অবাক করার মতো কথা হলেও কথা সত্যি যে চুরি করেও পৃথিবীর ইতিহাসে প্রচণ্ড বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন কিছু মানুষ। এমনই কিছু মানুষকে নিয়ে আমার এ পোস্টটি। তারা কয়েকজন চুরির মাধ্যমে অদ্ভুত আর মজাদারভাবে অমর হয়ে রয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।
যিনি সোনার হাতের অধিকারী ছিলেনঃ
রাশিয়ার আর দশটা সাধারণ মেয়েদের মতই ছিলেন সনকা আর সবার কাছে। কিন্তু এই ভালোমানুষীর আড়ালেই একের পর এক চমৎকার সব চুরি করে বেড়াতেন তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সনকা দ্যা গোল্ডেন হ্যান্ড নামে পরিচিত এই নারী নানা রকম মূল্যবান পাথর চুরি করতেন। কখনো বানরের মাধ্যমে এবং কখনো লুকোনো পকেট অথবা জামার ভেতরে বয়ে বেড়াতেন সেগুলোকে। নিজের হাতের নখ সব সময়ই লম্বা রাখতেন সনকা। নখের নিচে তিনি বহন করতেন চুরি করা নানা রকম ছোট ছোট মূল্যবান পাথর। তবে সনকার সবচেয়ে অভিনব একটি চুরি হচ্ছে গহনা চুরির ঘটনা রিজেক্টেড প্রিন্সেস। চুরিটি তিনি করেছিলেন একটি গহনার দোকান থেকে। দোকানে গিয়ে তিনি অনেক দামি দামি নানা রকম গহনা বাছেন,তারপর দোকানদারকে বলেন তার বাসায় সেগুলোকে নিয়ে আসতে। সেখানেই টাকা পরিশোধ করবেন তিনি। বাসায় তার স্বামী আছেন। যিনি পেশায় ডাক্তার। তিনিই পুরো টাকা শোধ করেন। দোকান থেকে বেরিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যান সনকা আর ডাক্তারকে বলেন তার স্বামী একটু পরেই কিছু গহনা নিয়ে আসবে। তিনি মারাত্মক অসুস্থ এবং যাকে দেখেন তার কাছেই গহনা কিনতে ও বেচতে চান। ডাক্তার যেন তাকে পাগলাগারদে ভরে দেন। স্বামীর চিকিৎসা বাবদ টাকাও পরিশোধ করেন সনকা ডাক্তারের কাছে। যথাসময়ে গহনা নিয়ে দোকানদার আসে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় তাকে সনকা। দোকানদার গহনা দিয়ে টাকা চাইলে ডাক্তার মানসিক রোগী ভেবে হাসপাতালে ভরে দেয় তাকে। পুরো ব্যাপারটি সবার চোখের সামনে আসে এবং সত্যতা উন্মোচন হয় অনেক দিন পরে। তখন অবশ্য সনকা আর কারো হাতের নাগালে ছিল না।
ভিনসেনজো পিপিনোঃ
ইতালির এই বিখ্যাত চোরের সঙ্গে রবিন হুডের বেশ সাদৃশ্য ছিল। নিজের শহরকে বড্ড ভালো বাসতেন পিপিনো। শহরের কারো কোনো ক্ষতি যেন না হয় তার কাজের মাধ্যমে সেটা খুব ভালো করে নজর রাখতেন । ভেনিসে জন্ম হয়েছিল পিপিনোর। নিজের কাজ খুব সুন্দরভাবে করতেন তিনি। কখনো কোথাও কোনো নোংরা করতে না। বলা হয় কোনো চিনির বাটি চুরি করতে গেলেও চিনিটুকু মেঝেতে বা ঘরের কোথাও না ফেলে বাইরে ফেলতেন তিনি যাতে করে ঘর অপরিষ্কার না হয়। কেবল বড়লোকদের ঘরেই চুরি করতেন পিপিনো। গরিবদের ওপর চাপ পড়বে এমন কিছু চুরি করতেন না তিনি। এই যেমন ভেঙে যাওয়া কিছু অথবা মেরামতযোগ্য জিনিস সব সময়ই রেখে দিতেন পিপিনো। যাতে করে মেরামতকারীর টাকাটা মার না যায়। কোনো ধরনের খুন-খারাবি পছন্দ করতেন না তিনি।তিনি সব সময় ব্ল্যাকমেইল অথবা শোরগোল এড়িয়ে চলতেন। নিজের দেশের সম্পদ নিজের দেশের ভিতরেই রাখতে পছন্দ করতেন তিনি। নিজের দেশের ছবি চুরি করলে সেটাও দেশের কারো কাছেই বেচতেন কিংবা যার থেকে চুরি করেছেন তাকেই টাকার বিনিময়ে ফেরত দিয়ে দিতেন। তবে পিপিনোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চুরিটা হয়েছিল ১৯৯১ এর ৯ই অক্টোবর। সেদিন তিনি কিছু পর্যটকের সঙ্গেই ডজের প্রাসাদে ঢোকেন, আর সবার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যান একটি জেলের ভেতরে। পরে রাতের বেলা পাহারাদারদের সময় পরিবর্তনের সময় এলে আস্তে করে বেরিয়ে ম্যাডোনা কোল বাম্বিনো নামক ছবিটি দেওয়াল থেকে চুরি করে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান।
ভিনসেনজো পেরুজিয়াঃ
ইতিহাসের পাতায় একটা চোরের নাম কম থেকে যেত যদি না পেরুজিয়া সেদিন তার এই চুরিটা করত। ১৯১১ সাল সেটা। পেরুজিয়া ল্যুভরের কাজ ছেড়েছেন অনেক দিনের কথা তখন। তবুও ল্যুভরের কর্মীদের পোশাকটা রয়ে গিয়েছিল তার কাছে। আর সেটাকে ব্যবহার করেই চরম একটি চুরি করার চেষ্টা চালান এই ইতালির মানুষটি। পরের দিন ছিল ল্যুভরের বন্ধ থাকবার দিন। সেটা মাথায় রেখেই আগের দিন জাদুঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। সব অলিগলি জানা ছিল তার। আর এর ফলে লুকোতে কোনো অসুবিধা হয়নি । চুপ করে এমন একটি জায়গায় লুকিয়ে গেলেন পেরুজিয়া যেখান থেকে তাকে কেউ খুঁজে বের করতে পারে না। আর তার পরের দিন সেই জায়গা থেকে বেরিয়েই প্রথম নিজের আকাক্সিক্ষত ছবির ঘরটির কাছে চলে আসলেন তিনি। আর সেটি ছিল বিখ্যাত লিও নার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা ছবিটির ঘর। আশপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে চট করে ছবিটা সরিয়ে ফেলেন পেরুজিয়া আর লুকিয়ে ফেরেন নিজের পোশাকের নিচে। তখন পর্যন্ত সবটা ঠিকই ছিল। বিপত্তি বাধল বেরোবার সময়। ভুলেই গিয়েছিল পেরুজিয়া যে বাইরের দরজাটা বন্ধ থাকে সে সময়। কপাল ভালো সে সময়ই একজন সীসা কর্মকার যাচ্ছিলেন পাশ দিয়ে। তিনিই দরজা খুলে ল্যুভরের কর্মীর পোশাক পরা পেরুজিয়াকে বেরোতে সাহায্য করেন। ব্যস! খুব সহজেই এভাবে চুরি করে ফেললেন পেরুজিয়া বিখ্যাত মোনালিসার ছবিটি আর হয়ে গেলেন ইতিহাসের বিখ্যাত একজন চোর।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫