সিনেমা অবশ্যই দর্শকদের পছন্দ মাথায় রেখে বানানো হয়। পরিচালকের ধারণায় দর্শকের অনেক প্রকরণ থাকে। তাদের মনোজয় করার চেষ্টা থাকে। ছবিটাকে চালাতে হবে, বাণিজ্যও করতে দিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠেরা মোটা-দাগে ভালোলাগার উপকরণ খুঁজবে। কিছু দর্শক শিল্প সমালোচক - তাদের মনোতুষ্টির জন্য কিছু উপাদান রাখতে হবে। কিছু দর্শক রাজনৈতিক - তাদেরও মনের খোরাক দিতে হবে। কিছু সমাজ পণ্ডিত, কিছু দার্শনিক, কিছু প্রযুক্তি বোদ্ধা। এই নানান ধরণের দর্শকদের মাথায় রেখে যদি সিনেমা বানানো না হয় - তবে সে সিনেমা কেমন সিনেমা হতে পারে?
একজন পরিচালক যদি একমাত্র তার কল্পনাকে বাস্তবরূপ দিতে চান, যেখানে দর্শকের পছন্দ-অপছন্দ পুরোপুরি উপেক্ষিত থাকবে - তারপরও সে সিনেমা হয়তো অনেক দর্শকের ভালো লাগতে পারে। ঐ পরিচালকের কল্পনায় বিবিধ মানুষেরা অস্তিত্বময় ও অনুভূতিময় থাকেন বলেই হয়তো সকল শিল্পগুণ মূর্ত হয়ে ওঠে। বা এই বিশাল বিচিত্রতায় পরিচালক মনোনিবেশ করাকে সুযোগ হিসাবে দেখেন আনন্দের সাথে, আরো শিল্পময় বানাবার লোভে।
গহীন বালুচর দেখে আমি এসবই ভাবতে বসে গেলাম। সিনেমাটিতে যা দেখলাম তা খুব আকর্ষণ করতে পারলো না। যেমন গল্পটির মধ্যে চরদখল বা লড়াই থাকলো ফ্ল্যাশব্যাকে এবং অল্প একটু দৃশ্যে - অথচ সিনেমাটিক আয়োজনে সেটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় হবার কথা। গ্রামীণ মানুষের ডায়ালেক্ট শুধু নয়, গলার স্বরের মধ্যেও তারতম্য রয়েছে শহুরে - আধুনিক স্বরের সাথে। দেহভঙ্গি ও চেহারার পার্থক্য তৈরি হয় দীর্ঘদিনের গ্রামে থাকা মানুষের সাথে শহরের। গানের সাথে নাচের, গানের ভাষার সাথে গায়কী আর গ্রামীণ পটভূমির চিত্রায়নের একটা বিসদৃশ আছে এই সিনেমার। প্রতিশোধ-কাঙ্খায় তীব্রভাবে নিমজ্জিত একজন প্রবল ক্ষমতাশীল গ্রাম প্রধানের হঠাৎ মনোজগতে শত্রুপক্ষের সাথে আপোষকামিতা প্রত্যাশিত না হলেও হয়তো বিরল নয়। কিন্তু এই পরিবর্তনের সাথের দৃশ্য পরিস্ফুটন আর আবহ সঙ্গীত যেনো একই মাত্রায় উঠানামা করেনি। ফলে একই মানুষের দৃঢ় ও কোমল রূপের উপস্থাপনায় ডায়লগ বা দৃশ্যান্তরের সময়টুকুতে ঘাটতি ছিলো। আরো কয়েকটা চরিত্রে এমন হয়েছে।
সিনেমাটি দেখে যা যা মনে হলো সেসবই এই সিনেমার অবদান। অভিনয়, গান এবং দৃশ্যায়ন একক সিনেমা হিসাবে না দেখে আলাদা আলাদাভাবে দেখলে অনেক কিছুর প্রশংসা করতে পারি। যেমন নতুন নায়কটিকে খুবই চমৎকার লেগেছে দেখতে। মিজান চরিত্রটিতে যিনি অভিনয় করেছেন তাকে পুরষ্কার দেয়া যায়। আসাদ, সুবর্ণা, বাবু, জিতু - এদের খারাপ অভিনয়ও বিরক্তির উদ্রেক করে না।
গহীন বালুচরের পরে সৌদ অনেক ভালো সিনেমা বানাবেন নিশ্চয়ই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৩