somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বা শিক্ষা দেয়ক-এর সমতা: একটি যুক্তিপূর্ণ দাবি

২৬ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটেছে, এবং বর্তমানে দেশে বেশ অনেকগুলো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যদিও শিক্ষার গুণগত মানের দিক থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষা দেয়ক বা টিউশন ফি। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি সবক্ষেত্রেই অনেক বেশি। এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে উভয় প্রকার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি সমান হওয়া উচিত, কেননা এই সমতা শিক্ষার ন্যায়সঙ্গত প্রবাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

আর সমতা বলতে, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ফি বাড়ানোকে বোঝানো হয় না। সমতা বলতে বোঝায়, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফি কমিয়ে ব্যবসায়িক বা মুনাফা লাভের প্রক্রিয়ার অবসান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হতে পারে না।

যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শর্তই হলো, সকল প্রকার ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত অনুদান নিয়েই শুরু করা—শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা না। অতিমূল্যবান যে ধারণাটা বাংলাদেশে অপ্রচলিত সেটা হলো, সরকারী হোক বা বেসরকারী হোক যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার নীতি ও অর্থনীতি, দুটোই, সর্বদা সার্বজনীনভাবে সাদৃশ্যময় হতে হয়।


কেন টিউশন ফি সমান হওয়া উচিত?

১. শিক্ষার সমঅধিকার

শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার এবং প্রতিটি নাগরিকের জন্য সহজলভ্য হওয়া উচিত। তবে টিউশন ফি-এর পার্থক্য শিক্ষার এই মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। যখন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি বেশি থাকে, তখন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হারান। টিউশন ফি সমান হলে শিক্ষার্থীরা তাদের সামর্থ্য এবং পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, যা শিক্ষার সুযোগকে সমানভাবে বিতরণ করতে সহায়তা করবে।

২. শিক্ষার মান উন্নয়ন

টিউশন ফি সমান করার ফলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়ই উচ্চ টিউশন ফি নেয় তাদের অবকাঠামো এবং শিক্ষার মানের উন্নতির অজুহাতে। তবে যদি টিউশন ফি সমান করা হয়, তবে শিক্ষার্থীরা সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষার মানের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে পারবে। এর ফলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিক্ষার মান উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ হবে।

৩. আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণ

বাংলাদেশের সমাজে আর্থিক বৈষম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। উচ্চ টিউশন ফি দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি সমান করা হয়, তবে এই বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের আর্থিক অবস্থার চেয়ে মেধার ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে।

৪. সরকারের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে তারা টিউশন ফি-এর নির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা করতে না পারে। টিউশন ফি সমান করার প্রক্রিয়া সরকারের কাছে একটি সুযোগ তৈরি করবে শিক্ষার ক্ষেত্রকে আরও সুসংহত ও ন্যায়সঙ্গত করার। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বা আর্থিক সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে সরকার এই পরিবর্তনকে সমর্থন করতে পারে।

৫. বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের ব্যয় কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে যাতে তারা কম টিউশন ফি-তেও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করতে সক্ষম হয়। অনাবশ্যক ব্যয় কমিয়ে, অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে না গিয়ে, তারা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সাশ্রয়ী শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

উপসংহার

সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি সমান করার দাবি সময়ের প্রয়োজন। এটি শিক্ষার সাম্যতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াবে, শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটাবে এবং আর্থিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে। তাই সরকারের উচিত এই বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার আলো সমাজের প্রতিটি স্তরে সমানভাবে পৌঁছাতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গেলো বসন্ত এলো বৈশাখ এলো নতুন বাংলা বছর ১৪৩২

লিখেছেন শায়মা, ০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০


রঙে রঙে রঙিন বসন্ত ফুরোতে না ফুরোতেই চলে এলো বাঙ্গালীর প্রানের উৎসব নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া পহেলা বৈশাখ। সেই উৎসব ঘিরে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। ব্যস্ততায় কাটলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির শহরে নিঃশব্দ প্রতিক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৮



নিঃশব্দ শূন্যতার ভেতর দাঁড়িয়ে
আমি খুঁজি এক হারিয়ে যাওয়া তোমায়
নগরজীবনের কোলাহলে চাপা পড়ে
তোমার কণ্ঠস্বর যেন কোন প্রাচীন সংগীত,
শুধু আমার স্মৃতিতে বাজে ক্ষীণ তরঙ্গে।

হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে যাই অলিগলি
যেখানে একদা ছায়ার আড়ালে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামীর তরুণ রাষ্ট্র নায়কদের জন্য ড. ইউনূস হতে পারেন অনুকরণীয় আদর্শ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৪০


আগামীর বাংলাদেশে আমরা কি করাপ্টেড অথবা বাবার উত্তরাধিকারী কাউকে রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে ক্ষমতায় দেখতে চাই ? অবশ্যই না ! বাংলাদেশের তরুণেরা চায় ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক হবে ইয়ং এবং ডায়নামিক চরিত্রের অধিকারী। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Natural Justice.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৯

Natural Justice.....

Natural Justice বা প্রকৃতির বিচার কিম্বা রিভেঞ্জ অব ন্যাচার বলে যে একটা কথা আছে, সেই ব্যাপারটা গভীরভাবে অনুধাবন করার একটা বাস্তব উদাহরণ আশা করি সবার সামনেই এখন ভিজিবল।

আমরা অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাল ভারত

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৩:৫২


পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের পাহাড়ি অঞ্চলের কাছে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারত। এ হামলায় এক শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×