একটি কালো আইন নিয়ে আজ একটু বলতে চাচ্ছি। একটি তথাকথিত সেকুলার সমাজে সাম্প্রদায়িক এই আইনটি রয়ে গেছে। একে বিলোপ করে না কোনো সরকার। মানুষের ভালোর জন্যই তো আইন। কখনও কখনও আইনই মানুষের জীবনের হুমকি হয়ে দাড়ায়। এ ধরনের আইন বিরুদ্ধে তথাকথিত মানবতাবাদীরা সোচ্চার নয়। কালো আইনটির নাম শত্রু সম্পত্তি। যার বর্তমান নাম অর্পিত সম্পত্তি।
ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানের সাথে তিনবার যুদ্ধ হয়েছে ভারতের। এই তিন যুদ্ধ সামরিক রূপ নিলেও দেশ দুটির অভ্যন্তরে চলছিল দুই দেশের ধর্মীয় নাগরিকদের সম্পত্তি দখলের যুদ্ধ। পাকিস্তান থেকে হিন্দু খেদানোর একটি পরিকল্পনা ছিল এই কাজের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে ভারতে মুসলিম খেদানোর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। যে কারণে পাক ভারত তিন তিনবার যুদ্ধে ভারতীয় মুসলিমরা সেদেশে শক্ত অবস্থানে থেকে গেছে। পক্ষান্তরে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে হিন্দু খেদানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। আর এই কালো আইন রাষ্ট্রীয় ভাবে এই কাজের স্বীকৃতি দেয়।
অর্পণ শব্দটির মানে আমরা সবাই জানি। দান, প্রদান, ন্যাস্তকরণ,সংস্থাপন। এই চারটি অর্থই হয়। ভারতে চলে যাওয়া হিন্দুরা সবাই কি বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবকে হিন্দুদের সম্পত্তি দান,প্রদান তথা অর্পণ করে গেছেন। কিন্তু জাতির পিতা অনেকটা গায়ের জোরেই হিন্দুদের দান-অর্পণ গ্রহণ করেন। জোর করে দান-অর্পণ হয় কিনা জানি না। দান কিংবা অর্পণের সঙ্ঘায় এভাবে বোঝানো হয় কিনা জানি না। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটাই বুঝতে হবে যে হিন্দুরা বাংলাদেশকে কিছু সম্পত্তি দান অথবা অর্পণ করে ভারতে চলে গেছে। এখন এই দান করা সম্পত্তি এদেশের মুসলিম শাসক গোষ্ঠী যে যেভাবে পারছে দখল করে বাড়ি বানাচ্ছে, দোকান পাট বানাচ্ছে। কিন্তু কোনো হিন্দু একই কাজ করলে সরকারী বাধা চলে আসে। এটার প্রমাণ আমি দেখাতে পারি ।
বাংলাদেশের হিন্দুরা শতধা বিভক্ত। এদের মধ্যে কোনো ঐক্য গড়ে ওঠেনি। তার প্রধান কারণ হিন্দুদের স্বার্থপরতা। কোনো হিন্দু হিতের নেতাকে শাসক গোষ্ঠী চুপ থাকার জন্য ঘুষ হিসেবে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে অন্য দেশে পাঠান। অন্য শাসকেরা হিন্দু নেতাদের বাড়ি গাড়ি সহ নানা সামাজিক মর্যাদা দিয়ে তাদেরকে চুপ থাকতে বাধ্য করান। এ কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সম্প্রতি শাঁখারি বাজারে একটি পুরানো বাড়ি ভেঙে পড়া অবস্থায় সেখানকার লোকেরা নতুন ভবন তৈরি করতে যাচ্ছে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আইন যে আইন পাকিস্তানের শাসক আইয়ুব খান তৈরি করে গেছেন একটি ঘোষণার মাধ্যমে। যাকে বহাল রেখেছে এদেশের জাতির জনক। আইয়ুব খান এসব আইন করে বেশি দিন টিকতে পারেনি। এই আইন বহাল রেখেও জাতির পিতা বেশিদিন টিকতে পারেনি। অন্যরাও পারেনি। প্রত্যেকের করুন রাজনৈতিক পরিণতি হয়েছে।
সবচেয়ে হাস্যকর যে দৃশ্যটা চোখে পড়ে সেটা হচ্ছে দেশের বিচার বিভাগের ভাষ্য। বিচার বিভাগ এই আইনকে কালো আইন বলে একে অবৈধ আখ্যায়িত করলেও আজ পর্যন্ত এই আইন বহাল রয়েছে। এটাই পঙ্গু বিচার ব্যবস্থার একটি উজ্জ্বল তম উদাহরণ।
ঢাকা শহরে বিশেষ করে পুরানো ঢাকায় বহু পুরাতন বাড়ি রয়েছে। সেগুলোতে বহু লোক বাস করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মালিকানার দাবিদার নেই দেখে এসব সম্পত্তি আজ অর্পিত। এ কারণে সরকার এসব বাড়ি সংস্কার করতে দিচ্ছে না ওই কালো আইনের জন্য।
অর্পিত সম্পত্তি আইনের সংশোধন করা উচিত যদি ইহা বিলোপ করা না যায়। যেসব অর্পিত সম্পত্তি মূল মালিকের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বর্গ নিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই একটি প্রায়োরিটি দিতে হবে। আর সরকার যেসব অর্পিত সম্পত্তি দখল করে সেগুলোতে ভাড়াটিয়া বসিয়ে টাকা কামাচ্ছে তাদেরকে ভিন্ন প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত। জীর্ণ ভেঙ্গে পড়া অর্পিত সম্পত্তি গুলোকে সংস্কার করে সেগুলোতে বাসযোগ্য অবস্থায় আনার অনুমতি দিতে হবে। এ পরিবর্তনের জন্য সরকার কোনো অর্থ দাবি করতে পারবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনের জন্য এসব সম্পত্তি অবশ্যই হিন্দুদের কাছে দিতে হবে। সক্ষম হিন্দুদের এসব সম্পত্তি কেনার অধিকার দিতে হবে যাতে তারা বাড়ি সংস্কার করে কিংবা জীর্ণ বাড়ি ভেঙ্গে নতুন করে থাকতে পারে।