সময়কাল -২০০০, মাস দুয়েক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করে ইস্তফা দিলাম কারন একটাই বাবা, মাকে প্রতিশ্রুতী দেয়া মার্স্টাস কমপ্লিট করা। সারাদিন বিজ্ঞাপন কালেকশনের জন্য টই টই করে প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে রাতে পড়ায় মন বসতো না। অবশেষে পত্রিকার সার্কুলার অনুযায়ী আবদেন করে চাকুরী পেয়ে গেলাম মনোয়ারা হসপিটাল, সিদ্ধেশরীতে পেসেন্ট এডমিশন বিভাগে।
পার্ট টাইম জব তাই বেশ ভালো লাগছিলো, যাক বাবা পড়ালেখা , থিয়েটার নাটক, মিডিয়া টুকটাক কাজ সবই একসাথে চালানো যাবে। চলছিলো বেশ ভালোই কিন্তু পেসেন্ট এডমিন বিভাগে কাজের চাপটা মাসখানেক পরই টের পেলাম। নতুন বলেই কিনা কাজের দায়িত্ব তেমন পরেনি, পুরাতন হয়ে গেছি এখন দায়িত্ব নিতে হবে। নে বাবা সব বুঝি এবার চুলোয় গেল! ভেবে পাই না তাহলে কি মার্স্টাস পাশ করা হবে না? থিয়েটারে সময় দিতে কি পারবো না? গড় গড় করে কঞ্জুস নাটকের হিরোর ক্যারেক্টর মুখুস্ত করে যাচ্ছি, বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার স্যাপার। আমাদের তিন জনকে এই ক্যারেক্টর মুখস্ত করতে দিয়েছেন লোক নাট্য দলের অধিপতি লিয়াকত আলি লাকি ভাই । প্রয়াত মডেল, অভিনেতা অলি, সুমন (বর্তমান কুঞ্জুসের হিরো) এবং আমি । আমি শুধু ভাবি কি হবে রে তোর? আমিও চাকুরীতে মনযোগ দিতে পারছি না, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ব্যপারটা বুঝতে পারলেন, আমাকে ডাকলেন এবং সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করলেন, আমিও অবলিলায় সব খুলে বললাম, ওনারা বললেন আপনি আমাদের হসপিটালে যে কোন বিভাগে কাজ করতে পারেন, মানে যেখানে ভালো লাগে। খেয়াল করে দেখলাম মেডিসিন বিভাগে গেলে ভালো হবে, ওখানের আগেই সবার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছেলো। শুরু হলো মেডিসিন বিভাগের চাকুরী। কাজ থাকলে ম্যানেজ করে চলে যেতাম, বাহ্ ভালোই যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দলের অধিকর্তা আমার অভিনয় পছন্দ করা শুরু করলেন আমার প্রতিযোগী লাইফবয়ের মডেল প্রয়াত অলি । তিনি আমাকে অনেকে এগিয়ে রাখলেন কিন্তু আমি হতাশ স্টার মডেল রেখে কি আমাকে দিয়ে হিরোর ক্যারেক্টর করাবেন? আমাদের থিয়েটারের আরেক মডেল বন্ধু আকাশের পরামর্শে আমিও ফটোসেশন করে ছবি জমা দিচ্ছি এজেন্সিগুলোতে। বেশ রেসপন্সও পেলাম এবং প্রথম কাজ করলাম বার্জার পেইন্ট এর টিভিসিতে, বেশ আমিও মডেল বনে গেলাম। ওরা টিভিসিটা প্রচুর চালিয়েছে তাই সবাই আমাকে চিনতে শুরু করলো। একদিন মোটা করে এক ভদ্রলোক মেডিসিন বিভাগে এসে গল্প শুরু করলো, আমার বাড়ি কোথায় কি করছি ইত্যাদি ইত্যাদি। ভদ্রলোকের বাসা হসপিটালের কাছাকাছি হওয়ায় ঔষধ কেনার জন্য ওনাকে প্রায়ই দেখতাম এবং হালকা শুভেচ্ছা বিনিমিয় হতো। একদিন একটি ছোট মেয়েকে নিয়ে আমায় দেখাতে দেখাতে বললেন ঐ যে টিভিতে দেখছিলে ঐ তোমার সেই আংকেল! আমিও বাচ্চাটির সাথে পরিচয় হলাম, লোকটার মেয়ে ভিকারুন নেসায় পড়ে। কথা বার্তার এক পর্যায়ে ওনার অফিসের একটি ভিজিটিং কার্ড হাতে ধরিয়ে দিলেন এবং অফিসে যেতে বললেন। আমি ভিজিটিং কার্ডটি যত্ন সহকারে রেখে দিলাম। বছর চারেক পেরিয়ে গেছে চাকুরী করছি , টিভি মিডিয়াতে বেশ কাজও করছি , অনেক কাজের অফার চাকুরীর জন্য ফিরিয়ে দিচ্ছি। ভাবলাম ফুল টাইম মিডিয়ায় সময় দেবো, যেই ভাবা সেই কাজ চাকুরীটা অবশেষে ছেড়ে দিলাম।
শুরু হলো ফুল টাইম মিডিয়ার কাজ.... ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা কিন্তু হায় পকেটে টাকা পয়সা কিছু পরছে না.. শুটিং শেষ হলেই পরিচালক মহোদয়ের কথা এখন ব্যস্ত আছি ফোন করে পেমেন্ট দিয়ে দেবো। পরে সেই পরিচালকরা আর ফোন ধরেন না! আমারতো পুরাই মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা, এই বুঝি ঢাকা ছাড়তে হচ্ছে...। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, ফুলটাইম মিডিয়ার কাজ আমাকে দিয়ে হবে না চাকুরী আমাকে করতেই হবে। এখন হঠাৎ করে চাকুরী কই পাবো? মনে পরলো সেই ভিজিটিং কার্ড এর কথা, ভিজিটিং কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী রওনা হলাম সেনাকল্যাণ ভবনের সেই অফিসে। রিশিপসনে গিয়ে বললাম ভিজিটং কার্ডের এই স্যারের সাথে দেখা করতে চাই ...অতঃপর স্যারের সাথে দেখা , দেখেই বলে উঠলো কি ব্যাপার চাকুরী দরকার? মিডিয়ায় কাজ করে হচ্ছে না? আমি অপ্রস্তুত হয়ে উঠলাম , আমার মনের কথা স্যার জানলো কি করে? আমি ঘাড় নারলাম জ্বি স্যার । আমার চাকুরী হয়ে গেলো এবং জয়েন করলাম জুনিয়র এক্সিকিউটভ ব্র্যান্ড , ক্রাউন সিমেন্ট...। আমি বেশ কিছুদিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম, আমার চাকুরী পাওয়া যেন বাংলা সিনেমার ঘটনাকে হার মানায়। দিনিটি ছিলো ৪ নবেম্বর ২০০৪, আজ দশ বছর পূর্ণ হলো আমার ব্র্যান্ডের কাজে, আমি শুধু ব্র্যান্ড নিয়েই কাজ করেছি। দশটি বছর পার করেছি ক্রাউন সিমেন্ট, কিং ব্র্যান্ড সিমেন্ট, মেট্রোসেম গ্রুপ (মেট্রোসেম সিমেন্ট, মেট্রোসেম ইস্পাত) এবং এখন আছি আরএসআরএম এ। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমার ব্র্যান্ড গুরু এবং চাকুরী দাতা ক্রাউন সিমেন্ট এর সন্মানীত সহ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব আলমগীর কবির কে।
একটি ভিজিটিং কার্ড আমার জীবন পাল্টে দিলো, তখনকার সময় প্রফেশনাল নেটওয়াকিং এর একমাত্র উপায় ছিলো এটি।এখন যারা সারাদিন ইন্টারনেট এ বসে থাকে, তাদের সুযোগ অনেক। যোগাযোগই সফলতার সিড়ি। বিনয়ী হোন ধৈয্য ধরুন এবং কাজ করে যান, সাথে যোগাযোগের মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগান আপনাকে আর পিছনে তাকাতে হবেনা শুধুই এগিয়ে যাবেন।
ব্র্যান্ড নিয়ে আমার লেখা পড়তে ক্লিক করুন