প্রত্যেক ঈদের আগে আগে অনেক বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয় । এবারও তাই হচ্ছে। মুক্তি পেয়ে গেলেন সাকা চৌ:! মুক্তি পেয়ে গেলেন তারেক, খালেদা জিয়া । শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণ বসত: মাতা কর্তৃক পুত্রের রাজনীতি বর্জন নয়, সাময়িক বিরতী ঘোষনা হলো। খালেদা জিয়ার জৌলুসময় চেহারায় এক বছরের কারাবন্দীত্ব সুস্পস্ট; এখন দেশ ও জাতি কে নিয়ে ভাবার আগে ”ত্বকের যত্ন নিন ” -ই হওয়া উচিত তাঁর প্রধানতম কর্তব্য। তবে (সু)চিকিৎসার পর এই পড়ন্ত বয়সেও জলিল সাহেবের টসটসে চেহারার অটুটতা ভাল লাগল; যদিও উনার কিঞ্চিত স্মৃতিভ্রম হয়েছে নয়তোবা আমরই! যতদূর মনে পড়ে উনি চিকিৎসার্তে বিদেশ পাড়ি জমানোর আগে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছিলেন। অথচ এখন দিব্যি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্বহাল করে দিলেন। যদিও এরপর এই দ্বায়িত্বপদে ব্যক্তি পরিবর্তন সাধিত হলো। প্রশ্ন হলো, এই আলোচনা কি আগেই সেড়ে নেয়া যেত না ? অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আনাড়ীর মত খেললে নতুন প্রজন্ম কাকে অনুসরণ, অনুকরণ করবে !
অবশেষে আভাসে, গুঞ্জণে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। অনেকেই অবশ্য খুব হতাশ ; অনেকের ভাষ্যমতে এতোগুলো মাসের হাঁকডাক আদতে ”বজ্র আটুনি ফস্কা গেঁড়ো” ছাড়া কিছুই না। কেউ কেউ এ ক’মাসে ”কি পেলাম , কি পেলাম না” -র হিসেব মিলিয়ে নেন । তবে এ ক’মাসে আমাদের প্রাপ্তির ঝুলি অনেক নতুন জ্ঞানে টইটুম্বুর। আমরা জানতে পারলাম আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল নেতারা দূর্নীতিতে কতটা পরিপক্ক! হাজতবাস পরিশেষে অনেক নেতাদের জন্যই অবকাশযাপন হলো বোধহয়! আর তাদের সগৌরবে মুক্তি ”সত্যের জয়” –এর সামিল! এখন নেতারা যদি মঞ্চে উঠে বলেন সীতা’কেও অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল তাহলে আর বলার কিই বা থাকে!
”মাইনাস-টু ফর্মুলা” এখন প্রবাদ বাক্যতুল্য! শোনা যাচ্ছে, হাসিনা-খালেদা’কে এক টেবিলে আনার ভাবনা চলছে। অনেক পুরোন হিন্দী ছবি ”শক্তি” -তে একই পর্দায় অমিতাভ বচ্চন আর দিলীপ কুমারের উপস্থিতি তুমুল আলোড়িত করেছিল দর্শকদের। ওই দুই বাঘা তারকাকে শেষ পর্যন্ত এক পর্দায় আনা গেলেও দেখা যাক, রাজনীতির পর্দায় আমাদের দুই নেত্রীকে জনগণ দেশের প্রয়োজনে এক সাথে পায় কিনা!
আজকাল বাসে ভিক্ষাবৃত্তির একটা নতুন পদ্ধতি লক্ষ্য করছি। বেশীরভাগ সময়ই ছোট ছোট মেয়েরা বাসে উঠে একটা করে চিরকুট সব যাত্রীদের কোলে রেখে দেয়। টাইপ করা চিরকুটে লেখা থাকে পরিবারের দুরবস্থার কথা; কেউ কেউ লেখে- চকলেট বেঁচে সংসারের খরচ চালায় কিন্তু রোজার মাসে চকলেট বিক্রি হয় না , তাই সাহায্য প্রার্থনা। পরিশেষে লেখা থাকে পড়ার পর চিরকুট ফেরত দিতে। এটার একটা ভাল দিক আছে, টাকা চেয়ে কানের কাছে কেউ ঘ্যান ঘ্যান করে না। বাসের সবাইকে চুপচাপ চিরকুট বিলানোর পর আবারও চুপচাপ চিরকুট সংগ্রহ চলে; কেউ যদি কিছু দিতে চায় তো চিরকুটের সাথে দিয়ে দেয়। আমি পরপর দু’তিন দিন ”চকলেট বেঁচে সংসার চালানো” টাইপ চিরকুট পেলাম ভিন্ন ভিন্ন জনের কাছ থেকে। বোঝাই যায় ব্যাপারগুলো সাজানো। এটা বুঝেও একটা চকলেটের দাম হিসেবে ২/৩ টাকা চিরকুটের সাথে দেই। সব জেনে-শুনে-বুঝে যদি দূর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের আমরা বার বার কোটি কোটি টাকা যথেচ্ছভাবে লুটে নেয়ার জন্য ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে মহাসমারোহে প্রতারণার সুযোগ দিতে পারি তবে এই শিশুগুলোর ছোট্ট প্রতারণার পেছনের দারিদ্রতা’র কাছে হলামই না হয় আরেকটু প্রতারিত!
আমরা এখন পলিটিক্যাল ইস্যুগুলোতে আরো বেশী হিপনোটাইজড! নতুবা যখন খবরের পাতায় মোটা হরফে লেখা আসে ”কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না বাজার দরের”, তখন কেউ কেউ তারেক জিয়া’র মাথা ফেটে যাওয়ার ঘটনায় তান্ডব করি শহর জুড়ে; অথবা যখন ”রমজানের প্রথম দিনেই বাজার চড়া, ক্রেতারা অসহায়”, তখন পঞ্জিকা ঘাঁটি তারেকের মুক্তির শুভক্ষণের , হিসেব কষি খালেদা জিয়ার কারাবাসের মিনিট, ঘন্টা, সপ্তাহ, মাসের। ”রমজানেও ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি” -এর পরও তারেক জিয়ার মুক্তিতে আলোয় উদ্ভাসিত হয় কারো কারো মুখ! নেতাদের একের পর এক মুক্তির খবরে রাজনীতির মাঠ যখন সরগরম তখন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় ”২২ জেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি” !
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০১