শিশির ভেজা শীতের সকাল কিংবা মৃদু রৌদ্রতপ্ত শীতের দুপুর অথবা গৌধুলী রাঙ্গা শান্ত শীতল সন্ধ্যা কার না পছন্দ! শীতকাল বরাবরই আমার প্রিয় কিন্তু একমাস আগের শীতের বিস্মৃতি এখন শুধুই অতীত। বাইরে বেরোনোর সময় হাতমোজা, হুডি, ডাবল প্যান্ট পড়েও নাক দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরতো। মনে হতো মরুভূমির তপ্ত বালিয়াড়ি (দুবাই) পেরিয়ে তুষারের স্তূপে (ডাবলিন) এসে পড়েছি। মোবাইলে কথা বলার সময় হাত বের করলে মনে হতো আঙ্গুল গুলো অবশ হয়ে আসছে , কি অসহ্য শীত, হাত পা যেন জমে আসতো ! অথচ এখন কত সহজেই না নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। সেই একই তাপমাত্রায় এখন আর তেমন শীত অনুভূত হয় না। এতো সহজে শীতের সাথে বনিবনা হয়ে যাবে ভাবিনি । এখন ছয়-সাত ডিগ্রি তাপমাত্রার শীতকে মনে হয় কোমল মাধুর্যময়! বাড়িঘর উষ্ণ রাখার এত সুন্দর ব্যবস্থা যে বাইরে মাইনাস তাপমাত্রা থাকলেও ভিতরে শীত যেন একেবারেই অনুপস্থিত। টিশার্ট পড়ে দিব্যি থাকা যায় ।
আহ!! ইয়াম্মী আইসক্রিম! আইসক্রিম দেখলেই প্রাণ আনচান করে ওঠে। আইসক্রিম মুখে দিলেই যেন রাজ্যের প্রশান্তি। হিমশীতল ঠান্ডায় আইস্ক্রিমের চাইতে মুখরোচক খাবার আমার কাছে দ্বিতীয়টি নেই। আইসক্রিম মুখে পুড়ে এই ঠান্ডায় হাঁটাহাঁটি করার মধ্যে একটা "ফিলগুড" ফিলিংস কাজ করে । বাসা থেকে বেড়োলেই একটু পর পর আইসক্রিম পার্লার, আইসক্রিম খাওয়ার লোভ সামলানো আমার জন্য বেশ কঠিন। আর এই কনকনে ঠাণ্ডায় আইসক্রিম খাওয়ার মজাটা একেবারেই আলাদা। আইসক্রিম প্রেমীরা ইচ্ছেমত খেতে পারেন কারণ আইসক্রিম খেলে মস্তিষ্ক সেরোটোনিন এবং ডোপামাইন হরমোন নিঃসরণ করে। এই দু’টি হরমোনই মুড ভাল রাখার প্রধান উপাদান।
প্রায় ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডে কোনো সাপ নাই। সাপ না থাকার বিষয়ে প্রচলিত মিথ অনেকটা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পের মতো। সেইন্ট প্যাট্রিক ছিলেন আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে একজন। তিনি ৪০ দিনের জন্য উপবাসী তপস্যা করতে একটি পাহাড়ে উঠতে শুরু করলে সাপে কামড়ে দেয়। তারপর আয়ারল্যান্ড থেকে সব সাপ বিদায় করার ব্রত নেন। সে অনুসারে যেখানে যত সাপ ছিল তার লাঠির ইশারায় সব সাপ একটি চূড়ায় জড়ো করে ফেলে দিয়েছিলেন সাগরে। সেই থেকে আয়ারল্যান্ডে আর কোনো দিন সাপ দেখা যায়নি। অনেকেই সাপ অশুভর প্রতীক মনে করে। প্রতি বছর প্যাট্রিকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্যাট্রিক দিবস পালন করে আইরিশরা। শহর জুড়ে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। আমার ছবিগুলো প্যাট্রিক দিবসে তোলা।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা প্রচলিত মিথের সাথে একদমই একমত নন। বিজ্ঞানীদের মতে আয়ারল্যান্ডে কখনোই কোনো সাপের জীবাশ্ম পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ আদিকাল থেকেই এ অঞ্চলে কোনো সাপ ছিল না। কাছাকাছি থাকা স্থলভূমির সাথে আয়ারল্যান্ডের সর্বনিম্ন দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। কোনো সাপের পক্ষে এতো দূরের বরফ-শীতল পথ সাঁতরে পাড়ি দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের নিকটবর্তী ইংল্যান্ডেই সাপ আছে, এবং ইংল্যান্ডও একটি দ্বীপ-রাষ্ট্র। কাছাকাছি দুই দ্বীপ রাষ্ট্রের একই রকম আবহাওয়া ,পরিবেশ হওয়া সত্ত্বেও একটিতে সাপ আছে, অন্যটিতে নেই কেন? বিজ্ঞানীদের উত্তর হচ্ছে প্রায় ৮০০০ হাজার বছর আগে আয়ারল্যান্ড ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বীপ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আরও ২,০০০ বছর পরে, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৬,০০০ বছর আগে ইংল্যান্ডের সাথে ইউরোপের সংযোগ পথ সমুদ্রে বিলীন হয়ে ইংল্যান্ডকে দ্বীপ রাষ্ট্রে পরিণত করে। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন প্রাণী ইউরোপ থেকে আয়ারল্যান্ডের তুলনায় ইংল্যান্ডে যাওয়ার জন্য আরও ২,০০০ বছর বেশি সময় পেয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে সাপ ইংল্যান্ডে স্থায়ী আবাস করে নেয়।
চলবে ......
ডাবলিনের গল্প ১ (ছবি ব্লগ ) :
ছবি: নিজ