মণিপুরি শাড়ি বলে আদতে কিছু ছিল না । শাড়ির প্রচলন মণিপুরি সমাজে কখনই ছিল না। মণিপুরি নারীদের ট্র্যাডিশনাল পোষাক হলো লাহিং বা ফানেক যেটা কোমরে প্যাঁচ দিয়ে পরতে হয়, সাথে ফুরিৎ বা ব্লাউজ, এবং ফিতুপ অথবা ইনাফি । ইনাফির উন্নত সংস্করন মৈরাংফি যেটা মুলত কারুকার্যখচিত উড়না বিশেষ। মণিপুরি শাড়ি এই মৈরাংফিরই ইনপ্রোভাইজড সংস্করন যেটির উৎপাদন শুরু হয় নব্বই দশকে, মুলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই । 'মৈরাং' প্রাচীন মণিপুরের একটি রাজ্য, 'ফি' অর্থ পোষাক । মৈরাংফির সবচেয়ে বৈশিষ্ঠ্যপূর্ণ অংশটি হল এর পাড়ের বৈচিত্রময় 'মৈরাং' বা মন্দির ডিজাইন। মন্দির ডিজাইনটিতে মৈরাং এর সুপ্রাচীন থাংজিং মন্দিরের নকশার অনুকরনে করা। থাংজিং মণিপুর মিথলজির দেবতা; তিনি ঈশাণ কোণের দিক রক্ষাকর্তা। মৈরাং এর নারীরাই প্রথম মৈরাংফির বুনন শুরু করেন। মৈরাং এর রাজকন্যা থৈবী সর্বপ্রথম মৈরাংফি পরিধান করেন বলে জনশ্রুতি আছে ।
তাঁতশিল্পের সঙ্গে মণিপুরিদের রয়েছে যুগযুগান্তরের সম্পর্ক। একসময় মেয়েদের তাঁতশিল্পে দক্ষতাকে বিয়ের ক্ষেত্রে পূর্বযোগ্যতা হিসেবে দেখা হত। প্রায় ঘরে ঘরেই থাকে কোমরতাঁত । তবে শাড়িগুলি তৈরী হয় বিশেষ তাঁতে, এক একটি শাড়ী তৈরী করতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহ । গুনগত মান, নান্দনিক ডিজাইনের কারণে মণিপুরি শাড়ি বাঙালিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ টিভির সংবাদ পাঠিকা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত মণিপুরি তাঁতের শাড়ি পড়ছেন দৃশ্যটা ভালই লাগে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯