কম্পিউটার computer শব্দটি গ্রিক কম্পিউট computeশব্দ থেকে এসেছে। compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার computer শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন এক যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত এবং কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব। বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল এবং যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস Abacus নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গননা করার যন্ত্র। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গননা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়।১৬১৬ সালে স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার গণনার কাজে ছাপা বা দাগ কাটাকাটি অথবা দন্ড ব্যবহার করেন। সেসব দন্ড জন নেপিয়ার John Napier এর অস্থি নামে পরিচিত। ১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। ১৬৭১ সালের জার্মান গণিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ প্যাসকেলের যন্ত্রের ভিত্তিতে চাকা এবং দন্ড ব্যবহার করে গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো উন্নত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। তিনি যন্ত্রটির নাম দেন রিকোনিং যন্ত্র Rechoning Mechine। পরে ১৮২০ সালে টমাস ডি কোমার রিকোনিং যন্ত্রের পরিমার্জন করে লিবনিজের যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ এবং ব্যবহারের ধারণা যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি সেটির নাম দেন ডিফারেন্স ইন্জিন Difference Engine। সেই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় ১৮৩৩ সালে তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারনা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্র এবং অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে
পারেননি।
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার (এনিয়াক)
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক এবং পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি এবং আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার Personal Computer বা পিসি PC। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার। কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি Information Technology বা আইটি ITব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এম কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। তার পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার IBM compatible computer তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একই সময় আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট Apple Computer Inc তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ Apple-Macintosh কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে অ্যাপল তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হতো।
এরপর আসে ল্যাপটপ কম্পিউটার ও নোটবুক । ১৯৭১ সালে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সম্ভাবনার সাথে সাথে বহনযোগ্য ব্যক্তিগত কম্পউটারের চাহিদার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। এলান কে ১৯৬৮ সালে জেরক্স পার্কে একটি ব্যক্তিগত, বহনযোগ্য নিজের কাজে তথ্য ব্যবহার করা যায় এমন যন্ত্র হিসেবে কল্পনা করেন এবং তার গবেষনাপত্র ডায়নাবুকে ১৯৭২ সালে বর্ণনা করেন।
আইবিএমের বিশেষ এপিএল মেশিন পোর্টেবল এসসিএএমপি কম্পিউটারটি দেখানো হয় ১৯৭৩ সালে। এই পরীক্ষামূলক যন্ত্রটি আইবিএমের পালম প্রসেসরের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।আইবিএম ৫১০০, প্রথম বানিজ্যিক বহনযোগ্য কম্পিউটার। এটি বাজারে আসে ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এর ভিত্তি ছিল এসসিএএমপি পরিক্ষামূলক যন্ত্রটি।৮ বিটের সিপিইউ ব্যবহৃত হওয়া শুরু করলে, বহনযোগ্য কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অসবর্ন ১, ছাড়া হয় ১৯৮১ সালে, এতে ব্যবহার করা হয় জিলোগ জেড৮০ আর ওজন ছিল ২৩.৬ পাউন্ড (দশ কেজির মত)। কোন ব্যাটারি ছিল না, একটি ৫ ইঞ্চি ১৩ সে.মি. সিআরটি প্রদর্শনী এবং ৫.২৫ ইঞ্চি ১৩.৩ সে.মি দ্বৈত একক ঘনত্বের ফ্লপি ড্রাইভ ছিল। একই বছরে প্রথম ল্যাপটপের আকারের বহনযোগ্য কম্পিউটারের ঘোষণা আসে, এটি ছিল এপসন এইচএক্স-২০। এর মধ্যে এলসিডি প্রদর্শনী, পুনরায় চার্জ দেয়া যায় এমন ব্যাটারি, ক্যালকুলেটর আকারের প্রিন্ট্রার চেসিস ছিল। ট্যান্ডি/রেডিওশেক এবং এইচপি উভয়েই বিভিন্ন নকশার বহনযোগ্য কম্পিউটার উৎপাদন করে।
এলান কে ডায়নাবুক প্রটোটাইপ হাতে
এপসন এইচএক্স-২০
১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে প্রথম ভাঁজ করা যায় এমন ল্যাপটপ দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় ডুলমন্ট ম্যাগনাম ছাড়া হয় ১৯৮১-৮২ সালের দিকে, কিন্তু ১৯৮৪-৮৫ সালের পূর্বে বিশ্বব্যাপি এটি বাজারজাতকরন করা হয়নি। ১৯৯২ সালে জিআরআইডি বা গ্রিড কমপ্যাস ১১০০ ছাড়া হয়। এটি নাসা ও সৈনিকদের কাজে ব্যবহৃত হত। গ্যাভিলান এসসি, ১৯৮৩ সালে বাজারের আসে, যা প্রস্তুতকারক ল্যাপটপের মধ্যে প্রথম হিসেবে অভিহিত করে। ১৯৮৩ সালের পর নতুন ইনপুট ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়, যার মধ্যে ল্যাপটপেরও ইনপুট যন্ত্রাংশ ছিল, যেমন টাচপ্যাড (গ্যাভিলান এসসি), নির্দেশক কাঠি (আইবিএম থিঙ্কপ্যাড ৭০০, ১৯৯২) এবং হাতের লেখা সনাক্তকরন (লিনাস রাইট-টপ, ১৯৮৭)। এসময় কিছু সিপিইউ এমনভাবে বানানো হয় যাতে এগুলো কম বিদ্যুত শক্তি ব্যবহার করে, ফলে ব্যাটারির স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। এবং কিছু ল্যাপটপের প্রস্তুত নকশায় কাজে সহায়তা করার জন্য কিছু সক্রিয় শক্তি ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যও ছিল যেমন ইন্টেল স্পিডস্টেপ এবং এএমডি'র পাওয়ারনাও ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য।১৯৮৮ সাল নাগাদ প্রদর্শনী ভিজিএ রেজুলেশনে পৌছায়। উদাহরনসরূপ উল্লেখ্য করা যায় কমপেক এসএলটি/২৮৬। এবং রঙিন প্রদশর্নীগুলোর প্রচলন শুরু হয় ১৯৯১ সালের দিকে, ২০০৩ সালে ১৭" প্রদশর্নী আসার আগে পর্যন্ত, রেজুলেশনে এবং প্রদশর্নীর আকারে ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে। এসময় হার্ডড্রাইভের ১৯৮০ সালের শেষের দিকে প্রস্তুতকৃত ৩.৫" মাপের ড্রাইভের ধারাবাহিকতায় ব্যবহার শুরু হয়। এক সময় ২.৫" ড্রাইভ ল্যাপটপে সাধারনভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ২০০০ দশকের শুরু থেকেই অপটিক্যাল ড্রাইভগুলোর ব্যবহার হতে থাকে যেমন সিডি রম, রাইটেবল সিডি রম, পরে ডিভিডি রম, রাইটেবল ডিভিডি রম, তারপরে ব্লু-রে ড্রাইভ।
এবার সেই ল্যাপটপ বদলে রোলটপ আসার পালা । ইতি মধ্যে টাচ প্রযুক্তি OLED স্ক্রিন এবং ওয়্যারলেস প্রযুক্তির এক অপূর্ব মিশেল তৈরি করেছেন জার্মানির ওরকিন ডিজাইন। কনসেপ্টটির নাম দেয়া হয়েছে রোলটপ যা একই সাথে ট্যাবলেট পিসি, নোটবুক কিংবা ফ্লেক্সিবল মনিটর হিসেবে কাজ করবে।
এটি মূলত একটি ল্যাপটপ যার মূল অংশ একটি সিলিন্ডার এবং ফ্লেক্সিবল মনিটর। মনিটরটি সিলিন্ডারের সাথে পেচিয়ে ফেলা যায় আবার প্রয়োজনমত সিলিন্ডার থেকে মনিটরটি রোল করে বের করে ফেলা যায়। ফ্ল্যাট অবস্থায় মনিটরটী ১৭” এবং টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তির। প্রয়োজনে এই মনিটরের একটি অংশ ভাজ করে একে ল্যাপটপের আকৃতি দেয়া যায় তখন এর একটি অংশ হয় অন স্ক্রিন কি বোর্ড এবং বাকি অংশ একটি ১৩” মনিটরের কাজ করে। বাকা অবস্থায় সাপোর্ট দেবার জন্য মনিটরের পেছনে স্ট্যান্ড ও রয়েছে। তাছাড়াও মনিটরের পাশ থেকে একটি স্টাইলিশ ডিজিটাল পেন বের করা যায় যা টাচ মনিটরে যেকোন ড্রয়িং এর জন্য খুবই কার্যকর।
তথ্যসংগ্রহ ইন্টারনেট থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২১