somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তব যেমনই হোক, উপস্থাপনা ভালো হওয়া চাই!

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন আগে একটা কৌতুক টাইপের গল্প পড়েছিলাম ইন্টারনেটে। দুই মহিলা অফিসে বসে গল্প করছে।
- কাল কেমন কাটালেন, ভাবি ?
- পুরাই ভুয়া, আপনার ভাই বাসায় আসলো, ডিনার করলো, দুই মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল! কেমন লাগে বলেন? আপনার কেমন গেল?
- আমার তো চরম ভালো গেল। আপনার ভাই বাসায় এসে আমাকে নিয়ে গেল বাইরে ডিনার করতে। ডিনার শেষে আমরা দুজন এক ঘন্টা একসাথে হাঁটলাম, এরপর বাসায় এসে পুরো বাসায় মোমবাতি জ্বালালাম! কী যে রোমান্টিক! পুরোই যেন রূপকথার গল্প!

তাদের স্বামীরা একই সময়ে গল্প করছে আরেক অফিসে।
- কাল কেমন গেল, ভাই?
- কাল তো চরম গেল, বাসায় এসে দেখি আপনার ভাবি খাবার রেডি করে রেখেছে টেবিলে, খাওয়া শেষ করেই একটা শান্তির ঘুম দিলাম! আপনার কেমন গেল?
- আর বইলেন না, বাসায় এসে দেখি আমার কারেন্টের লাইন কেটে দিয়েছে কারণ আমি বিল দিতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই বাধ্য হয়ে বাইরে ডিনার করতে যেতে হল। ডিনার করেই সব টাকা শেষ, তাই বাধ্য হয়ে হেটে হেটে বাসায় আসতে হয়েছে! যেহেতু কারেন্ট নেই, বাসায় এসে আমি নিজেই চারদিকে মোমবাতি জ্বালালাম। পুরাই ফাউল একটা দিন গেল কালকে!

গল্পের মূলভাব: বাস্তব যেমনই হোক, উপস্থাপনা ভালো হওয়া চাই!

মনিপুরীপাড়া ২ নম্বর গেইটের কাছে স্বপ্ন সুপার স্টোর। আমি প্রায়ই সেখানে যাই। সেখানে ঢুকতেই সামনে বিশাল বড় আয়না। উপরে অনেক লাইট। ঢুকেই আয়নাতে নিজের চেহারাটা দেখলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। নিজেকে অরেক ফর্সা, সুন্দর এবং একটু মোটা লাগে লাগে সেখানে। কিছুক্ষণের জন্য আমিও গ্রীক মাইথোলজির নার্সিসাস হয়ে যাই। নিজের রূপে নিজেই কাইত!

১০০ ছবি থেকে বেছে বেছে ১ ছবি বের করি। সেটাতেও হাজার রকমের ফটোশপ ইফেক্ট দিয়ে সেটা দেখতে সুন্দর লাগে সেটা ফেসবুকে পোস্ট করি। চেহারা যেমনই থাক, ফটোশপ করা নিজের চেহারা নিজে দেখেই প্রেমে পড়ে যাই! পুরাই মাল একটা আমি!
আমার পরিচিত এল ভদ্রলোক ফেসবুকে ছবি দিতেন কপাল থেকে কেটে, কারণ তার মাথায় টাক!

আমার পরিচিত অনেকেই বিয়ে করতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেছে, পছন্দের মেয়ে পাচ্ছে না, কারণ কিছুই না, মেয়েরা সবাই প্রেম করে! আর যারা প্রেম করে না, তাদের পছন্দ হয় না! যখন জিজ্ঞেস করি, বিয়ে করছো না কেন, তারা বলে, আরে, এতো তারা তারি বিয়ে করে কী হবে? আস্তে ধীরে করি, বিয়ে করলেই তো সব শেষ।

সুন্দর একটা শার্ট পড়ে আছে, একজন দেখে জিজ্ঞেস করলো, শার্ট টা তো সুন্দর, কোথা থেকে কিনছ? আমি উত্তর করি, এই বাইরে থেকে কেনা! (আমি মিথ্য বলি নাই, এটা বাইরে মানে ফুটপাথ থেকে কিনা!)

বাসায় একটা ওয়্যারড্রব, একটা আলমারি, একটা আলনা! ব্যাচেলর বাসা হিসেবে এটাকে ওভার-ফারনিসড বলা যায়! তার পরেও আমাদের সব কাপড় চোপড় এদিন-ওদিক ছড়ানো-ছিটানো। আলনা টা হয়ে গেলে ব্ল্যাক-হোল। এখানে কিছু গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে করে অবশ্য একটা সুবিধা আছে, অনেকদিন পর নিজের পছন্দের কোন কাপড় খুঁজে পেলে অনেক আনন্দ লাগে। আমার চেয়ারে আমি সর্বশেষ কবে বসতে পেরেছিলাম মনে নেই, সেখানে সবসময় কাপড় দিয়ে ভরা থাকে। বাসায় কেউ আসলে, জাতির বিবেকের কাছে একটাই প্রশ্ন, কাপড়, জিনিসপত্র যদি চেয়ার, আলনা ও এদিক-ওদিক রাখবা, তাহলে এতো টাকা দিয়ে ওয়্যারড্রব ও আলমারি কেনার দরকারটা কী ছিল?
উত্তরটা খুব সহজ। কেউ যেন মনে না করে, আমার আর্থিক সমস্যা আছে বা আমি কিপটা!

আমাদের অবস্থা যেমনই হোক, আমরা নিজেদের ভালো দেখতে, ভালো দেখাতে পছন্দ করি। কারণটা সিম্পল। আমাদের ভালো থাকাটা আমাদের উপর নয়। আমারা ভালো আছি কিনা সেটা বিচার করে অন্য মানুষ। আজকে আমার একটা পা না থাকলে কোন কষ্টই লাগতো না যদি পৃথিবীর সব মানুষের এক পা থাকতো। আমার কালো হলে কোন কষ্টই লাগতো না যদি সবাই কালো হত। আমার এক বেলা খেলে কোন কষ্টই হত না যতি সবাই একবেলা খেত। সুতরাং আমি কেমন আছি সেটা আমার উপর নেই, হয়ত যেমন আছি সেটা নিয়েই ভালো আছি, কিন্তু বিশ্বাস করুন, বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। কেউ না কেউ তার সুখ দেখিয়ে আমাকে অসুখী করে যাবে!
আয়ুব বাচ্চুর গানটা মনে পড়ে গেল, 'সুখেরই পৃথিবী, সুখেরই অভিনয়; যতই আড়ালে রাখো, আসলে কেউ সুখি নয়!'
জীবন যেমনই হোক, উপস্থাপনা ভালো হওয়া চাই!
অনেকদিন পর ব্লগে আসলাম। মস্কক ঠিক মত কাজ করে না ইদানিং!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৫
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×