বিমানবন্দরের তিন নাম্বর গেটে স্ক্যান করতে দিয়ে অপর পাশে যেয়ে দেখি আমার ল্যাপটপ ব্যাগ নাই। কিছুটা ভীর ছিল কিন্তু চোখের সামনে ব্যাগ হওয়া হয়ে যাবে চিন্তাই করতে পারি নাই।স্ক্যান মেশিনের ওখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে কিছু সময় ওয়েট করতে বললেন। প্রায় ১৫ মিনিট থাকার পর দেখছি আমার মত আরেকটা ব্যাগ পরে আছে। মনে হচ্ছে কোনো যাত্রী ভুল করে তার টা রেখে আমার ব্যাগ নিয়ে গেছে। পুলিশ পরে থাকা ব্যাগ খুলে যাত্রীর কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা চেক করলেন। ব্যাগে শুধু মহিলাদের জামা কাপড়, যাত্রীর কোনো তথ্য নাই। আমাকে বিভিন্ন কাউন্টারে ব্যাগ খোজ করতে বলে এবং তিনি হারানো বিজ্ঞপ্তি দেয়ার ব্যবস্থা করলেন।
আমি বিভিন্ন কাউন্টারে খোঁজাখোঁজি করে ব্যাগ না পেয়ে ৬ নাম্বর গেটে দায়িত্বরত মহিলা পুলিশ কর্মকতাকে ইনফর্ম করলাম। তিনি আমাকে অনেক আশ্বাস বাণী শুনাইলেন। তার ব্যবহার ছিল সত্তিই অসাধারণ। মনে হচ্ছিল তিনিও আমার ব্যথায় ব্যথিত। আমাকে সি সি ফুটেজ দেখার জন্য নিচে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তি জানালেন আমাদের কর্মকর্তা এক ঘন্টা পরে আসবে, আপনি প্লিজ এক ঘন্টা পরে আসেন। আমি আবার ৩ নাম্বর গেটে এসে পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করছি। তারাও বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করছেন।
বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রতিটি সংস্থাকে জানাচ্ছি। শাকিল ভাইকে জানানোর পর তিনি আমাকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে থাকলেন। বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক এবং ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোশতাক আহমেদ (ভাই) বিমানবন্দরে দায়িত্বে থাকা এ.এস.পি জসিম ভাই কে জানালে তিনি আমাকে স্টাফ গেট দিয়ে প্রবেশ করে যাত্রী লাউঞ্জে ব্যাগ দেখতে বললেন। সাথে আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিলেন। আমরা দুজন দুদিকে খুজছি। জসিম ভাই বেশ কয়েকবার ফোন করে খোজখবর নিচ্ছেন এবং জিজ্ঞাসা করছেন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। এদিকে আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে আসছে। বাইরের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর গেট থেকে ফোন করেও আমার খোজ নিচ্ছেন। যতবার বলছি ব্যাগ পাইনি ততবার তারাও যেন মন খারাপ করছেন। আমরা দুজন ব্যর্থ হয়ে জসিম ভাইয়ের কাছে উপস্থিত হলাম।
জসিম ভাই, যাত্রীর ফেলা যাওয়া ব্যাগে কি ধরনের জিনিসপত্র আছে আমার কাছ থেকে বর্ণনা শুনে তিনি দ্রুত ভিতরে এয়ার এরাবিয়া কাউন্টারে যেতে বললেন। সাথে আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে বললেন এয়ার এরাবিয়া কিছু সময়ের মধ্যে ছেড়ে যাবে। অনবোর্ড অপেক্ষায় থাকা মহিলা যাত্রীদের ব্যাগ দেখতে বললেন। আমি জসিম ভাইয়ের আন্তরিকতা এবং দূরদর্শিতায় অবাক হয়ে গেলাম। আমরা ৫ এবং ৬ নম্বর কাউন্টারে যেয়ে দেখি বিশাল লাইন ধরে আছে। এয়ার এরাবিয়া ৫ নম্বর কাউন্টার চেক করে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডনগামী ৬ নম্বর কাউন্টার দিকে যেতে দেখি একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের হাতে আমার ব্যাগ। আমার ব্যাগের চেইন খোলা। তিনি আমার ব্যাগে তার ওষুধ খুজছেন। সাথে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা তার পাসপোর্ট দেখতে চাইলেন। তিনি একজন বাংলাদেশী বংশভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তিনিও আসলে বুঝতে পারেন নাই। বাইরের ৩ নম্বর গেট থেকে তার ব্যাগটা সংগ্রহ করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা তাকে নিয়ে গেলেন। আমি জসিম ভাইকে ধন্যবাদ দিয়ে ইমিগ্রেশনের সব কাজ শেষ করে আমার ফ্লাইটের কাউন্টারে চলে গেলাম। এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ২ ঘন্টা। এর মধ্যে বিমানবন্দরের সবাই জেনে গেছে আমি ব্যাগ ফিরে পেয়েছি। আমাকে ফোন দিয়ে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। আমার ইচ্ছা হচ্ছিলো সবাইকে কাছে গিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে আসি কিন্তু সময় সল্পতার কারণে যেতে পারিনি।
আমি যতজনের কাছে সাহায্য চেয়েছি বা পেয়েছি তারা বয়সে সবাই প্রায় তরুণ কর্মকর্তা। তাদের সবার অমায়িক ব্যবহার এবং আন্তরিকতায় সত্যিই আমি মুগ্ধ। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দরভাবে সাহায্য করার জন্য। সবিশেষ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিভিন্ন ভাবে সবাই আমাকে ঋণী করেছেন।
দুবাই প্যারেডে বাংলাদেশীদের গর্বিত অংশগ্রহন !! (ছবিব্লগ)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৩