর গানের মাধ্যমে মিলন।
ইদানীংকার ছবির কথা জানিনা। দেখা হয়নাই।
কিছুদিন আগে পেপারে পড়লাম ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের নৃবিজ্ঞানের ছাত্রী লোটে হুক তার গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বাংলা সিনেমাকে। লোটের রিপোর্ট অনেক চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সমালোচনা করেছে...ব্যাপারটা তাদের অনেকেরই পছন্দ হয়নাই। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, "লোটে বেচারীর দারুন সাহস আছে। নয় দশ বছর ধরে বাংলা ছবি নিয়ে পড়ে থাকা প্রচন্ড সাহসের কাজ"
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:০১