প্রবাসে এসে বুঝতে পেরেছি, দেশ কী, দেশের মায়া কী। দূরে গেলে প্রেম বাড়ে শুনেছিলাম। দেশপ্রেমের ক্ষেত্রেও যে সত্যি, তা বুঝলাম প্রবাসে এসে। প্রবাসে যারা আছেন সবারই একই অনুভুতি। দেশের জন্য অকাতরে কাঁদে মণ প্রাণ। বাংলাদেশের প্রয়োজনে যেকোনো সময় নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। শত কষ্টের মধ্যেও ভুলে যাননা তাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে। তাইতো শত ব্যস্ততায়ও দেশ প্রেমের টানে শত শত প্রবাসী দুবাই প্যারেডে অংশগ্রহন করে। বাংলার মানুষের সরলতা, বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনযাপন,কৃষ্টি, ঐতিহ্য, uae তথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরাই ছিল এ প্যারেডের মূল উদ্দেশ্য ।
uae এর ৪৩ তম জাতীয় দিবসে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বতষ্ফুর্ত অংশ গ্রহন স্থানীয় ভাবে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। প্যারেডে বাংলাদেশ সহ ৪৩টি দেশ অংশ গ্রহন করে।প্যারেডে র্যালীসহ বিভিন্ন সাঁজে নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।দেশীয় ঐতিয্যবাহী পাজামা-পাঞ্জাবী,বাসন্তী শাড়ি পরিহিত বরযাত্রী , ফেস্টুন, পতাকা, পালকি, ঢোল বাসী, একতারা, বাউল, জামাই, বউ, সাপুড়ে, পাহাড়ি মেয়ে, বর ,পালকিতে লজ্জাবতী বধু , নৃত্যরত সখীরা,বাদ্য-বাজনা সহ বাংলাদেশীদের হাতে ছিল বাংলাদেশ এবং uae জাতীয় পতাকার এক বিশাল বহর। বাঙালি সংস্কৃতির নানা উপকরণে সজ্জিত যা সকল দেশের মানুষের কাছে সমাদৃত ও প্রসংশিত হয়েছে।
[বাঁ থেকে ফারহান ভাই , নওশের আঙ্কেল এবং পাভেল ভাই ]
ক্যামেরার পিছনের মানুষ ফারহান ভাই। সব সময় কাজ করেন নিরবে নিভৃতে। ফারহান ভাইয়ের মাথা থেকে আইডিয়া। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরে সদা হাস্যময় প্রাণোচ্ছ্বল পাভেল ভাইয়ের উপর। জনমত তৈরি, রিহার্সেল , আর্থিক অনুদান তোলা সহ যাবতীয় দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন। সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়ান বয়সে প্রবীন কিন্তু মানসে ও মননে, চিন্তায় ও কর্মে একজন নবীন নওশের আঙ্কেল। প্রবাসীদের যেকোনো সামাজিক সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিতে তিনিই থাকেন সবার মধ্যমণি হয়ে। যোগ্য নেতৃত্ব, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে চললে কোন অর্জনই যে অসম্ভব নয়, এত অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। বিশ্ববাসীর কাছে নৈপূন্যতার সাথে দেশকে উপস্থাপন করার জন্য সবার পক্ষ থেকে এই ত্রয়ীদের আন্তরিক অভিনন্দন।
[শিশুদের সাথে তোহা ভাই !]
দুবাই প্যারেডে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে বাংলাদেশী শিশুদের অংশগ্রহন। বাচ্চা গুলি এত কিউট এবং সুন্দর ভাবে বাউল, সাপুড়ে মেয়ে, নব বধু , সখী, পাহাড়ি মেয়ে সেজেছে যে বিদেশীদের ব্যাপক নজর কারে। সবাই বাচ্চাদের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত। বাচ্চারাও হাসিমাখা মুখ নিয়ে তাদের সাথে ছবি তুলছে। একজন বলছে ভাইয়া আমার হাসি হাসি মুখ করে থাকতে থাকতে আমার গাল ব্যথা হয়ে যাচ্ছে বুঝতেই পারছেন কি পরিমান ছবি তোলার রিকোয়েস্ট ছিল।
[হৃদয়ে বাংলাদেশ ]
দুবাই প্যারেডের ভিতরে যেয়ে ছবি তোলার আমার অনুমতি ছিল না।দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি চাচ্ছিলাম তখন আমার বুকে বাংলাদেশ লিখা ব্যানার দেখে, হাসিমুখে "বাংলাদেশ" বলে আমাকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমার সাথে একজন ভারতীয় ফটোগ্রাফার ছিলেন । তার উক্তি "তোমরা দেখিয়ে দিয়েছো"। তার সাথে যতবার প্যারেডে দেখা হয়েছে ততবার হাত উচিয়ে হাসিমুখে অভিবাদন জানিয়েছে। রোমানিয়ার মেয়েদের দলের ছবি নেয়ার সময় তারা সমস্বরে "বাংলাদেশ" "বাংলাদেশ" বলে চিত্কার করছিল। এ সবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের শৈল্পিক, নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন পারফর্মেন্সের জন্য।
[পালকিতে লজ্জারাঙা বধু যায়। পালকি কাধে সর্ব বামে ব্লগার তুহিন ভাই ]
[পতাকা উচু করে ধরে আছেন ফাহিম ভাই , ডান পাশে নোবেল ভাই এবং গাড়ির রেপ্লিকা হাতে শরিফ ভাই !!]
[মাঝের সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত তানভির ভাই বাংলাদেশ লেখা ব্যানার ধরে আছেন]
[ নিচে দেখুন বিদেশীদের কিছু পারফর্মেন্স]
=> যা ব্যথিত করেছে ......
* আজমান ভিত্তিক বাংলাদেশী একটি সংস্কৃতি সংগঠন, সম্মানী ছাড়া প্যারেডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তাদের ছাড়াই এতো সুন্দর বর্ণিল আয়োজন দেখে তারাও হয়তো অনুতপ্ত। আশা রাখি দেশের তরে পরবর্তীতে তারা অংশগ্রহণ করবেন ।
* বাংলাদেশ হাইকমিশন এই মহান উদ্যোগে এগিয়ে আসলে আরো ভালো লাগত।
শত শত ক্যামেরা , উত্সুক জনতা, লাইভ ব্রডকাস্টিং, প্রায় ২৫০ টি দেশের মানুষের বসবাস দুবাই নগরী সহ সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে দেখল এক অন্যরূপে যা কখনো ভাবেনি আগে। “ সাবাস বাংলাদেশ; এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়" ।
কবির ভাষায় ....
হাসবে জাতি,গড়বো দেশ
বিশ্বব্যাপি বলে উঠবে-
বাংলাদেশ ইজ ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট!!
দুবাই ডেজার্ট সাফারি (ছবি ব্লগ )
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৮