দূরে বজরা বাঁধা, হিন্দি গানের ধ্বনি ভেসে আসছে
পোলাও, কোর্মা রান্নার ধুম পড়ে গেছে
পিকনিকের মহোৎসব চলছে-ব্যস্ত সবাই।
গ্রামে গ্রামে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি
তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল, রাস্তা-ঘাট, উঠান, মাচা
দিশেহারা কৃষাণ-কৃষাণী, অভুক্ত শিশুরা বসে আছে মায়ের কোলে
মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলছে 'ভাত দে মা'!
পিকনিকের মহোৎসব চলছে - ব্যস্ত সবাই।
ত্রানের গাড়ি ছুটে আসছে শহর থেকে গ্রামে
নৌকা, ভেলায় চড়ে মানুষ প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে
কখন পাবে একটু খাবার।
নইমুদ্দিন চিৎকার করে বলছে,'লুঙ্গি চাই না - খাওন চাই, দাওয়াই চাই'।
এত ত্রান সমাগ্রী কোথায় যেন মিলিয়ে গেল
রহিমা বিষন্ন চিত্ত্বে ফিরে আসে বাড়ীতে
পিকনিকের মহোৎসব চলছে - ব্যস্ত সবাই।
গাঢ় অন্ধকার নেমে আসছে, চিৎকার শোনা যাচ্ছে দূরে-
'আমার বাচ্চা নাই'
গরু মহিষ ছাগলের মরদেহ এদিক ওদিক ভাসছে,
দূরের বাঁশঝাড়ে শোনা যাচ্ছে পাখির ডানা ঝাপটানি
হুতোম পেঁচার ডাকে যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে গোটা গ্রাম
দূরে প্রস্তুতি চলছে পিকনিকের - ব্যস্ত সবাই।
রাধাকান্ত'র বুকে সন্ত্রাসীরা বসিয়েছে ধারাল অস্র,
পাঁচশত টাকার সওদা হয়েছে ছিনতাই।
রাধাকান্ত’র ষোড়শী মেয়ের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে আসছে,
'আমাকে নিয়ে যাও বাবা'-আমার আশ্রয় কোথায়?
এতমানুষের ভীড়-কেউ মুখ খোলে না
এ লজ্জা আমার রাধাকান্ত!
এ লজ্জা গোটা দেশের!
বন্যার পানিতে ডুবে গেছে গোটা এলাকা
পিকনিকের মহোৎসব চলছে-ব্যস্ত সবাই।
(বিশেষ নোটঃ কবিতাটি ২০০৪ সালে বন্যার সময় আমাদের এলাকার সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখেছিলাম। কবিতাটি অনেক আগে ব্লগে পোস্ট করেছিলাম, আবার কেন যেন মন টানলো পোস্ট করতে)