আমরা সবাই আমাদের মায়ের রান্নার অনেক ভক্ত! আমার পরিচিত এক ছেলের মা সারা জীবন তার জন্য ফিশ এন্ড চিপ্স ছাড়া কিছু রান্না করে নি, তার প্রিয় খাবার তার মায়ের হাতের রান্না করা ফিশ এন্ড চিপ্স!
গত কয়েক সপ্তাহ বাবা মা আর ছোট ভাই এর সাথে কাটানোর অনুভুতিটা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করার মত না। তেমনটা তাদের ছেড়ে যাবার কথা চিন্তা করে মনটা বর্ণনাতিত কষ্টে ভরে ওঠছে। কত দিন পরে পুরো পরিবার একসাথে। প্রতিদিনই তো কথা হত, ইমেইল, স্কাইপ সবই তো হত। তারপরও সবাইকে এত কাছে পাওয়াটা যেন সপ্নের মত। এই কটা সপ্তাহ ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করতে হয় নি নাশ্তা বানানোর কথা, বিকেলে টেসকোতে উকি দিতে হয় নি, রাতে রান্না করার বৃথা চেষ্টা করে নতুন পদের কোন খাবার আবিষ্কার করতে হয় নি। পৃথিবীতে সবথেকে আরামের জায়গা বোধ হয় আর কোথাও নেই। গত কয়টা সপ্তাহ ছিল ভালবাসাময়, গত কয়টা সপ্তাহ ছিল আনন্দের। ছোট ভাই টা লম্বায় আমায় ছাড়িয়ে গেল! অথচ মাত্র বার বছর বয়স ওর। মুখে হালকা দাড়ি আর গোফের রেখা ফোটায় সে খুব ই বিরক্ত। মাঝে মাঝে মনে হয় সেলুন থেকে সাইজ করে আসে! জিগেস করলে মুচকি হাসে। সেই ছোটবেলার হাসিটা! আমাদের বয়সের পার্থক্যটা অনেক বেশী হওয়ায় সবসময়ই একটা দূরত্ব রয়ে গিয়েছিল। সেটা কবে কাটবে কে জানে। মাঝে মাঝে ওর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে এত হাসি পায়। নাক বোচা ছিল বলে কত না ক্ষ্যাপাতাম। বলতাম যে একটা খরগোশের নাক অপারেশন করে লাগিয়ে চিয়েছি, তোমার বয়স পাচ বছর হলে খরগোশটা এসে নাক নিয়ে যাবে। যেদিন বাচ্চাটার ৫ বছর হল সেদিন সে ঘরের কোনায় লুকিয়ে আছে খরগোশের ভয়ে! নরমাল পানি কে সে বলত রমাল পানি। আর তাকে কেউ নাম গিজ্ঞেশ করলে বলত “আমার নাম বল্টু!” বলত আর হাসত। কাওকে আসল নাম বলত না!! বাচ্চাটা এত বড় হয়ে গেল হঠাৎ!
মেঝ মামার ক্যানসার হয়েছিল, মামা মারা গেলেন গত মাসে, কেউ জানায় নি আমায়। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বাবা কে কখনো অসুস্থ হতে দেখিনি, সারা দিন কাজ কাজ কাজ। এবার আসার পরে বাবা একসিডেন্ট করলেন। অল্পের উপর দিয়ে গেল যদিও অনেক বড় কিছু ঘটতে পারত। কালকে মা হাসপাতালে ভর্তি হবেন, একটা মাইনর অপারেশন। গত কাল আমাকে মা জিজ্ঞেস করে এবার কত দিনের জন্য যাব, কবে একেবারে ফেরত আসব। উত্তর দিতে পারিনি বলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। আসলেই তো, কত স্বার্থপর আমি। জীবনের ব্যালান্স শিট মেলাতে পারছি না কেন আজ। ছোট ভাইটাকে হঠাৎ এত বড় হয়ে উঠতে দেখে মনে হল যে আসলেই হয়ত বুড়িয়ে যাচ্ছি।