মানুষের মনের মধ্যে কত ধরনের ভয় যে ঘোরাঘুরি করে, তার যেন কোনো শেষ নাই। দুর্ঘটনার ভয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়, পোকা মাকড়ের ভয়, নিরাপত্তার ভয়, রোগ ভয়, দারিদ্রের ভয়, দুঃখ পাওয়ার ভয়, জাদু-টোনার ভয়, জ্বীন-ভূতের ভয়, অভিশাপের ভয়, মৃত্যুভয়।
আদিম কাল থেকেই এই ভয় গুলোর সাথে মানুষ পরিচিত। আর তাই, ভয় গুলো থেকে মুক্তিদানকারী কল্পিত প্রভু, গড, দেব - দেবীদের কাছে আত্মসমর্পন করা, ভক্তি করার, পূজা দেওয়ার রীতিনীতি আদিম কাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চলে আসছে। এই রীতিনীতি গুলো পরিবার থেকে শুরু হয়ে, বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রচলিত হয়। ভৌগোলিক ভাবে এই ভয় গুলোর ধরন ভিন্ন; তাই বিশ্বাসে, রীতিনীতিতে, দেব-দেবীতে ভিন্নতা পেয়েছে।
সময়ের সাথে বিভিন্ন গোষ্ঠীতে কিছু বুদ্ধিমান লোক এই কারসাজি বুঝতে পারে। এই লোকেরা কল্পিত দেব - দেবীদের কাছে প্রার্থনা করে ভয় সমস্যা সমাধানের নির্ভয় দিত। মানুষরা অন্ধ বিশ্বাসে এই লোকগুলোকে দিয়ে প্রার্থনা করে নিয়ে, তার কাছে থেকে তাবিজ-কবজ বা নানাবিধ পথ্যাদি নিয়ে উপকার পেত। কোনো সময় উপকার না পেলে, এই লোক গুলোর কাছে আসলে, এই বুদ্ধিমান লোকেরা আরো একটি ভয় দেখিয়ে কৌশলে উত্তর দিতো। স্বাভাবিক ভাবে এই লোকগুলোকে, মানুষ গোষ্ঠীর নেতা / বাবা / গুরু বানিয়ে দেয়। তখন গোষ্ঠীর লোকদের জন্য নীতি নির্ধারণ ও এই গুরুজীরা করতো।
একটি গোষ্ঠীতে সফল লোকের সংখ্যা বেশি হলে, স্বাভাবিক ভাবে ঐ গোষ্ঠী ত্যাগ করে মানুষ নতুন কোনো গোষ্ঠীর বিশ্বাস গ্রহণ করতে চাইবে না। তাই অন্য গোষ্ঠীর বিশ্বাসে থাকলে কি কি ক্ষতি হবে, এই ভয় দেখানো, নতুন কোনো গোষ্ঠীর জন্য কঠিন হয়ে পরে । তাই, এই ঈশ্বরের প্রতিনিধি গুরুদের বুদ্ধি খাটিয়ে মৃত্যু পরবর্তী কাল্পনিক নরকের ভয়ের কথার অবতারণা করতে হয় এবং এই কাল্পনিক ভয় থেকে মুক্তি পেতে হলে একমাত্র এই গোষ্ঠীর বিশ্বাসের সাথে একত্ব হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই বলে, প্রচারণা চালাতে থাকে।
এই ভাবে ভয়কে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে, ভ্রান্ত বিশ্বাসে মানুষকে বন্দী করে, এখনো আমাদের সমাজে ধর্মীয় নেতারা, বাবারা, গুরুজীরা, মোল্লা- মৌলভীরা, জাকির নায়েকেরা শাসন করে চলছে।
আর, ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে তৈরী ভয় বা 'নট একচুয়াল ফিয়ার' কিভাবে আমাদের ব্রেইনকে প্রভাবিত করতে পারে আসুন তা আমরা নিচের ইউটিউব ভিডিওতে দেখি।
সবার জন্য শুভকামনা রইলো, যেন আমরা ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে তৈরী ভয়কে দূরে রেখে ব্রেইনকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে এইসব ধর্মীয় নেতাদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে এসে জীবনে সফল হতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:০৫