পার্টি মানে হই-চই, নিয়ম ভেঙে অন্যরকম কিছু করা, ব্যস্ত জীবনের ছকে বাঁধা কর্মকান্ড থেকে একটু অবসর। সেই রকম কিছু সময় পাওয়ার জন্য ধানমন্ডির রাপা প্লাজায় HFC তে হাজির হয়েছিল একদল লিনাক্সপ্রেমী। পার্টির নামেও পার্টি পার্টি ভাব, “বিএলইউএ গ্র্যান্ড রিলিজ পার্টি”। একই সাথে দুটো জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উবুন্টু ও ফেডোরার নতুন ভার্সন রিলিজ পার্টি। পার্টিটি আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এলায়েন্স (BLUA) । সাধারণ নিয়মে রিলিজ পার্টিগুলো গতানুগতিক বক্তৃতা ও প্রেজেনটেশনে কিছুটা ম্রিয়মান হয়। তবে এবারই প্রথম সেই সব 'ম্রিয়মান' ব্যাপার স্যাপার ঝেড়ে ফেলে হৈচৈ করে খাবার দাবারের সাথে রিলিজ পার্টি করা হয়।
বিএলইউএ'র লিনাক্স ফোরামে আগে থেকেই পার্টিতে যোগ দেবার জন্য রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা করা ছিল। যোগদানে উৎসাহীরা সেভাবেই পার্টিতে রেজিস্ট্রেশন করেন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল তিনটায়। বাঙালী ফাঁকিবাজ হলেও এখানে তেমনটি হয়নি। শত ব্যস্ততার মাঝেও আধা ঘন্টার মধ্যে প্রায় সকলে হাজির হয়ে যায় পার্টিতে! সমমনা মানুষ পেলে আড্ডা প্রাণবন্ত হয়, এখানেও তাই হয়েছিল। কেউ এসেছিলেন উবুন্টু-ফেডোরার আইএসও পেতে, কেউ সিডি, কেউবা এসেছিলেন সমস্যার সমাধান পেতে। তবে মজার ব্যাপার হল সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল বিএলইউএ'র টি-শার্ট! অথচ সেই টি-শার্টের তখনও দেখা নেই।
পার্টি শুরু হলেও টি-শার্টের অপেক্ষায় সবাই যখন অস্থির তখনই ফ্রাইড চিকেন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় সকলকে। খাওয়া-দাওয়া চলতে চলতে চলে আসে টি-শার্টও। গুছিয়ে নিতে কিছু সময় দরকার ছিল, তাই আবারো আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন লিনাক্সপ্রেমীরা। এক ফাঁকে চলে আসেন সবার প্রিয়মুখ, বিএলইউএ'র অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ডঃ মিয়া মুহাম্মাদ হুসাইনুজ্জামান, যিনি সবার কাছে শামীম ভাই নামেই পরিচিত। তিনি তাঁর নতুন কেনা এইচপি নেটবুকের ভালো-মন্দ বর্ণনা করতে লাগলেন আগত অতিথিদের। এরই মধ্যে টি-শার্টও সংগ্রহের জন্য সাজানো হয়ে যায়।
টি-শার্ট গুলো এ্যামিগোজ ক্লথিং এর সৌজন্যে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হয়। সাদা-কালো দুটো রঙের টি-শার্টে ফেডোরা, উবুন্টু ও বিভিন্ন ডিস্ট্র'র নাম দিয়ে বানানো ডিজাইনগুলো বেশ চমৎকারভাবে মানিয়ে গিয়েছিল। এদিকে ছবি তোলা তখনও চলছে। পেশাদার ফটোগ্রাফারের মত রাসেল জন তার ডিএসএলআর দিয়ে পটাপট শুট করছেন, সেই সাথে অতিথিদের মাঝ থেকে কিছু কম্প্যাক্ট ক্যামেরার ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি চলতে থাকে সিডি-ডিভিডি বিতরণ পর্ব। যাদের প্রয়োজন ছিল তারা সিডি সংগ্রহ করেন।সিডি/ডিভিডি বিতরণ ও টি-শার্ট সংগ্রহ শেষ হলে শুরু হয় কেক কাটার পর্ব।এসময় আগত সকলেই পড়ে নেন নতুন বানানো টি-শার্টগুলো। ফেডোরা বাংলাদেশের পক্ষে আশিকুর রহমান এঞ্জেল আর উবুন্টু বাংলাদেশের পক্ষে শাহরিয়ার তারিক কেক কাটেন। কেক খাওয়া নিয়েও চলে দুষ্টুমি। উবুন্টু বাংলাদেশের লিয়াঁজো পার্সন শাবাব মুস্তাফার দাড়ি মুখে কেক মাখানো নিয়ে অনেকে উৎসুক ছিলেন। তিনিও বিমুখ করেননি, কেকে মাখামাখি করে নেন তার ট্রেডমার্ক দাড়ি!
সবকিছুর শেষ আছে, গ্র্যান্ড রিলিজ পার্টিরও শেষ সময় চলে আসে একসময়। প্রায় সন্ধ্যা সাতটায় ভাঙে লিনাক্স প্রেমীদের এই মিলনমেলা। তবে পার্টিটি শেষ হয় হই-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়েই। আগতরা একে একে বিদায় নেন। কথা দিয়ে যান সামনের আড্ডায় দেখা হবে আবার। তবে এবারের এই রিলিজ পার্টিতে প্রচুর নতুন মুখ দেখা যায়। লিনাক্স যে আস্তে আস্তে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিচ্ছে এটা তার ছোট্ট একটা নিদর্শন!
চমৎকারভাবে দুটো অপারেটিং সিস্টেমের রিলিজ পার্টি একসাথে আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এলায়েন্স (BLUA) অবশ্যই ধন্যবাদের দাবীদার। আজকের এ সাফল্য ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে অনুষ্ঠান করার প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে - এ কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। এরকম আয়োজন নিয়মিত করা হলে বাংলাদেশেও গড়ে উঠবে লিনাক্সের মজবুত কমিউনিটি। অনুষ্ঠানে যারা এসেছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ আয়োজনটিকে মুখরিত করে তোলার জন্য, আর যারা আসতে পারেননি তাদের জন্য পরবর্তী অনুষ্ঠানের আগাম দাওয়াত রইল, আশা করি পরেরবার অবশ্যই দেখা হবে!
ছবি – http://gallery.linux.org.bd/thumbnails.php?album=45
লিখেছেন – প্রখর রুদ্র