সহজ প্রশ্ন, উত্তরটাও সহজ। সমস্যাটা হচ্ছে উত্তরটা বিশাল বড়!
লিনাক্স ব্যবহার করার এতগুলো কারন আছে যে একটা সাবজেক্টের তিন ঘন্টার পুরো পরীক্ষায় শুধু এই একটা প্রশ্ন দিয়ে পুরো সময় খেয়ে ফেলা সম্ভব! টেকনিক্যাল নন-টেকনিক্যাল প্রচুর ব্যাপার স্যাপার আছে এইখানে। আমরা যারা সাধারন ব্যবহারকারি তাদের টেকনিক্যাল ব্যাপারস্যাপারগুলো অত গভীরভাবে না দেখলেও চলবে। আপাতত কয়েকটা প্রধান জিনিস নিয়ে মাথা ঘামাই। তাহলে আসুন দেখি কেন আপনি লিনাক্সকে পছন্দ করবেন?
দাম
সবার প্রথম ব্যাপার হচ্ছে এটার জন্য কোন টাকা দিতে হয়না। একেবারে ফ্রীতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে উইন্ডোজের বা বিভিন্ন সফটওয়্যারের যে সব সিডি পাওয়া যায় তার প্রায় সবই চোরাই। আমরা সেই চোরাই সফটওয়্যারগুলো দাম দিয়ে কিনে নিজেদের গায়ে চোরের তকমা লাগাচ্ছি আর যারা এসব চুরি করছে তাদের পকেট ভারি করছি। লিনাক্সে সেই সমস্যা নাই। কারন বেশিরভাগ লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এবং এদের প্রায় সব সফটওয়্যারই বিনামূল্যে পাওয়া যায়, চুরি করে বিনামূল্যে না আইনীভাবে বিনামূল্যে!
রিসোর্স
উইন্ডোজের চেয়ে লিনাক্সের রিসোর্স অনেক কম লাগে। আমরা সাধারন ইউজাররা ওএসের প্রধান যেই জিনিসটা বিচার করি সেটা হল এর গ্রাফিক্যাল এফেক্টস কেমন? উবুন্টু মাত্র ২৫৬ মেগাবাইট র্যামেই ভালো চলে, আর ডেস্কটপে পুরোপুরি গ্রাফিক্যাল এফেক্ট পেতে হলে ৪০০ মেগাবাইটের র্যামই যথেষ্ট, আর হার্ডডিস্কে ৫ গিগাবাইট খালি জায়গা হলেই হয়। অন্যদিকে উইন্ডোজ ভিস্তার পূর্ণ এফেক্টের জন্য র্যামে লাগে ২ গিগাবাইট আর হার্ডডিস্কে জায়গা লাগে ১৫ গিগাবাইট। এতে করে মনে করবেননা যে উবুন্টুর গ্রাফিক্যাল এফেক্ট ভিস্তার চেয়ে কম, বরং উল্টোটাই ঘটে থাকে। একই কথা খাটে উইন্ডোজ সেভেনের বেলায়ও! এতো গেলো উবুন্টু’র কথা। লিনাক্স ভিত্তিক কিছু কিছু অপারেটিং সিস্টেম আছে (যেমন নপিক্স, পাপ্পি লিনাক্স, ড্যাম-স্মল-লিনাক্স ইত্যাদি) যেগুলো ১২৮ মেগাবাইট র্যামেও সুন্দর চলে!
আউট অফ বক্স কন্ডিশন
আউট অফ বক্স কন্ডিশন হল যখন একটা অপারেটিং সিস্টেম আপনি ইন্সটল করবেন তখন তাতে আপনি কি কি পাবেন যাতে করে সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। উইন্ডোজের ক্ষেত্রে আপনি পাবেন গান বা মুভি দেখতে মুভি প্লেয়ার, লেখালেখি করার জন্য নোটপ্যাড, হিসাব নিকাশ করার জন্য ক্যাল্কুলেটর, ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার আর আঁকাআঁকি করার জন্য এমএস পেইন্ট। এমএস অফিস থেকে শুরু করে বাকী সব সফটওয়্যার কিন্তু আপনাকে ইন্সটল করে নিতে হচ্ছে। এবার আসুন দেখি উবুন্টুতে কি কি পাচ্ছেন। গানের জন্য অডিও প্লেয়ার, মুভির জন্য মুভি প্লেয়ার, এম এস অফিসের বিকল্প ওপেন অফিস পুরোটাই, ব্রাউজ করার জন্য বিশ্বসেরা ব্রাউজার ফায়ারফক্স, ইন্সট্যান্ট মেসেজের জন্য পিজিন, সিডি/ডিভিডি বার্নার, আঁকাআঁকি করার জন্য ওপেন অফিস ড্র, নোটপ্যাডের সমতূল্য গেডিট, ভিডিও এডিটিং এর জন্য পাইটিভি, একটা বিট টরেন্ট ক্লায়েন্ট ইত্যাদি। তাহলে বলুন আনকোড়া একটা অপারেটিং সিস্টেম এনে পিসিতে ইন্সটল করলে কোনটাতে বেশি সুবিধা পাবেন আপনি?
পারফরম্যান্স
পারফরম্যান্স হিসেব করলে সমসাময়িক উইন্ডোজের চেয়ে উবুন্টু অনেক দ্রুত, যেহেতু উবুন্টু কম রিসোর্স ব্যবহার করে। ফলে পিসি চলবে একেবারে উল্কার মত! তাছাড়া বুটিং টাইম বা কোন প্রোগ্রামের রেস্পন্স টাইম উবুন্টুতে অনেক দ্রুত।
ইন্সটলেশান
উইন্ডোজ ইন্সটল করতে কতক্ষন সময় লাগে? মোটামুটি ঘন্টাখানেকের বেশিতো হবেই। কিন্তু উবুন্টু ইন্সটল করতে সময় লাগে মাত্র বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট। শুধু তাইনা উবুন্টু বা লিনাক্স মিন্ট ইন্সটল করা খুবই সহজ, শুধুমাত্র মাউসের ব্যবহার জানলেই হল!
রি-ইন্সটলেশন
উইন্ডোজ ব্যবহারকারী মাত্রই জানেন যে প্রতি দুই তিন মাসে রুটিন করে উইন্ডোজ রিইন্সটল করতে হয়। না হলে পিসির পারফরম্যান্স গরুরগাড়ি থেকে খারাপ হয়ে যায়, বারবার হ্যাং করে ইত্যাদি আরো বহুত হ্যাপা দেখা যায়। লিনাক্সে এই ভেজালটা নাই, শুনতে অবাক লাগবে যে অনেক লিনাক্স ব্যবহারকারি জানেনই না যে সিস্টেম হ্যাং কাকে বলে!
ডিফ্র্যাগমেন্টেশন
উইন্ডোজে ডিফ্র্যাগমেন্টেশন একটা কমন ব্যাপার। মাসে অন্তত একবার ডিস্ক ডিফ্র্যাগম্যান্ট না করলে পিসির পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল লিনাক্সে ডিস্ক ডিফ্র্যাগম্যান্ট করার সিস্টেমই না। লিনাক্সের ফাইল সিস্টেম উইন্ডজ থেকে পুরোপুরি ভিন্ন তাই ডিস্ক ডিফ্র্যাগম্যান্ট করার দরকার হয়না।
ড্রাইভার
উইন্ডোজে খুব কমন একটা শব্দ ড্রাইভার সিডি। যেকোন হার্ডওয়্যার ইন্সটল করতে হলে সেই ড্রাইভার সিডি ইন্সটল করতে হয় নাহলে উইন্ডোজ সেই হার্ডওয়্যারকে পায়না। উবুন্টুতে এই সমস্যা নাই, এইখানে সব হার্ডওয়্যারই প্লাগ এ্যান্ড প্লে – অর্থ্যাৎ ডিভাইস লাগানো মাত্রই তা কাজ করা শুরু করবে, কোন কিছু ইন্সটল করতে হবেনা!
সিকিউরড সিস্টেম
উইন্ডোজে আরেকটা খুব কমন একটা শব্দ হল ভাইরাস। ভাইরাস ছাড়া পিসি কল্পনা করা যায়? জ্বি যায় যদি আপনি লিনাক্স ব্যবহার করেন। লিনাক্সে কোন ভাইরাস নাই। আর কেউ যদি লিনাক্সের জন্য ভাইরাস তৈরি করেও, লিনাক্সের এ্যাপ্লিকেশন রান করার প্রসেসটাই এমন যে সেটা আপনার পিসিতে কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। লিনাক্সের পরিবেশে কোন ভাইরাসের জন্য বেঁচে থাকা খুব কষ্টের। যেহেতু ভাইরাস নাই তাই আপনার কোন এন্টিভাইরাসেরও দরকার নাই! একইভাবে ম্যালওয়্যার, স্প্যামওয়্যার, ট্রোজান ইত্যাদি যত হাবিজাবি জিনিস আছে কোনটাই লিনাক্সে এসে সক্রিয় হতে পারেনা। ফলে আপনার পিসি পুরোপুরি এই সব হাবিজাবি জিনিস থেকে মুক্ত! তাই বলা হয়ে থাকে লিনাক্স হচ্ছে সবচেয়ে সিকিউরড অপারেটিং সিস্টেম। উচ্চমানের সিকিউরিটির জন্য ফ্রেঞ্চ পুলিশবাহিনী, গুগলসহ নামীদামী অনেক প্রতিষ্ঠানই লিনাক্সকে বেছে নিচ্ছে।
সফটওয়্যার ইন্সটলেশান
সফটওয়্যার ইন্সটলেশান উইন্ডোজের চেয়ে লিনাক্সে অনেক অনেক সহজ। লিনাক্সে বিশাল এক সফটওয়্যার ব্যাঙ্ক থাকে যাকে বলা হয় রিপোজিটরি। আপনার যখন কোন সফটওয়্যারের দরকার পড়বে কেবল ঐ ব্যাঙ্কে যাবেন আর সিলেক্ট করে ইন্সটল করতে বলবেন। লিনাক্স আপনার হয়ে পুরো সফটওয়্যার ইন্সটল করে দেবে। উইন্ডজের মত ইন্সটলেশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন কোড, ট্রায়াল ভার্সন, ডেমো ভার্সন ইত্যাদির কোন হ্যাপা নাই!
লিনাক্সে উইন্ডোজের সফটওয়্যার চলে
মজার ব্যাপার উইন্ডোজ লিনাক্সের সফটওয়্যার চালাতে না পারলেও লিনাক্স কিন্তু সেটা করতে পারে, অর্থ্যাৎ লিনাক্সে দিব্যি উইন্ডজের ফাইল চলে। উইন্ডোজের গেম থেকে শুরু করে মাইক্রোসফট অফিস বা ফটোশপসহ প্রায় সব কিছুই আপনি লিনাক্সে চালাতে পারবেন ওয়াইন নামের এক সফটওয়্যার ব্যবহার করে। তাছাড়া আরো রয়েছে সেডেগা ও ক্রসওভার।
এবার বলুন আপনি কেন লিনাক্সে আসবেননা?
- আদনান কাইউম (অভ্রনীল)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:১১