somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মান্তরিত আদিবাসীরা ভালো নেই

২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় ধর্মান্তরিত হওয়া আদিবাসীদের একটি বড় অংশ দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। নিয়মিত আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ধর্মান্তর করার কিছু দিন পর অর্থ প্রদান বন্ধ করে দেওয়া এবং খ্রিস্ট ধর্ম শুদ্ধভাবে পালনে চাপ দেওয়ার কারণেই তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে ধর্মান্তর ঠেকাতে উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা গঠন করেছে 'আদিবাসী ধর্ম রক্ষা পরিষদ'। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা-উপজেলায় অনুসন্ধান করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার হিসাবে, দেশের প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসীর অর্ধেকের বাস উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সরেন ও আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ভাগবত টুডু জানান, উত্তরাঞ্চলের ১৫ লাখ আদিবাসীর মধ্যে ছয় লাখেরও বেশি এরই মধ্যে ধর্মান্তরিত হয়েছে। এ অঞ্চলের আড়াই লাখ সাঁওতালের মধ্যে দুই লাখই তাদের নিজ ধর্ম 'সর্বপ্রাণবাদ' ছেড়ে খ্রিস্টান হয়েছে। এদের মধ্যে অতিদরিদ্র সাঁওতালদের সংখ্যাই বেশি। ধর্মান্তরিত অন্য আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে ওঁরাও, মাহালি, মুণ্ডা, মালপাহাড়ি, মালো, কোচ, পালিয়া ও রাজবংশী। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রেভারেন জোনা মুর্মু জানান, ধর্মান্তরে ইচ্ছুকদের প্রথমে সাদা কাগজে আবেদন করে পরে আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হতে হয়।

'কোনো প্রলোভন দেখানো হয় না'
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রেভারেন জোনা মুর্মু জানান, তানোর উপজেলায় ধর্ম প্রচার ও পালনের জন্য ২১টি গির্জা রয়েছে। এগুলোর আওতায় বিভিন্ন ধর্ম থেকে এরই মধ্যে এক হাজার ৩০০ ব্যক্তি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে। এটি কোনো বিদেশি নয়, দেশি মিশন। তিনি জানান, ধর্মান্তরে ইচ্ছুকরা প্রথমে সাদা কাগজে আবেদন করেন এবং পরবর্তী সময়ে আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে তাঁদের খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হতে হয়। রাজশাহীর তানোর উপজেলার মণ্ডুমালার রোমান ক্যাথলিক সাধু জন মেরি ভিয়ান্নি গির্জার ফাদার নির্মল কস্তা দাবি করেন, আদিবাসীদের খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে তাঁরা কোনো প্রলোভন দেখান না।



আদিবাসীদের ভিন্ন কথা
কিন্তু আদিবাসীদের মুখে শোনা গেছে ভিন্ন কথা। তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের নরেশ মুর্মু অভিযোগ করে বলেন, 'ফেলোশিপ চার্চের মিশনারিদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিকসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় পাঁচ বছর আগে আদি সাঁওতাল থেকে আমি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করি। ওই সময় মিশনারিরা আমার ছেলেমেয়েদের বিনা খরচে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও এখন এ খাতে আমাদেরই মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। তাঁদের কথামতো ধর্মাচার পালন ও ছেলেমেয়ের বিয়ে দিতে হচ্ছে। চার্চের ধর্ম প্রচারকরা আমাদের সাঁওতালি আদি প্রথা ঢোল, মাদল বাজানো ও সাঁওতালি ভাষায় গান করা নিষেধ করে দিয়েছেন। এমনকি প্রতিবেশী আদিবাসীদের সঙ্গে মেশামিশিতে সতর্ক করে দিচ্ছেন।'

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত অনিল মারাণ্ডি অনুতাপের সুরে বলেন, 'না বুঝে ও লোভে পড়ে বাপ-দাদার আদি ধর্ম ত্যাগ করে বড় ভুল করেছি। এখন প্রতি মুহূর্তেই অনুশোচনা বোধ করি। আদি ধর্ম ও সত্তা বিলীন হওয়ায় আমার মতো অনেকেই আজ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে।' তিনি আদি ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন বলেও জানান।

একই গ্রামের আদিবাসী গ্রামপ্রধান রমেশ হাসদা ও দুরবিন কিসকু বলেন, আদিবাসী সাঁওতালরা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলেও তারা প্রাচীন ধর্মাচার, চিরায়ত প্রথা-উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বাদ্য, বাঁশি, মাদল, তীর-ধনুক, সরাই, দুল বাজাতে চায়। কিন্তু তা নিষেধ করা হচ্ছে বলে শুনেছি। রমেশ হাসদা বলেন, আদিবাসী সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রতি গ্রামে সাত সদস্যের একটি করে পরিচালনা কমিটি (বিচারিক) থাকলেও এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মিশনারিরা। এমনকি নতুন খ্রিস্টানদের আদিবাসী কমিটির বিচার অমান্য করতেও বলা হচ্ছে। এটা আদিবাসীরা মেনে নিতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে নব্য খ্রিস্টানদের সঙ্গে আদিবাসীদের দূরত্ব না কমলে সংঘাতের আশঙ্কা আছে। এরই মধ্যে খ্রিস্টান ও আদিবাসীদের মধ্যে শ্রেণীগত বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার আদিবাসী সুফল হাসদা ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবির কামিনী মুর্মু বলেন, 'খ্রিস্টান হলে প্রতি মাসে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়ার আশায় এ অঞ্চলের আদিবাসীরা ধর্মান্তরিত হয়েছে। তবে প্রথম দুই-এক মাসে কিছু অর্থ পাওয়া গেলেও এখন কিছুই না পাওয়ায় আমরা হতাশ। অনেকেই এখন প্রাচীন ধর্মে ফিরতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর জেলায় ১৮৮০ সালে ব্যাপ্টিস্ট মিশনের কাজ প্রথম শুরু হয়। এ মিশনের প্রধান জেন এন দত্ত ১৯০৭ সালে প্রথম চেষ্টায় ২৩ জন সাঁওতালকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। এরপর থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে।


বিস্তারিত পড়ুন: দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিবেদন
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৩৮
৫৪০ বার পঠিত
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ফুলকপি পাকোড়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:২০



ফুলকপি নিয়ে চারিদিক বেশ হৈচৈ চলছে । ক্রেতা হিসাবে আমাদের কিছুই করার নেই দুঃখ প্রকাশ ছাড়া । তো ফুলকপির পাকোড়া খুব স্বাদের জিনিস । ঝটপট বানিয়ে ফেলুন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাইরে নাইরে না!!!!!!!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:২২



বেশ কিছুদিন আগে দ্য সানডে টাইমসে একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম। লেখক হিপোক্রেসির ধরন বোঝাতে গিয়ে একটা কৌতুকের অবতারনা করেছিল। কৌতুকটা এমন..........ছয় বছরের ছোট্ট জো তার বাবাকে গিয়ে বললো, ড্যাড, আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈশ্বর!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯







নিটশের ঈশ্বর মৃত হয়েছে বহুদিন আগে, জড়াথস্ট্রুবাদের ঈশ্বর বদলে যায়নি, একটাই থেকেছে ; আব্রাহামিক ঈশ্বর অনেক ভাষায় কথা বলা শিখিয়েছে মানুষকে ;বুদ্ধের ঈশ্বর অভিমান করে কথাই বলতে চায়নি ; মিথলজীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানেরা ভাগ্যন্নোয়নের জন্য পশ্চিমে গিয়ে, পশ্চিমের সংস্কৃতিকে হেয় করে ধর্মের নামে।

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২০



এখন পশ্চিম চাহে যে, মুসলমানেরা যেন "ভাগ্যান্নষন"এর জন্য তাদের দেশে আর না যায়; কারণ, মুসলমানেরা পশ্চিমের সংস্কৃতিকে হেয় করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে। একই আব্রাহামিক ধর্মের লোকজন হলেও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০০

প্রতিযোগিতার এই দুনিয়ায় এখন আর কেউ নিজের মতো হতে চাই না, হতে চাই বিশ্ববরেণ্যদের মতো। শিশুকাল থেকেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। সব ছাত্রদের মাথায় জিপিএ ৫, গোল্ডেন পেতে হবে! সবাইকেই ডাক্তার,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×