'বালা কাপানি' হলো কৃষিনির্ভর মণিপুরি সমাজের একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষি অনুষঙ্গ। যৌথ কৃষিপদ্ধতি মণিপুরিদের আদিম স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজব্যবস্থার অংশ ছিল। প্রাকৃতিক ভূমিকে যৌথ প্রয়াসে বাসভূমি ও চাষভূমিতে পরিণত করে চাষবাস এবং উৎপাদন প্রথায় ভোগ বন্টনও ছিল সাম্যভিত্তিক। লকেই-সাগেই-শিংলুপ ভিত্তিক সমাজে একমসয় ব্যক্তিকে ছাপিয়ে যৌথ চেতনাই প্রবল ছিল; পরস্পরের প্রতি সাহায্য সহযোগিতা ছিল একেবারেই ব্যক্তিস্বার্থ বিবর্জিত।
মণিপুরিদের আদিধর্ম ও আদিসংস্কৃতি কঠোরভাবে এই যৌথচেতনার অনুষঙ্গী। সেই স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজব্যবস্থা আজ নেই, কিন্তু যৌথ চেতনা আজো বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। এখনো খেতখামার বা গেরস্তালি কাজে কিংবা ঘরদোর তৈরীতে তারা বিনা পারিশ্রমিকে পরস্পরকে সাহায্য করে থাকে। এ সমাজে ব্যক্তিচেতনা যৌথচেতনাকে পুরোপুরি গ্রাস করেনি তার উদাহরন হলো বালা কাপানি। বালা কাপানির মুল উদ্দেশ্য গৃহস্থকে ধান কাটায় সাহায্য করা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মাংনা কিষান /মাগনা কিষান নামে একটি কৃষি-সংস্কৃতি চালু ছিল এর সাথে বালার তুলনা দেয়া যায়।
মুলত তরুন কৃষক ও কৃষানীরা দল বেঁধে 'বালা' গঠন করে। বালাগুলো গ্রাম থেকে গ্রামে এমনকি দুর-দুরান্তেও ধান কাটতে যায়। মণিপুরি গৃহবধুরা বালা নিয়ে নিজেদের বাপের বাড়ীতে সাহায্য করতে যায়। ধান কাটা শেষ হলে বালা দলটিকে 'বান্দারা' বা ভুঁড়িভোজ খাইয়ে আপ্যায়ন করার নিয়ম।
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ তারিণী সিংহ
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৯