somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে রাজাকার।

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৭ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুখ্যত অমনিবাসের প্রিয় থাইকা, ভয়ংকর জেনারেলের বলগ। সেহানথোন আনিসুল নামের এক পোলার লেখা উদ্ধার করলাম। পোলাটা আমার আস্তানায় বইয়া এই লেকাটা লেকছিল মনে লয়।

আগে পড়া তয় কি অইছে। খানা তো কাইলও খাইছেন, তাই বইল্লা আইজ খাইবেন না?

ছহি রাজাকারনামা

আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে রাজাকার। নিশ্চয়ই রাজাকারগণের জন্যে অতীতের চাইতে ভবিষ্যতকে উত্তম করিয়া সৃজন করা হইয়াছে। অতএব তোমরা তোমাদের প্রভু পাকিস্তানের প্রশংসা করো; নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু পাকিস্তানীরা ক্ষমাশীল।

যখন তোমাদিগকে বলা হইবে নেতা নির্বাচন করো, তখন তোমরা সেই ব্যক্তিকেই নির্বাচন করিবে, যাহার রাজাকারগিরি প্রমাণিত। আর তাহার মতো মূর্খ কে আছে, যে রাজাকার চিনিয়াও তাহাকে সম্মানিত না করিলো, আখেরে ইহারাই হইবে অভিশপ্ত। ইহাদের জন্যে সুকঠিন দারিদ্র্য অপেক্ষা করিতেছে। আর যে ব্যক্তি রাজাকার চিনিলো, এবং তাহাকে সম্মান করিলো, এবং তাহার পদাঙ্ক অনুসরণ করিলো, ইহাদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে সুমিষ্ট ফল, সুন্দরী রমণী আর সুদর্শন পুরুষ।

অনন্তর তোমাদের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠীর সৃষ্টি হইবে যাহারা রাজাকারী রজ্জু উত্তমরূপে ধারণ করিবে, আর যাহারা রাজাকারী তরিকা আদমদিগের মধ্যে উত্তমরূপে প্রচার করিবে। যাহারা রাজাকার হিসাবে বাহির হয়, তাহারা শান-শওকতের পথে চলে।

সেই ব্যক্তিই উত্তম রাজাকার, যে বিবাহ করিবে একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি, যেরূপ সে ইচ্ছা করে আর তাহার জন্যে বৈধ করা হইয়াছে ডান হাতের অধিকারভূক্ত দাসীদের, আর তাহারা ভোগ করিতে পারিবে বাঙ্গালী রমণীগণকে, অপিচ তাহাদের সহিত আদল করিবার দরকার হইবে না। স্মরণ রাখিও, মালেগণিমতগণের মহিত মিলিত হইবার পথে কোনরূপ বাধা থাকিলো না।

আর মনে রাখিবে, যে রাজাকারী পথে বাহির হয়, সে একা নহে, সৌদি-মার্কিনীরা তাহার সঙ্গে রহিয়াছে। সেই ব্যক্তি হতভাগ্য, যে রাজাকার হইতে সাহস করিলো না এবং মনে মনে বলিলো যে, আমি রাজাকার হইবো না, কেননা পশ্চাতে লোকে আমাকে গালি দিবে। আর প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার একেকটি আঙুলের জন্যে রহিয়াছে দশ দশটা পুরস্কার, আর যে ব্যক্তি একজন মুক্তিযোদ্ধার ডানপাঞ্জা কাটিতে সক্ষম হইলো, তাহার বরাতে ৭০ গুণ বেশি পেট্রোডলার লেখা হইলো। নিশ্চয়ই তোমাদের জন্যে রাজাকারী কাজের জন্যে পুরস্কার রহিয়াছে।

আর তোমরা কি অতীত হইতে শিক্ষাগ্রহণ করিবে না? গ্যালিলিও নামের এক পাপিষ্ঠ অতীতে সত্য অস্বীকার করিয়াছিল, এবং সে কি প্রাপ্ত হয় নাই চরম শাস্তি? আর রাজাকারগণ যাহাকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে নিজ হস্তে শাস্তি দেন। আঙুল কাটিয়া ফেলা হইতে শুরু করিয়া মুণ্ডু কাটিয়া ফেলা - বিপথগামীদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে ভয়ঙ্কর শাস্তি। আর তোমরা কি সেই গোষ্ঠীর বংশধর নহ, যাহারা অতীতে তিরিশ লক্ষ বেদ্বীনকে কতল করিয়াছে? নিশ্চয়ই আমগাছ হইতে আম এবং রাজাকার গোষ্ঠী হইতে রাজাকার উৎপন্ন হয়।

অচিরেই দেশে নিখিল পাকিস্তান রাজাকার সংসদ গঠিত হইবে। আর রাজাকার কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে সকল লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছাড়িয়া দেওয়া হইবে। আর রাজাকার প্রার্থীদের জন্যে চাকুরির বয়সসীমা আটত্রিশ বছর করা হইবে। এবং অবস্থা অচিরেই এইরূপ হইবে যে, রাজাকার সার্টিফিকেট নকল করিয়া লোকে রাজাকার সাজিতে থাকিবে। তখন সুন্দরী রমণীগণ সেনাকর্তাদের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইহবার বদলে রাজাকার বরের স্বপ্নে ঘামিতে থাকিবে। কন্যাবৃন্দের মাতাগণ রাজাকার জামাতার গর্বে পাড়া মাতাইবে।

অচিরেই কাহার কল্লা থাকিবে কাহার থাকিবে না, তাহা নির্ধারণের দায়িত্ব ‘ছাই-দি’ ‘ছা-য়েব’দের হস্তে অর্পিত হইবে। আর যে ব্যক্তি দাড়িপাল্লায় ভোট দিলো, সে-ই মাসুম শিশু হইয়া গেল। ব্যালট পেপার তাহার ডান হাতে আসিবে। ব্যালট পেপার দেখাইয়া স্বর্গে প্রবেশ করা যাইবে। যে ব্যক্তি রাজাকার তহবিলে চাঁদা দিলো, সে-ই ৭০ গুণ ফেরত পাইলো। চাঁদার রসিদ দেখাইলে স্বর্গের দুয়ার খুলিয়া দেওয়া হইবে। আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা করো, আর রাজাকারদের সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই রাজাকারদের তহবিল পরিপূর্ণ। তাহারা তোমাদিগের মাসোহারার ব্যবস্থা করিয়া দিবে। এবং তোমরা রাজাকার মাহাত্মে বিশ্বাসীগণের নিকট জানাইয়া দাও যে, তাহাদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে উত্তম শরাব।

আর তোমরা মওদুদীবাদ উত্তমরূপে কল্বের মধ্যে গাঁথিয়া ফেলো। তিনিই শেষ দার্শনিক, ইহার পর আর কোনো দার্শনিক আসিবে না। অতপর তাহার দেওয়া ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

অচিরেই রাজাকার দেশের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হইবে, এবং অচিরেই সকল কুফরি মতবাদ প্রচার ও শিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষিত হইবে। আর তখন তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, বলো, তোমাদের দেশ কি? তোমাদেও মধ্যে যাহারা খাঁটি রাজাকার, তাহারা বলিবে, কেন, পাকিস্তান? পুনরায় তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তোমাদের দলপতি কে? তোমাদের মধ্যে যাহারা কল্যাণময়, তাহারা বলিবে, কেন, মওদুদী? পুনরায় তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তোমাদের দলপতি কে? তোমাদের মধ্যে যাহারা ইহলোকের ভালো বোঝে, তাহারা জবাব দিবে, কেন, গোলাম আযম? আর তাহাদের জন্যে সুসংবাদ। তাহাদের জন্যে অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছেন, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না।

অনন্তর সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের, যাহারা রক্ত হইতে তখ্ত কায়েম করে।
(আনিসুল হক)
৩১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×