রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাদিন কি কি করতে হবে ভেবে কেন তোমার মাথার চুলগুলো ছিড়তে ইচ্ছে করে বল তো! ব্যপারটা তো এমন না যে কোন পর্বতসম কাজ পড়ে আছে তোমার সামনে। এগুলো তো তোমার পছন্দের কাজ, এগুলো তো স্বতস্ফুর্ত ভাবে করার কথা তোমার। কিন্তু কেন এগুলোকে এভারেস্ট মনে হচ্ছে তোমার আর নিজেকে মুসা ইব্রাহিম ভাবতে এত আপত্তি? এভারেস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যেই চুড়ার দিকে তাকাচ্ছ, গলার কাছে কি যেন একটা দলা পাকিয়ে উঠছে তোমার। অদ্ভুত একটা শিহরন হচ্ছে তোমার মাঝে, ভয় পাচ্ছ তুমি??
কোন মনিষী যেন বলেছিল যে নিজের কাজকে ভালবাসলে কখনো আর কাজ কে কাজ মনে হবে না। যে কাজগুলো করতে ভালো লাগে, কেন তবে সেগুলো করতে আজ এত অনিহা তোমার? তবে কি তুমিও সবার সাথে নিজেকে তুলনা করতে শুরু করেছ? সকালে ফেসবুকের হোমপেইজ খুলে বন্ধুদের সাথে জনপ্রিয়তার প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল?
বন্ধুবান্ধব কুয়ালালামপুর, বালি, পাতায়ায় ঘুরতে যাচ্ছে? সবাই নিজ নিজ যায়গায় সফল, অনেককে আবার এই সফলতা অর্জন করতে বেশী কাঠখড় ও পোড়াতে হয় নি। কারো সিজিপিএ খুব আহামরি কিছু ছিল না। সবাই তো একই সাথে মামার দোকানের চা খেতে কটা দিন আগে। তাদের মাঝে কেউ কেউ এত জলদি ছয় ডিজিটের স্যালারি ড্র করছে বলে বুঝি মন খারাপ তোমার? ওদের দিকে তাকিয়ে কি মনে হচ্ছে যে পুরো পৃথিবী তোমার সাফল্যের পথে কাটা হয়ে দারিয়েছে? আত্মবিশ্বাসে টান লাগল বুঝি আজ হঠাৎ? মনে প্রশ্নের ঝড় খেলা করে যায়, তোমায় কেন কেউ চাকরি দিবে যখন এই ছেলেটাও তোমার সাথে ইন্টারভিউ দিবে? ও কেন তোমার থেকে বেশী সফল, কেন তুমি ওর মত হলে না?
নিজেকে ছোট ভাবা আজকাল অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে যেন। এত প্রেসার দাও তুমি নিজের উপরে আরেকটা ধাপ উপরে উঠার জন্য। আরো চাই তোমার, আরো আরো আরো! নিজের মত করে সবকিছু না পেলে অন্যকারো সফলতা দেখে নিজের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পড়তে থাকে। মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা কমে যাবার ভয়ে, কারো ভালবাসা না পাবার ভয়ে ভীত হয়ে কুকড়ে যাও তুমি। এত বেশী ভয় পাও তুমি যে আর স্বাভাবিক থাকতে পার না তখন। যে কলম দিয়ে কবিতা লিখে তুমি সবার মন জয় করে নিতে, সে কলম দিয়ে কবিতা আর লিখা হয় না তোমার। কতদিন গলা ছেড়ে গান গাও না। গিটারটার তার যে ছিড়ে আছে, মনে আছে সে কথা? তুমি যে মানুষটা হতে চাও, সেই মানুষটা হতে গিয়ে তুমি যা ছিলে সেটা কোথায় হারিয়ে গেল? তোমার মনের ভয়গুলো তোমার আত্মবিশ্বাসকে হারিয়েই দিল?
মাঝে মাঝে ভয় পাওয়া ভাল। বাবার শাষন, মায়ের বকুনি, টিচারের শাস্তি কে কতই না ভয় পেতে ছোট বেলায়। সেই ছোটবেলার ভয়গুলো তোমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এই বড়বেলার ভয়গুলো যে তোমার বেড়ে উঠা থামিয়ে দিচ্ছে। এই ভয়গুলোকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বল না নিজেকে নিজে যে তুমি যথেষ্ট! নিজেকে বদলে ফেলার কোন প্রয়োজন নেই তোমার, মুখোশ ছাড়াই বেশ আছ তুমি! তোমার সফলতার জন্য কেউ কোন সময়সীমা বেধে দেয় নি। তোমার নিজের ইচ্ছেগুলোর, নিজের ভাললাগা গুলোর মুল্য দাও। যেকোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করার সাধ্য আর সামর্থ দুটোই আছে তোমার, শুধু বিশ্বাস রাখ তুমি। তুমি নিজ থেকে যা কর, তাই যে প্রশংসার দাবী রাখে! নিজের উপরে এত বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না। আচ্ছা বাদ দাও এখন এত কথা। কতদিন তোমাকে প্রাণখুলে হাসতে দেখি না, একটু হাস না আজ প্লিজ!