মলি যখন কাজীর সামনে রাখা কাগজটাতে সই করার জন্য কলমটা ধরল, হাতটা থরথর করে কাঁপছিল তার। দু`হাত দিয়েও শক্ত করে আটকাতে পারছিল না সেটা। আঁকাবাকা করে যখন কোনমতে `মলি' শব্দটা লিখল কাগজটায়, মনে হল আজকেই লেখায় হাতে খড়ি হয়েছে তার। চোখ থেকে একফোঁটা পানি গিয়ে পড়ল ঠিক শব্দটায় । মলি যেন সদ্য স্নান করে দাঁড়াল কাজীর কাগজটির ওপর। লেখাটির ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া কলমের কালি গুলোকে মনে হচ্ছিল মলির মাথার সিক্ত চুল চুইয়ে পানি ঝরছে।
পাশে দাড়িয়ে বাবা মজিদ সরকার মেয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন , `এবার তুমি মুক্তি পেলে মা। যাও, যেখানে যেতে চাও।'
মলি পিছন ফিরে বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।
আজ মলিকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী সহিদুলও। দুই বছরের বিবাহিত জীবনের অবসান করে। মুক্ত করে দিল বাবাও। কিন্তু মলি কাঁদছে। এ মুক্তি তাকে সুখ দেয়নি। যেমন সুখ দেয়নি তার কিশোরী বিয়ের বন্দিত্ব। তার মনে হল কত নিষ্ঠুর এই মানুষগুলো! তারা প্রয়োজনে যেমন নারীকে খাঁচায় বন্দি করে ফেলে, ছেড়ে দিতেও তাদের কোন বাঁধে না। স্বামী সহিদুল যখন তার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে তিনবার উচ্চস্বরে তালাক! তালাক! তালাক!উচ্চারন করল, মলি মুখ ফিরে শেষবারের জন্য স্বামীর দিকে একবার তাকাল । তার চোখে ছিল প্রচন্ড ঘৃনার আগুন। সে আগুনের আচ গিয়ে যেন পুড়িয়ে ফেলতে চাইল পুরুষতন্ত্রের ভিতকে।