somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুড়ি উড়ানো, সিনেমা বানানো

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘ঘুড়ি’ ব্যাপারটার প্রত্যন্ত গ্রামে প্রচলন কম। কারন,এর সাথে অর্থের সম্পর্ক আছে। নাটাই, সুতো, সে-সুতো ধারানো, ঘুড়ি কেনা এসবের মজুদ অর্থের বিনিময়ে গাঁয়ের ছেলে-পুলেদের যোগাতে কষ্ট হয়। তারা বাতাবি লেবু দিয়ে ফুটবল, নারকেলের ডাটার সাথে টেনিস বল দিয়ে ‘ক্রিকেট’ খেলতে অভ্যস্ত। কিংবা দল বেঁধে, চাঁদা তুলে কেনে ‘সাত নম্বর ডি-আর’। ঐ’তো; ওতেই এক মহল্লার ছেলে-পুলের খেলার ব্যবস্থা হয়ে যায়। তবে, কেউ কেউ যে ঘুড়ির সখ মেতায় না, তা’না। পলিথিনব্যাগ কেটে, শলা বেঁধে চমৎকার ঘুড়ি বানায়। সাথে মায়ের সেলাই বক্স থেকে দু’টাকার এক-বান্ডিল সুতা চুরি করলেই হল, সে সুতার বান্ডিলে বাঁশের কঁঞ্চি ঢুকালে হবে- নাটাই। তবে, এ প্রক্রিয়ার ব্যবহার কদাচিৎ। আর, এদের ঘুড়িও অর্থ বলের জোর কম থাকায় বেশি দূর যেতে পারে না। কারন, ‘দু’টাকার সুতা বান্ডিল ঘুড়ি’র চক্ষুসীমা পেরুবার ক্ষমতা কই?

ঘুড়ি মফঃস্বল বা শহরের অনুষঙ্গ, শহরের উৎসব।

ছাদে ছাদে তরুনেরা এ উৎসবে মাতে। বিশেষত, শুকনো মওসুমে শহর-নগরের আকাশ, নানান রঙ্গের ঘুড়িতে রজ্ঞীন হয়ে ওঠে। খেলার মাঠের অভাবটা তখন চাপা থাকে।কার ঘুড়ি কত সুন্দর, কার সুতোয় ধার বেশি, কারটা উড়ে ভালো, কে ভালো কাটতে জানে, তাপ্পি মেরে কে কয়টা ঘুড়ি জোগাঢ় করল, এসব ভাবতে ভাবতেই সময় পার।

এ ঘুড়ি উড়ানোর ব্যাপারটায় সম্পৃক্ত হবার জন্যে দু’ভাবে এগুতে হয়। প্রথমত, যার বা যার বাবার আর্থিক সঙ্গতি আছে, যে চাইলে নাটাই-সুতো সহ সব রসদ কিনে একটা দলও গঠন করতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে কারো ধার-ধারি হতে হয় না। কিংবা,উড়ানো প্রক্রিয়া শেখার জন্যে কোন উস্তাদী লাইনেও হাটতে হয় না। কারন,তার রসদ আর অর্থ জোরে ওস্তাদরাই স্ব’প্রণোদিত হয়ে জড়ো হয়ে যায় এবং অল্প দিনেই সে ‘ঘুড়ি দাদা’ বনে যায়। এরা যে ঘুড়ি উড়ানোয় মজা পায় না; কিংবা এদের ঘুড়ি যে ভাল ওড়ে না, তা কিন্তু না। এরা বরং মেলা মজা পায়, উড়ায়ও ভালো। সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে, নতুন-নতুন ঘুড়ি উড়িয়ে আকাশ মাতিয়ে রাখে। অন্যরাও সুখ পায়। একে অন্যরে দেখিয়ে জ্বোর গলায় বলে-

‘দেখ! দেখ! ‘ঘুড়ি দাদা’র ঘুড়ি। দেখি আজ কে ওর ঘুড়ি কাটতে পারে!’

সবাই এক মুহূর্তে দাদার ঘুড়ি কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দাদার ঘুড়ি তখন আরো উপরে! আরো উপরে! তার সুতো, কাঁচ গুড়ি দিয়ে ধার করা। চুনোপুটি অনেক ঘুড়িওয়ালারই সুতো কেটে ঘুড়ি লাপাত্তা হয়; আর হদিস নেই।

আবার, কেউ আছে; যার কোন পয়শাপাতি নেই, কিংবা এমনও সম্ভব নয় যে- বাপের পকেট কেটে ‘ঘুড়ি-নাটাই’র রসদ জোগাবে। এরা অন্য পথ ধরে।
কি পথ?
সে পথ লম্বা। কিন্তু, কাজের পথ। এক সময় এরাই সবচেয়ে বড় ঘুড়ি উড়াতে পারে, বেশিদূর ঘুড়ি ছাড়তে পারে, কাটা-কুটি করে; অন্যদের ধার করা সুতাও এদের কাছে টেকে না; এরাই ওস্তাদ বনে যায়।
তবে, সে পথটা কি?
এ পথে নামতে হলে প্রথমেই দেখতে হবে; যত দেখবে, ততো শিখবে! আকাশে কত ঘুড়ি! কোন ঘুড়ি কোন পথে যায়! কার সুতোয় টান বেশি! কার কাছে ঘুড়ির বাহার! কার দু’টো নাটাই! কে, কাছে টানবে! নাটাইটা ধরতে দেবে! এক-আধটু ফুট-ফরমায়েশও হোক না; তা’তে কি?
এ দেখাদেখিটা বড় কাজের। যারা ঘুড়ি উড়ায়, তাদের অতো দেখাদেখির সুযোগ নেই। আর, যারা দর্শক, তাদের উড়ানোর কাহিনীতে মাথাব্যথা কই?
ফলে, যে উড়ানো শেখার জন্যে দেখে, সে আকাশের হাল-চাল বুঝে ফেলে। তারপর, নিজের পছন্দমতো, কিংবা যার সাথে মন মেলে বা যার সংগ্রহে ঘুড়ির সংখ্যা বেশি, তার সাথে সম্বন্ধ। সে সম্বন্ধের সুবাধে কোনদিন হয়তো সুতা ধারাতে ডাক পড়বে, কোনদিন ধরাই দেয়া, নাটাই গোটানো, ছেড়া ঘুরিতে দল বেঁধে তাপ্পি কাটা। এ প্রক্রিয়াটাকে অনেকটা দাদা শ্রেণীর খিদমতগারও বলা যেতে পারে। সে যাই হোক, কাজের কাজ হল, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিখে ফেলা। যেহেতু, অন্যরা স্ব’তল্পি-তল্পা নিয়ে ব্যস্ত, সেহেতু এরা ছেড়া ঘুড়ির তাপ্পি মারাটাকে প্রথম পছন্দে নেয় এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এর ফাঁকে দাদাদের খেদমত করে করে হাত পাকায়। শেষে দেখা যায় এমন হল, দাদাদের চেয়ে তাদের হাতই বেশি পেকেছে।চাহিদা মানুষকে পূর্নাঙ্গ করে তোলে। শূন্যতা থেকেইতো পূর্নতার সৃষ্টি। এই তাপ্পি মারার কাজটা বেশ ক’বার করতে পারলেই কিন্তু নিজের ঘুড়ি নাটাইয়ের রসদও জুটে যায়।
এক সময় এভাবেই রসদবিহীনরা আকাশে ঘুড়ি উড়াতে পারে। তাদের ঘুড়ি হয় সবচেয়ে চৌকষ, চঞ্চল। অন্যরা তাকিয়ে রয়- এ কার ঘুড়ি?এ কার ঘুড়ি?

এ ঘুড়ি উড়ানোর সাথে আমাদের সিনেমা বানানোর প্রক্রিয়ার মেলা মিল আছে। এখানেও যদি, কারো মন কলায় টুইটম্বুর হয়; সাধ জাগে মানুষেরে জানবার, জানাবার, তবে সে সিনেমায় আসে। সে আসাটা দু’ধাঁচের।

প্রথমত, যার অর্থ আছে, হতে পারে সে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, কিংবা স্যান্ডেল ব্যাপারী বা নায়কপুত্র বা সাবান কোম্পানীর মালিকের আদুরে কন্যা।

তবে, তার আর চিন্তা কি? সিনেমা বানানোর যে রসদ- ক্যামেরা, লাইট, কলা-কুশলী এসব জোগাঢ় হয়ে যাবে। চাইলে কোন নামজাদা লেখকের স্ক্রিপ্টও। তার জ্ঞানের দরকার নেই। অর্থ বিকোলে বাজার পন্যের মত জ্ঞান মেলে। এক সময় সে সিনেমা তৈরি করে ফেলে। সে সিনেমা দেখার জন্যে দর্শকতো আছেই, যারা কলায় টুইটম্বুর; তারাও লাইন ধরে। তারা একে অন্যরে বলে-

‘দেখ! দেখ! খলিল ভাইয়ের সিনেমা। আমরা কবে বানামু’?

তারা সবাই সিনেমা দেখে বের হয় আর মনের ভেতর এক মহা স্বপ্ন গেঁড়ে বসে-

‘আমরাও সিনেমা বানামু!আমিও সিনেমা বানামু!’

তখন, সিনে পাড়ায় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কে কার আগে সিনেমা বানাবে?

কিন্তু, যার পয়শা-পাতি নেই, কেবল ফালি ফালি স্বপ্ন আছে, রজ্ঞীন রজ্ঞীন আশা আছে, যে কষ্ট পায়, সুখ পায়, যে অন্যরে সুখ দিতে চায়, দুখ দিতে চায়, তারইতো সিনেমা বানানোর সাধ। সে পয়শা পাবে কই?

উলটো মাস শেষে বাপের বাড়ী ফোন করে মাসিক খরচা চায়। তবে কি তার সিনেমা বানানোর কোন পথ নেই?

আছে! সে পথও আছে!

কি পথ?

দেখতে হবে, কে সিনেমা বানায়, কে শুধু প্যাঁচাল মারে, কার সিনেমায় দিনভর কামলা দিয়ে রাতে ঢুলু ঢুলু চোখের দর্শক আসে, যাদের গাঁয়ের গন্ধ নোংরা, কার সিনেমায় কেবল ‘ইয়ারমেট’ আর কতিপয় সুভান্যুধায়ীর আগমন হয়, কে এখনো স্বপ্ন বুনছেতো বুনছেই, কার স্বপ্ন বুনার আগেই কাম-তৈয়ার, কে দরদী, কে কঠিন, কে নিজেরে বিকায়, কে মানুষেরে বিকোয়, সব সব!

এ দেখাদেখিটা কামের। এতে চোখ খুলে, মন খুলে, চিন্তা খুলে। নিজের স্বপ্ন যদি বোঁতা হয়, তবে সেটাকে শান দেয়, বাঁকা হলে সোজা করে, কঠিন হলে সহজ, কূঁজো হলে দাঁড় করায়।

এ দেখাটা দর্শক দেখবে না, বানানোর কাহিনী বড়জোর তার উৎসাহ জাগাতে পারে, ও তাকে তৃপ্ত করে না। দেখতে হবে, দেখার চোখ দিয়ে। তারপর,যার সাথে মন মেলে, তার সাথে সম্বন্ধ, লেনা-দেনা। কখনো যদি একটু শ্যূটিংযে দাওয়াত করে, কখনো যদি স্ক্রিপ্টা ধরতে বলে, অথবা যদি কখনো নায়িকার বাসায় পাঠায়।

সে যাই হোক, কাজের কাজ যা হবে, তা হল- শিখে নেয়া। যেহেতু, তারা নামী নির্মাতা, নির্মানে ব্যস্ত; সেহেতু চুনোপুটিদের খবর নেয়ার ফুসরত কই তাদের?

কাজেই, নিজের আখের নিজেরই গোছাতে হবে।দিনে দিনে, একদিন শর্টগুলো বুঝে যাবে, লাইট এঙ্গেলের নাম গুলো জেনে যাবে, প্রডাকশন কাহিনীটা রপ্ত হবে, নন্দনেরসীমা ছড়াবে।শেষে দেখা যাবে, ঐ সব ব্যস্ত নির্মাতার চেয়ে তার শেখার দর মেলা ওপরে।

ও’তেই কাজ হবে। ডাক পড়বে। ডাক পড়াটা জরুরি। এ ধারায় এটাই দিনান্তের কথা। এবং এক সময় এভাবেই, তল্পি-তল্পা বিহীন স্বপ্নচারীরাও নির্মাতা হয়ে ওঠে। অনেকগুলো স্বপ্ন কখনো রজ্ঞীন, কখনো সাদা-কালো হয়ে ধরা দেয়, কতগুলো জমাটবাঁধা কষ্ট প্রকাশ পেয়ে যায়। অনেকগুলো উৎসবে মানুষেরা মেতে উঠে। উৎসবের মধ্যমণি ‘তল্পি-তল্পা’ বিহীন স্বপ্নচারীরা।



১৮,১১,১৪
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ঢা বি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×