খুব বেশিদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়েছি বলা যাবে না। ৭ বছর কি খুব বেশি সময়? যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব একটা প্রভাব জীবনে এখনও ফেলতে পারিনি, কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে হয় ফেলে আসা সেই সব দিনের কথা। কত স্মৃতি, কত বেদনায় ভরপুর ছিল সেইসব দিন।
সেদিন পেশাগত কাজে গেলাম এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঢুকতেই গেট এর মামা বাধা দিল, "মামা, আই ডি কার্ড!" বললাম যে, আমি তো ছাত্র নই, এদিকে কিন্তু মনে মনে পুলকিত, এখনও বয়স আছে তাহলে! :p
বাধা পেরিয়ে গেলাম লিফট এর দিকে। লিফটে খুব ভিড় নেই কিন্তু দরজা বন্ধ হলো শেষ মেশ ওঠা অতিরিক্ত আরোহী নেমে যাবার পর। নব্য আর পুরোনো ছাত্রদের টুকিটাকি কথা কানে আসছিল আর মনে হচ্ছিল সেইসব দিনের কথা। যাবো ৯ তলায়। কিন্তু বিধি বাম। ২ তলার কলে থেমে গেল লিফট। খুলতেই দেখলাম একজন পঞ্চাশোর্ধ শিক্ষক দাঁড়িয়ে। আমি শেষ দিকে দাড়ানো, চিন্তা করছি সালাম দেবো কিনা। এদিকে যেহেতু লিফটে অতিরিক্ত ওজনের সংকেত বেজেছিল তাই সামনের থেকে একজনকে নেমে যেতে হবে। আমি চিন্তা করছি সবাইকে ঠেলে আমার নামাটা কি যুক্তিযুক্ত হবে কিনা। শত হলেও আমিতো বাইরের মানুষ, বাকিদের সবার তো ক্লাস আছে। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো, কি ব্যাপার, কেউ নামছে না কেন? উনি যাবেন কিভাবে, কাউকে তো নামতে হবে। কিন্তু লিফট তো আর মানুষ না। যেহেতু দরজায় কোনো নড়ন চড়ন নেই তাই সে বন্ধ হতে উদ্যত হতেই অসহায় শিক্ষক চেপে ধরলেন দরজা। তাকে তো যেতেই হবে, অনেক ছাত্র অপেক্ষা করে আছে তার প্রতিক্ষায়, এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে তো আর এই বয়সে ওঠা সম্ভব নয়। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই হতবাক যে ভুলেই গেলাম আমি নেমে গেলেই পারতাম। নিতান্তই অনিচ্ছায় একজন ছাত্রের দয়া হলো। সে বিড় বিড় করতে করতে নেমে গেল। তারপর উঠলেন সেই শিক্ষক। যিনি হাতে ধরে তার জীবনের অর্জিত সব শিক্ষা দান করেন ছাত্রদের, সেই ছাত্রদের এত অনীহা একজন শিক্ষককে লিফটের এতটুকু স্থান ছেড়ে দিতে!
আমি অবাক, হতবাক, উনি নেমে যাওয়া ছাত্রটিকে ধন্যবাদ দিলেন, বললেন, তুমি অনেক কষ্ট করলে! আমার হাটুতে ব্যাথা!
জীবনে অসংখ্যবার এমন হয়েছে যে, এমন পরিস্থিতিতে দুই তিন জন একসাথে নেমে গিয়েছি একজন শিক্ষককে উঠতে দিয়ে। কার আগে কে নামবো সেই প্রতিযোগীতা হতো।
আমার প্রশ্নটা হলো, তাহলে এখনকার শিক্ষকরা কি সত্যিই বন্ধুর মত? যাকে ছাত্রদের এতটুকুন সম্মান দেখানোর কিছু নেই? নাকি আমি খুব বেশি সেকেলে হয়ে গিয়েছি?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৯