অনেকদিন আগে একটা কৌতুক টাইপের গল্প পড়েছিলাম ইন্টারনেটে। দুই মহিলা অফিসে বসে গল্প করছে।
- কাল কেমন কাটালেন, ভাবি ?
- পুরাই ভুয়া, আপনার ভাই বাসায় আসলো, ডিনার করলো, দুই মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল! কেমন লাগে বলেন? আপনার কেমন গেল?
- আমার তো চরম ভালো গেল। আপনার ভাই বাসায় এসে আমাকে নিয়ে গেল বাইরে ডিনার করতে। ডিনার শেষে আমরা দুজন এক ঘন্টা একসাথে হাঁটলাম, এরপর বাসায় এসে পুরো বাসায় মোমবাতি জ্বালালাম! কী যে রোমান্টিক! পুরোই যেন রূপকথার গল্প!
তাদের স্বামীরা একই সময়ে গল্প করছে আরেক অফিসে।
- কাল কেমন গেল, ভাই?
- কাল তো চরম গেল, বাসায় এসে দেখি আপনার ভাবি খাবার রেডি করে রেখেছে টেবিলে, খাওয়া শেষ করেই একটা শান্তির ঘুম দিলাম! আপনার কেমন গেল?
- আর বইলেন না, বাসায় এসে দেখি আমার কারেন্টের লাইন কেটে দিয়েছে কারণ আমি বিল দিতে ভুলে গিয়েছিলাম, তাই বাধ্য হয়ে বাইরে ডিনার করতে যেতে হল। ডিনার করেই সব টাকা শেষ, তাই বাধ্য হয়ে হেটে হেটে বাসায় আসতে হয়েছে! যেহেতু কারেন্ট নেই, বাসায় এসে আমি নিজেই চারদিকে মোমবাতি জ্বালালাম। পুরাই ফাউল একটা দিন গেল কালকে!
গল্পের মূলভাব: বাস্তব যেমনই হোক, উপস্থাপনা ভালো হওয়া চাই!
মনিপুরীপাড়া ২ নম্বর গেইটের কাছে স্বপ্ন সুপার স্টোর। আমি প্রায়ই সেখানে যাই। সেখানে ঢুকতেই সামনে বিশাল বড় আয়না। উপরে অনেক লাইট। ঢুকেই আয়নাতে নিজের চেহারাটা দেখলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। নিজেকে অরেক ফর্সা, সুন্দর এবং একটু মোটা লাগে লাগে সেখানে। কিছুক্ষণের জন্য আমিও গ্রীক মাইথোলজির নার্সিসাস হয়ে যাই। নিজের রূপে নিজেই কাইত!
১০০ ছবি থেকে বেছে বেছে ১ ছবি বের করি। সেটাতেও হাজার রকমের ফটোশপ ইফেক্ট দিয়ে সেটা দেখতে সুন্দর লাগে সেটা ফেসবুকে পোস্ট করি। চেহারা যেমনই থাক, ফটোশপ করা নিজের চেহারা নিজে দেখেই প্রেমে পড়ে যাই! পুরাই মাল একটা আমি!
আমার পরিচিত এল ভদ্রলোক ফেসবুকে ছবি দিতেন কপাল থেকে কেটে, কারণ তার মাথায় টাক!
আমার পরিচিত অনেকেই বিয়ে করতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেছে, পছন্দের মেয়ে পাচ্ছে না, কারণ কিছুই না, মেয়েরা সবাই প্রেম করে! আর যারা প্রেম করে না, তাদের পছন্দ হয় না! যখন জিজ্ঞেস করি, বিয়ে করছো না কেন, তারা বলে, আরে, এতো তারা তারি বিয়ে করে কী হবে? আস্তে ধীরে করি, বিয়ে করলেই তো সব শেষ।
সুন্দর একটা শার্ট পড়ে আছে, একজন দেখে জিজ্ঞেস করলো, শার্ট টা তো সুন্দর, কোথা থেকে কিনছ? আমি উত্তর করি, এই বাইরে থেকে কেনা! (আমি মিথ্য বলি নাই, এটা বাইরে মানে ফুটপাথ থেকে কিনা!)
বাসায় একটা ওয়্যারড্রব, একটা আলমারি, একটা আলনা! ব্যাচেলর বাসা হিসেবে এটাকে ওভার-ফারনিসড বলা যায়! তার পরেও আমাদের সব কাপড় চোপড় এদিন-ওদিক ছড়ানো-ছিটানো। আলনা টা হয়ে গেলে ব্ল্যাক-হোল। এখানে কিছু গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে করে অবশ্য একটা সুবিধা আছে, অনেকদিন পর নিজের পছন্দের কোন কাপড় খুঁজে পেলে অনেক আনন্দ লাগে। আমার চেয়ারে আমি সর্বশেষ কবে বসতে পেরেছিলাম মনে নেই, সেখানে সবসময় কাপড় দিয়ে ভরা থাকে। বাসায় কেউ আসলে, জাতির বিবেকের কাছে একটাই প্রশ্ন, কাপড়, জিনিসপত্র যদি চেয়ার, আলনা ও এদিক-ওদিক রাখবা, তাহলে এতো টাকা দিয়ে ওয়্যারড্রব ও আলমারি কেনার দরকারটা কী ছিল?
উত্তরটা খুব সহজ। কেউ যেন মনে না করে, আমার আর্থিক সমস্যা আছে বা আমি কিপটা!
আমাদের অবস্থা যেমনই হোক, আমরা নিজেদের ভালো দেখতে, ভালো দেখাতে পছন্দ করি। কারণটা সিম্পল। আমাদের ভালো থাকাটা আমাদের উপর নয়। আমারা ভালো আছি কিনা সেটা বিচার করে অন্য মানুষ। আজকে আমার একটা পা না থাকলে কোন কষ্টই লাগতো না যদি পৃথিবীর সব মানুষের এক পা থাকতো। আমার কালো হলে কোন কষ্টই লাগতো না যদি সবাই কালো হত। আমার এক বেলা খেলে কোন কষ্টই হত না যতি সবাই একবেলা খেত। সুতরাং আমি কেমন আছি সেটা আমার উপর নেই, হয়ত যেমন আছি সেটা নিয়েই ভালো আছি, কিন্তু বিশ্বাস করুন, বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। কেউ না কেউ তার সুখ দেখিয়ে আমাকে অসুখী করে যাবে!
আয়ুব বাচ্চুর গানটা মনে পড়ে গেল, 'সুখেরই পৃথিবী, সুখেরই অভিনয়; যতই আড়ালে রাখো, আসলে কেউ সুখি নয়!'
জীবন যেমনই হোক, উপস্থাপনা ভালো হওয়া চাই!
অনেকদিন পর ব্লগে আসলাম। মস্কক ঠিক মত কাজ করে না ইদানিং!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৫