বাংলা সিনেমাকে নিয়ে আমরা যে যাই বলি না কেন, আমাদের অনেকেরই কিন্তু ছোটবেলার মধুর সময়গুলো কেটেছে বাংলা সিনেমা দেখে। একুশে টিভি আসার আগে বিটিভি ছিল আমাদের একমাত্র চ্যানেল । অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম কবে শুক্রবার আসবে। যদিও সব বাংলা সিনেমার কাহিনী ঘুরে ফিরে সেই ‘যে লাউ সেই কদু’ টাইপের হত, তার পরেও দেখতে খারাপ লাগতো না। আমরা সবাই জানতাম, সিনেমায় নায়ক/নায়িকা দুইজন থাকলে একজনকে শেষে মরতে হবে, এবং সেটা অবশ্যই নায়ক/নায়িকাকে বাঁচাতে গিয়ে। আসল থ্রিলারটি থাকতো গেজ করার মধ্যে কে মরবে আর কে বেঁচে থাকবে! সিনেমা যেখান থেকেই শুরু হোক না কেন, শেষ হতে হবে অবশ্যই বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে! অল্প বয়সেই বাংলা সিনেমার যে বৈশিষ্ট গুলো আমার চোখে পরেছে সেগুলো হল:
=> কারও সাথে প্রেম হওয়া প্রথম যোগ্যতা হল মারামারি জানতে হবে এবং জীবনে একবার হলেও তাকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
=> নায়ক-নায়িকাকে গান গাইতে পারতে হবে এবং বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নাচতে জানতে হবে!
=> ভিলেনের সাঙ্গ-পাঙ্গদের গুলি করে ছাড়খার করে ফেললে সেটা আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া হয় না, কিন্তু যখন আসল গুন্ডাকে মারতে যাবেন, পুলিশের কাছে মনে হবে আপনি আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন!
=> কিছু কিছু সিনেমার বাজেট এতো কম যে, পরিচালক টাকার অভাবে পুলিশই রাখতেন না, নায়ক গুন্ডার চোদ্দগুষ্টি মেরে শেষ করে ফেলে, আইনের মায়রে বাপ!
=> পুলিশ যদি ঘটনাস্থলে আসতে দেরি করে, এবং নায়ক তথাকথিত ''আইন'' নিজের হাতে তুলেও ফেলে, তাতেও সমস্যা নেই, দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার সাজা মাফ করে দেন এবং সেক্ষেত্রে সিনেমা শেষ হয় আবার সেই কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে!
=> প্রবীর মিত্র বা আনোয়ার হোসেন সিনেমাতে হার্ট এ্যাটাকে করবে সেটা সবাই জানে, কিন্তু সেটার পর মারা যাবেন নাকি প্যারালাইজড হবেন সেটা গেজ করাতে একটা থ্রিলার ছিল ! সিনেমাতে উনারা যখন উত্তেজিত হয়ে যেতেন তখন তাদের দেখে আমারই বেশি ভয় লাগতো, কখন যেন বুকে হাত দিয়ে হার্ট এ্যাটাক করেন!
=> নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস বলেছিলেন, 'Give me blood, and I shall give you freedom!' বাংলা সিনেমার বেলায় এটা ছিল, 'Give me blood, and I shall give you love'! এই কারণে নায়ক-নায়িকার রক্তের গ্রুপ সবসময় একই থাকতে হবে এবং বেশিরভাগ প্রেমের শুরু এই রক্ত প্রদানের মাধ্যমে!
=> যেহেতু তখন ফেসবুক ছিল না তাই সাধারণত নায়কের কোন স্ট্যাটাস থাকতো না!
=> নায়িকাদের একটু ঘনিষ্টভাবে জড়িয়ে শুয়ে পরলেই সে ধরলেই তারা গর্ভবতী হয়ে যায়! পুরো প্রসিডিউর সম্পর্কে তখন অবশ্য তেমন ধারণা ছিল না! পরবর্তীতে সিনেমায় অশ্লিলতা শুরু হওয়ায় বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলাম!
=> চৌধুরী সারন্যাম যাদের তারা অনেক বড়লোক এবং অহংকারী হয়ে থাকে।
=> ‘scoundrel, rascal, bastard' ছাড়া যে ইংরেজীতে আর কোন গালি থাকতে পারে সেটা আমার ধারনাও ছিল না!
=> গরীব হয়েও অনর্গল ইংরেজী বলতে পারাটা নায়িকাকে পটানো কার্যক্রমে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে!
=> ছুরিকাঘাতে মৃত ব্যাক্তির পেট থেকে ছুরি বের করা যাবে না, কারণ আপনি যখন সেটা বের করবেন ঠিক তখনই পুলিশ সেখানে হাজির হবে (এমনিতে তাদের আপনি খুঁজেও পাবেন না)!
=> যখন দেখবেন নায়ক বা নায়িকার বাবা-মা বা বোনকে ভিলেন তুলে কোন জঙ্গল বাড়ীতে নিয়ে যাবে এবং নায়িকার বাবার সব সম্পত্তি লিখে নিতে চাইবে তখন বুঝতে হবে, সিনেমা প্রায় শেষ পর্যায়ে!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫