somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটিকে এখনও গতর বেচতে হয়!

০৪ ঠা মে, ২০০৬ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কাজের একটা অংশ ছিল ব্রথেলে। অফিসে আমরা ব্রথেলই বলি। আসলে বেশ্যাপাড়ায় কাজ। আরিচায়। নগরবাড়ী। প্রথমত এ'দুজায়গায়। সাথে জলি ব্রাউন। বৃটিশ মহিলা। পাজেরো গাড়ী। আমার বিয়ের কথা বার্তা চলছে। কিন্তু এমন জা'গায় কাজ পাত্রীপক্ষীয় কেউ শুনলে নির্ঘাত বিয়েটাও ভেস্তে যাবে। জলি পঞ্চাশোর্ধ, আফ্রিকায় এইডস্ নিয়ে কাজ করে লিজেন্ডে পরিণত হয়েছে। অনেক রিসার্চ পেপার। অনেক পাবলিকেশন। মেডিকেল সাইন্সের সব জার্নালে তার নাম সচারচরই দেখা যায়। তবে আমি প্রথম ব্রথেলে যাচ্ছি।

আরিচায় একজন এনজিও প্রতিনিধি আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন। শিরিন। চমৎকার শরীর। গাড়ীতে উঠলেন। ফেরীতে গাড়ী। শিরিন আমাদের কথা বোঝে না একবিন্দুও। আমি দোভাষীর ভুমিকায়। কাজের উদ্দেশ্য প্রধানত রিহ্যাভিলিটেশন। আরো স্পেসিফিক করলে, বেশ্যাদের মধ্যে থেকে একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করা যে আন্তর্জাতিক একটা ফোরামে এইডস নিয়ে তার সচেতনার কথা বলবে। আমি যে বিদেশী সংস্থায় কাজ করি তারা এমন কাজের নাম ভাঙিয়ে প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সাহায্য পাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে সচেতনার মাত্রা কেমন হতে পারে বোঝাই যাচ্ছে কারণ বিগত ১ বছরে আমি এই প্রথম যাচ্ছি। এতদিন অফিসে বসেই রিপোর্ট লিখতে হতো।

জলি কথা বলছিল বিভিন্ন প্রিভেনশন মেজার নিয়ে। শিরিন বললো, খদ্দেরদের অনেক রকম ডিমান্ড থাকে। যার ফলে সব সময় কনডম ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। খাতা কলমে আমরা বেশ্যাদের যৌনশ্রমিক বা কর্মী নামেই সন্বোধন করি। আমার কিন্তু বারবার দৃষ্টি চলে যাচ্চিল শিরিনের দিকে। এত আকর্ষণীয় একজন মহিলা কি করে ব্রথলে কাজ করে। আমি শরীর মাপি। নগরবাড়ী বস্তির মত ঘরগুলোর বাসিন্দাদের কাছে শিরিন পরিচিত মুখ। আমি বিভিন্ন যৌন শ্রমিকদের নিয়ে থরে থরে সাজানো প্রশ্নের উত্তর লিখছি ল্যাপটপে। জলি ছবি তুলছে আর বাচ্চাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। একটা ঘরে যেখানে আমরা বসে কাজ করছিলাম একজন বৃদ্ধ মহিলা এলেন। তিনি আমাকে বললেন, বাবা আপনাদের কাজে মেয়েটিকে দিলাম, সেখানেও নাকি মেয়েটিকে গতর বেঁচতে হয়। আমি বললাম, আমাদের অফিসে কাজ করে? সে বললো, মনাতো দেখি সারাদিন খাতা পত্র নিয়েই দৌড়াদুড়ি করে। ঢাকা থেকে বড় অফিসাররা আসে। বিদেশীরা আসে। ঔষধ পত্র দিয়ে যায়। আবার আমার মেয়েটির দুইবার পেটও বানিয়ে দিল! জলি আমার অদূরে শিরিনের সাথে দাড়িয়ে বাচ্চাদের কি যেন বোঝাচ্ছিল। আমি বৃদ্ধ মহিলাকে বললাম, দেখুন, আমাদের অফিসে কোন দেশী মহিলাই চাকুরী করেন না। তারপরও আপনার অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখবো। আমার মনে হলো এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। শত শত এনজিও এখন কাজ করছে। কত কিসিমের মানুষ আছে। একসময় আমাদের কাজ শেষ হলো।

ফেরার পালা। অপরাহ্ন পেড়িয়ে গেছে। ফেরীতে। জলি তার ল্যাপটপে ডাটা এনালাইসিসে ব্যসত্দ। শিরিন আমার পাশে বসে আছে। এতক্ষণ সরাসরি তার সাথে কোন কথাই হয়নি। কিন্তু বৃদ্ধার কথাগুলি শুধুই আমাকে পীড়া দিচ্ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম শিরিনকে এমন কোন ঘটনা সে জানে কিনা। সে বললো এমনতো কতই হচ্ছে। আমি সত্যিই অবাক হলাম। তাহলে এটা এখানে ওপেন-সিক্রেট! কোন কথা নেই। আরিচা ঘাট পেড়িয়ে শিরিনের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। তাকে নামিয়ে দিন থাকতে আমাদের ঢাকা পৌছুতে হবে। হঠাৎ শিরিন আমাকে বললো, মনাকে কি আপনার লাগবে? আমি চমকে উঠলাম। বৃদ্ধার মেয়েই কি তাহলে এই শিরিন! কিছুটা ধাতস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন? সে বললো, আমাদের এনজিও সন্বন্ধে ভালো রিপোর্ট লিখতে!

আমি জলিকে বোঝাতে পারিনি। ড্রাইভার নিশ্চুপ। ফেরার সমস্ত পথ যেন বিরাণ হয়ে গেছে। আমি কোথায় কাজ করছি?

পরের মাসে আমি চাকুরী ছেড়েছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৩
২৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানবিক করিডোর দেওয়ার অর্থ দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বিকিয়ে দেয়া।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০৪


জানি না তিনি কোন প্রেক্ষিতে কথাটা বলেছেন, কিন্তু রাখাইনে মানবিক করিডোর দিলে সেখানে বাইরের সেনা মানবিক সহায়তা ও শান্তরক্ষার্থে প্রবেশ করবে, যা ধীরে ধীরে সামরিক ঘাঁটিতেও পরিণত হতে পারে। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

লামিয়ার আত্মহনন: রাষ্ট্রীয় অক্ষমতা, সামাজিক নিষ্ঠুরতা ও মনুষ্যত্বের অন্তর্গত অপমান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১


সেদিন ছিল ১৮ মার্চ ২০২৫। পটুয়াখালীর দুমকীতে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শহীদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। সে বাবা, যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩



সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'! তৈরি হচ্ছে সূর্যালোক ছাড়াই, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা:—

♦️সমুদ্রের ৪ হাজার মিটার তলদেশ। অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক জগৎ। আর সেখানেই নাকি রয়েছে অক্সিজেন! বিজ্ঞানীরা যাকে ডাকছেন 'ডার্ক অক্সিজেন' নামে। 'নেচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


আজ বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়ায় এমনটাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এমন বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন বাংলাদেশ কি তবে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×