somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাগ্রচীত্তে নামায আদায়ের গুরুত্ব!!

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নামাজ ইসলামের মূল ভিত্তি। সকল এবাদতের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। রাসুলে কারিম (সাঃ) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কারো দ্বার দেশ দিয়ে প্রবাহিত স্বচ্ছ সলীলা স্রোতস্বীনির মতো। যাতে গৃহস্বামী দৈনিক পাঁচবার গোসল করে থাকে। এইটুকু বলার পরে তিনি সাহাবায়েকেরাম (রাঃ)দিগকে প্রশ্ন করেন, যে ব্যক্তি দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তার শরীরে কিছু ময়লা থাকতে পারে কি? সাহাবায়েকেরামগন উত্তর দিলেন, না। তখন তিনি বলেন পানি যেমন ময়লা পরিষ্কার করে, এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তদ্রুপ গোনাহ বিদূরীত করে।

তিনি বলে নামাজ ধর্মের স্তম্ভ। যে নামাজকে ত্যাগ করেছে, সে ধর্মকে বিনাশ করেছে। রাসুল (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি উত্তম রুপে পবিত্রতা অর্জন করে নামাজ আদায় করে, রুকু ও সেজদা পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করে এবং হৃদয়ে যথেষ্ট নম্রতা ও দীনতাকে স্থান দেয়, তার নামাজ উজ্জ্বল হয়ে আরশ পর্যন্ত পৌছে এবং নামাজীদীগকে লক্ষ্য করে বলে, যেরুপ যত্নের সাথে তুমি আমাকে সম্পন্ন করেছ, আল্লাহ তদ্রুপ যত্নে তোমাদিগকে রক্ষণাবেক্ষন করুন।

আর যে ব্যক্তি ঠিক সময়ে নামাজ পড়ে না, যথারীতি পবিত্রতা অর্জনে গাফিলতি করে, রুকু সেজদায় পূর্ণ নম্রতা অবলম্বন করে না, তার নামাজ কৃষ্ণ বর্ণ ধারণ করে আসমান পর্যন্ত উত্থিত হয় এবং নামাজীকে সম্বোধন করে বলে তুমি যেমন আমাকে নষ্ট করলে, আল্লাহ তদ্রুপ তোমাকে বিনষ্ট করুন। যতক্ষন আল্লাহ চান, ততক্ষন নামাজ এভাবে অভিসম্পাত করতে থাকে। তৎপর পুরাতন ছিন্ন বস্ত্রের ন্যায় পুটুলি বেধে উক্ত নামাজকে নামাজীর মুখের উপর নিক্ষেপ করা হয়।

নামাজ এমন একটি আমল, যার দুটি রুপ আছে। জাহেরী অর্থাৎ বাহ্যিক রুপ এবং বাতেনী অর্থাৎ গুপ্ত রুপ। জাহেরী বা বাহ্যিক রুপ নামাজের দেহ স্বরুপ এবং বাতেনী বা গুপ্ত রুপ হলো নামাজের রুহ স্বরুপ। শরীর পাক পবিত্র অবস্থায় পাক পোশাক পরিধান করে পবিত্র স্থানে তাকবির তাহরিমা বেঁধে সঠিক নিয়মে সালাত আদায় করাই এর বাহ্যিক বা জাহেরী রুপ। আর একটি রুপ হলো বাতেনী বা গুপ্ত রুপ। প্রত্যেক এবাদতেরই একটি বাতেনী রুপ বা রুহ আছে। নামাজে রুহ না থাকলে তা মৃত মানুষের প্রাণহীন দেহের ন্যায়।

আল্লাহ বলেন আমার স্মরণে নামাজ পড়ো। রাসুলে কারিম (সাঃ) বলেন, এমন অনেক নামাজী আছে, যারা পরিশ্রম ও ক্লান্তি ছাড়া নামাজ হতে আর কিছুই পায় না। এর কারণ এই যে, তারা নিজেদের শরীর নামাজে রাখে বটে, তাদের মন একেবারেই উদাসীন থাকে। হুজুরে পাক (সাঃ) বলেন, এমন বহু নামাজী আছে, যাদের নামাজের এক-দশমাংশ বা এক-ষষ্ঠাংশ লিখিত হয়। অর্থাৎ নামাজের যে অংশে আল্লাহ তায়ালার দিকে মন নিবিষ্ট থাকে কেবল সেই অংশই লিখিত হয়। হুজুর (সাঃ) বলেন যে নামাজে নামাজীর মন আল্লাহার দিকে আকৃষ্ট হয় না, সেই নামাজের দিকে আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টিপাত করেন না।

নামাজ আদায়ের প্রস্তুতীকালে হযরত আলী (রাঃ)এঁর শরীরে কম্পনের সৃষ্টি হতো। তিনি বলতেন এমন এক আমানতের বোঝা বহনের সময় এসেছে, যা সাত তবক যমীন ও সাত তবক আসমান বহন করতে সক্ষম হয় নাই।

হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) বলেন, নামাজের মধ্যে যার মনে বিনয় দীনতা না আসে, তার নামাজ সহীহ হয় না। হযরত হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, একাগ্রচীত্ততার সাথে যে নামাজ আদায় করা হয় না, তা আজাবের নিকটবর্তী। হযরত ইবনে জাবাল (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নামাজে থেকে স্বেচ্ছায় ডানে বামের লোককে চিনবার চেষ্টা করে, তার নামাজ হয় না।

হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ) হযরত ইমাম শাফেঈ (রঃ) এবং অধিকাংশ আলেমগন যদিও বলেছেন যে, তাকবীরে তাহরিমা বলবার সময়ে মন আল্লাহর দরবারে হাজির থাকলে এবং অন্যান্য চিন্তা হতে মন মুক্ত রেখে নামাজ আরম্ভ করতে পারলেই নামাজ হয়ে যাবে, কিন্তু সর্ব সাধারণের জন্য নিতান্ত আবশ্যক বোধে তাঁরা এই ফতোয়া দিয়েছেন। কারণ বর্তমানে আমরা জন সাধারণ নিতান্তই গাফেল। আর নামাজ হয়ে যাবে বলতে তাঁরা যে ফতোয়া দিয়েছেন, তার অর্থ এইরুপ যে, উক্ত নামাজী শরীয়তের বিচার হতে অব্যহাতি পাবে। কিন্তু যে নামাজে নামাজীর মন আল্লাহর দরবারে অনবরত হাজির থাকে কেবল সেই নামাজই আখেরাতের সম্বল হতে পারে।

মোট কথা তাকবীরে তাহরিমার সময় আল্লাহর দরবরে মন হাজির রাখতে পারলে কেয়ামতের দিন এমন নামাজীর অবস্থা একবোরে বেনামাজীর তুলনায় ভালো হবে বলে আশা করা যায়।কিন্তু তার অবস্থা বেনামাজীর চেয়ে মন্দও হতে পারে। কারণ যে ভৃত্য প্রভুর সেবায় হাজির হয়ে গাফিলতি করে, বেয়দবী করে, প্রভু নিশ্চই অনুপস্থিত ভৃত্যের তুলনায় ঐ উপস্থিত বেয়াদব ভৃত্যের উপরেই বেশী রাগান্বিত হবেন ও বেশী শাস্তি দিতে পারেন। এই জন্যেই হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বলেছেন- একাগ্রচীত্ততার সাথে যে নামাজ আদায় করা হয় না, তা আযাবের নিকটবর্তী ও সাওয়াবের দূরবর্তী।

হাদিস শরীফে উক্ত আছে, যে নামাজী নিজ নামাজকে বাজে কল্পনা ও চিন্তা থেকে রক্ষা করে না, সে আল্লাহর দরবার হতে দূরবর্তী হওয়া ব্যতীত উক্ত নামাজে কোন ফল পায় না।

প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত যে নামাজে নামাজীর মন আল্লাহর দরবারে হাজির থাকে, কেবল সেই নামাজই পূর্ণ ও সজীব।

(ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) কর্তৃক রচিত কিতাব কিমিয়ায়ে সাদাত হতে উদ্ধৃত)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×