এই পোস্টটি তাদের জন্য যারা অতিচেতনার বাস্তব ভাবে পরীক্ষা না করে, শুধু মাত্র বিজ্ঞানীদের লেখাকে উদাহরণ হিসেবে টেনে, এক কথায় অতিচেতনার অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন।
ছোটবেলায় কোয়ান্টাম মেথড বইটি পড়ে, কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জাগে, এই মেথডের বাস্তবতা কি ! অবিশ্বাসী মন নিয়ে এই মেথডের বাস্তবতা পরখ করার জন্য, ২০০৪ সালে চারদিনের কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশন কোর্স করি।
চারদিনের কোর্স কে অনেকটা মজা হিসেবেই নিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো টাকা দিয়ে কোয়ান্টাম গুরুর কথা শুনছি আর আজব আজব কল্পনা করছি । চারদিনের কোর্স অনেকটা কোয়ান্টাম মেথড বই কে কেন্দ্র করে করা। কোর্সের তৃতীয় দিন অতিচেতনার পথে পা দিলাম। মনে হচ্ছিলো সুন্দর একটা কাল্পনিক জগতে ঘুরছি। চিন্তার বৃত্তের বাহিরেও যেমন ইচ্ছা সুন্দর অবাস্তব কল্পনা করলাম। মনে মনে হাসিই পেলো, কোর্সের তৃতীয় দিনে নাকি কাল্পনিক জগতের ধ্যান পেরিয়ে অতিচেতনার জগতে পা দিয়েছি। কিছুই বুঝলাম না !
কোর্সের চতুর্থ দিন শুনলাম, আজ নাকি পরীক্ষা হবে। কি পরীক্ষা হবে, প্রশ্ন কি হবে, উত্তর কেমন হবে কিছুই জানতে পারলাম না। অনেকটা নার্ভাস-ই লাগছিলো, এই ভেবে যে তিন দিন তো আরামে আরামে কল্পনা করেছি, পরীক্ষার তো প্রস্তুতি নিই নি; পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর ও ফাঁস করা যাচ্ছে না। কী যে হবে !
যাই হোক কোর্সের চতুর্থ দিনে দুপুরে পরীক্ষা দিতে বসতে হলো। পরীক্ষার নাম : 'কোয়ান্টাম গেম'। তিন জন করে গ্রূপ করা হলো। পরীক্ষার নিয়মাবলী, প্রশ্নপত্র ও উত্তর লেখার সিট হাতে দেওয়া হলো।
প্রশ্নটা করতে হবে আমাদের নিজেদের চেনা কোনো লোককে নিয়ে, যার সমন্ধে আমরা সঠিক ভাবে জানি। লোকটির ১) নাম ২) বয়স ও ৩) ঠিকানা, শুধু পরীক্ষার্থী কে বলা যাবে, আর অন্য কোনো হিন্টস দেওয়া যাবে না। এই লোকটি প্রশ্নকারী বা অন্য একজনের চেনা, কিন্তু পরীক্ষার্থীর জন্য সম্পূর্ণ অচেনা। পরীক্ষার্থী মেডিটেশনের পদ্ধতি অনুসারে, ধ্যানে কল্পনার জগতে যেয়ে, লোকটি সমন্ধে যা যা দেখতে পায়, তা তা ধ্যানরত অবস্থায়-ই বলবে।
তিনজনের মধ্যে একজন ইন্সট্রাকশন দিয়ে পরীক্ষার্থীকে ধ্যানের জগতে কল্পনায় নিয়ে যাবে ও লোকটি সমন্ধে প্রশ্ন করবে; অন্য জন পরীক্ষার্থীর ধ্যানরত অবস্থায় বলা, উত্তর গুলো লিখবে। উত্তরপত্র দেখে মার্কিং করবে, যে ঐ লোকটি সমন্ধে সঠিক জানে।
আমি ভাবলাম পরীক্ষায় ভালো করলে তো ভালো, না ভালো করলেও অতিচেতনা কে ভুল প্রমাণ করা যাবে। আমি একজনকে, আমার বাবা সমন্ধে শুধু নাম, বয়স ও ঠিকানা বললাম। আশ্চর্য হলাম, যখন পরীক্ষার্থী আমার বাবা সমন্ধে প্রায় সব কিছু সঠিক বলতে পারলেন অথচ পরীক্ষার্থীর জন্য আমার বাবা সম্পূর্ণ অজানা ও অচেনা মানুষ। এর পরে আমার পালা। আমি ধ্যানে যাওয়ার পর , একজন লোকের নাম, বয়স ও ঠিকানা বলাতে, লোকটি কল্পনায় ভেসে এল। লোকটি সমন্ধে যা যা কল্পনায় দেখলাম, তাই বললাম।
ধ্যান থেকে উঠে শুনলাম, আমি লোকটি সমন্ধে ১-২ টা ভুল ছাড়া, সব গুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছি। মার্কে ১০০ তে ৯৫ পেয়েছি। অনেক অবাক লাগলো এই ভেবে যে, গভীর ধ্যানের জগতের কল্পনাও সত্য হয়।
এটাই বুঝলাম, অতিচেতনার জগতকে থিওরি নয়, প্র্যাকটিকেল দিয়ে বুঝতে হয়।
মেডিটেশন করতে আপনাকে কোনো ধর্মের অনুসারী হতে হবে না, আপনাকে শুধু ফাঙ্কশনিং মস্তিষ্কের মানুষ হতে হবে। নিচে ABC Science এর "The Science of Meditation" ভিডিওটি দেখে কিছুটা ধারণা করা যায় এটা কিভাবে কাজ করে :
ছবি কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট