বাউল সম্প্রদায়ের গুরু হল লালন। লালনের কিছু কিছু গানে আল্লাহরাসূল প্রভৃতি শব্দ থাকায় অনেকে লালন ও তার অনুসারী বাউলদের অনৈসলামিক মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। মুসলমানরা যখন লালনের অনুসারী বাউলদের অসামাজিক কাজের বিরোধিতা করে তখন সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের গুটিকয়েক সমাজচ্যুত বাউলদের জন্য সইতে হয় সাম্প্রদায়িকতার অপবাদ। যারা বাউলদের পক্ষাবলম্বন করছে তারা কি জানে বাউল তত্ত্বের উদ্দেশ্য কি? বাউল নামটি এসেছে বা’ল বা হোবল দেবতার নাম হতে। এবং বাউল তত্ত্বের বাইরে হল ইসলামের ভেক বা ছদ্মবেশ, ভেতরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের কাহিনীনির্ভর বৈষ্ণব বা সহজিয়া মতবাদ। গুরুরতি সাধন করা বা গুরুর মলমূত্র বীর্য রজঃপান বাউলমতে দীক্ষা নেয়ার প্রথম ধাপ(নাউযুবিল্লাহ)। লালনের অধিকাংশ গান রাধাকৃষ্ণ দেহসাধনা নিয়ে লেখা, দু একটি গানে ইসলামের কথা যা আছে তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসলামের জন্য অবমাননাকর। হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে আমাদের দেশে একটি গুজব রয়েছে আর তা হল তিনি প্রথম জীবনে ছিলেন ডাকাত, পরে আউলিয়া হন। কিন্তু কথাটি সর্বৈব মিথ্যা। তিনি ছিলেন আওলাদে রাসূল মাদারজাদ ওলীআল্লাহ, উনার যামানার মুজাদ্দিদ। আর এ গুজবের হোতা হল লালন তথা বাউল সম্প্রদায়। লালনের গানে আছে
নিজাম নামের বাটপার সেতো পাপেতে ডুবিয়া রইত
তার মনে সুমতি দিলে,কুমতি তার গেল চলে
আউলিয়া নাম খাতায় লিখিলে, জানা গেল এই রহমই
বাউলতত্ত্ব বইতে রয়েছে ““ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমবায়ে গড়ে উঠেছে একটি মিশ্র মত। যার নাম নাথপন্থা। দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (নাথপন্থা এবং সহজিয়া) এ দুটো সম্প্রদায়ের লোক একসময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়, কিন্তু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলেই ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মের আওতায় থেকেও এরা পুরনো প্রথায় ধর্ম সাধনা করে চলে”
বস্তুতঃ বাউলরা হল মুসলমানের ছদ্মবেশে হিন্দু বৈষ্ণব, যারা মুসলমানের ঈমান কেড়ে নিতে চায়। তারা আল্লাহরাসূলের কথা বলে পুরোন প্রথা তথা রাধাকৃষ্ণের দেহতত্ত্বের সাধনা করে। যবনলালন মুসলমানদের প্রতি কীরূপ মনোভাব পোষণ করতো তা কিন্তু তার গানেই রয়েছে। লালন তার গানে সাধারণত কখনোই মুসলমানদের মুসলমান বলে সম্বোধন করতোনা, করতো যবন বলে(নাউযুবিল্লাহ)। সে হিন্দুদের হিন্দু বলত, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ বলত, খ্রিস্টানদের বলত খ্রিস্টান। কিন্তু এক মুসলমানকে সর্বদা বলত যবন। এ অবমাননাকর উপাধি সর্বদাই সে মুসলমানদের জন্যই ব্যবহার করতো, অন্য কারো জন্য নয়। যেমন লালনসমগ্র(আবদেল মাননান,প্রকাশক নালন্দা) এর স্থুলদেশ অধ্যায়ের ৩৮ নম্বর গানে রয়েছে
জাত বলিতে কি হয় বিধান
হিন্দু যবন বৌদ্ধ খৃস্টান
এরকম আরো বহু গান রয়েছে যার উদ্ধৃতি দিলে লেখার কলেবর বেড়ে চলবে। সে তার সাঁই বা যাকে মুর্শিদ মানতো তাকেও যবন বলতো। কারণ তার মুর্শিদের নাম ছিল সিরাজ সাঁই, সে ছিল মুসলমান ঘরের সন্তান। তার গানে (স্থূলদেশ ৫২ নং)রয়েছে
ভক্তের দ্বারে বাঁধা আছে সাঁই
হিন্দু কি যবন বলে
জাতের বিচার নাই
অর্থাৎ লালনকে যতই অসাম্প্রদায়িক প্রমাণের চেষ্টা গন্ডমূর্খরা করুক না কেন, সে কিন্তু এমন একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছে যেখানে মুসলমান তো বটেই এমনকি মুসলমান সাঁইকেও হতে হয় অপমানিত। লালনের যে গানটিকে(স্থুলদেশ ৩৫ নং) পুঁজি করে লালনভক্তরা তাকে অসাম্প্রদায়িক প্রমাণের চেষ্টা চালায় তা হলো
এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে
যে দিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃস্টান
জাতিগোত্র নাহি রবে
এ গানটিতেই কেবল মুসলমান শব্দের দেখা মেলে, কিন্তু কখন? যখন মুসলমান জাতির বিনাশ কামনা করা হয়! নাউযুবিল্লাহ। লালনের কোন গানে মুসলমানকে মুসলমান বলার সম্মানটুকু দেয়া হয় নাই। যাও একবার বলা হয়েছে, তাও ধ্বংস কামনা করে। চৈতন্যদেবের মত বৈষ্ণব(হিন্দুধর্মের একটি ফেরকা) ধর্মপ্রচারকের যে স্বভাব তার পুরোটাই লালনের মধ্যে ছিল। চৈতন্যদেব বৈষ্ণবমত গ্রহণকারী মুসলমান ঘরের মুরতাদকেও যবন বলে হিন্দুদের তুলনায় নিকৃষ্ট গণ্য করতে ছাড়তো না, তাদের মত গ্রহণ করলেও তাদের অন্তর্ভূক্ত গণ্য করত না। অর্থাৎ তারা যতই উদারতার ভেক ধরুক না কেন তাদের অন্তর গরলে পরিপূর্ণ। উল্লেখ্য লালন নিজেও ছিল চৈতন্যদেবের অনুসারী। প্রত্যেক বৈষ্ণবধর্মপ্রচারকের স্তুতি লালনের গানে আছে। নিমাই, নিতাই, গৌর বা চৈতন্যদেব প্রত্যেকের ছানাছিফত সে করেছে। এবং এত বেশি করেছে যে লালনসমগ্র গ্রন্থে নিমাইলীলা, নিতাইলীলা, গৌরলীলা এ তিন ধর্মপ্রচারকের নামে তিনটি আলাদা আলাদা অধ্যায় রয়েছে। কিন্তু বাউলরা পাগড়ি পরে, দাড়ি রাখে, লুঙ্গি পরে। যা বৈষ্ণবরা করে না। পাগড়ি দাড়ি লুঙ্গির আড়ালে তারা বৈষ্ণবসাধনা করে।
অর্থাৎ লালন কখনোই অসাম্প্রদায়িক নয়। সে হল দুরাচার যবন অনুপ্রবেশকারী, যে ইসলামের ভেক ধরে মুসলমানদের সর্বনাশ করতে উদগ্রীব থাকতো। শুধু তাই নয়, লালনের সাথে সুসম্পর্ক ছিল ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের, যে ঠাকুর পরিবারের সদস্য ইসলামবিদ্বেষী যবন রবীন্দ্রনাথ! যারা বাউল সম্প্রদায়ের ইতিহাস জানেন তারা অনেকেই মানবেন, এদেশের মুসলমানদের পথভ্রষ্টকারী যেসব মতবাদ ছিল তার মধ্যে বাউল মতবাদ অন্যতম। উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে প্রায় সকল মুসলিম লেখকগণ মুসলমান সমাজে বাউল মতের বিধ্বংসী প্রভাব দেখে এ মতবাদের বিরুদ্ধে লিখে গিয়েছেন।
কোলকাতার যবনরা আমাদের দেশে লালন মতবাদের প্রচারপ্রসারে উদগ্রীব। কিছুদিন আগেই কোলকাতার কিছু যবন এদেশে ‘মনের মানুষ’ নামে একটি সিনেমা করে গিয়েছে। এর কারণ লালন মতবাদ হল ইসলামের ছদ্মবেশে রাধাকৃষ্ণ তথা হিন্দুদের মতবাদ। এদেশে এখন ব্যান্ডসংগীতের নাম দিয়ে কৃষ্ণকীর্তন করা হয়। রাস্তাঘাটের গানের দোকান থেকে কৃষ্ণলীলার গান ভেসে আসে, যা এখন দেশের মানুষের কাছে দুঃখজনকভাবে স্বাভাবিক। এবার নববর্ষে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ভার্সিটি এলাকার দেয়াল কৃষ্ণের ছবি দিয়ে ভরে ফেলেছে, যা কিছুদিন আগেও ছিল অকল্পনীয়। এদেশের সংবিধান সংস্কৃতি মানুষের চিন্তাচেতনা থেকে যারা ইসলামকে উঠিয়ে দিতে চায় তারা জানে, একদিনে এ মহাযজ্ঞ সম্ভব নয়। এজন্য তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, বাউল মতবাদের আড়ালে মুসলমানদের মনমগজে ঢুকিয়ে দিচ্ছে কৃষ্ণের অভিশপ্ত পরকীয়ার শিক্ষা। স্লো পয়জনিংয়ের মতো হিন্দুরা আমাদের মুসলমানিত্বকে আমাদের মধ্যে থেকে কেড়ে নিয়ে হিন্দুধর্মের দীক্ষা দিচ্ছে, কথিত সংস্কৃতির নামে। সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা মুনাফিকরাও তা চায়। এজন্য কিছুদিন আগেই এপ্রিল মাসে রাজবাড়ীর পাংশায় বাউলদের কথিত সাধুসঙ্গে তাদের চুলদাড়ি কেটে নেয়ার পরই সরকার তৎপর হয়ে উঠল। কথিত সুশীল সমাজ এবং লালনের গান গেয়ে জীবিকা অর্জনকারী ব্যান্ড গায়করা বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। প্রথম আলোর মত সাম্প্রদায়িক ইসলামবিদ্বেষী পত্রিকাগুলো বাউলদের সপক্ষে লেখা শুরু করল। ফলশ্রুতিতে সরকার বাউলদের জন্য ৯৭ শতাংশ মুসলমানের টাকায় চালিত পুলিশ প্রশাসন দিয়ে পুনরায় বাউল গায়কদের সাধুসঙ্গের আয়োজন করল। অথচ চুলদাড়ি কেটে নিয়েছিল আওয়ামীলীগেরই তৃণমূল নেতাকর্মীরা, মিডিয়াকর্মীরাও কবুল করেছে বাউলদের অসামাজিক কার্যের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকদেরও ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। স্থানীয়রাই উদ্যোগী হয়ে বাউলদের জটাদাড়ি কেটে নিয়েছিল(সুন্নতী দাড়ি নয়), কারণ বাউল সম্পর্কে আরেকটি বিষয় হলো তারা গাঁজায় আসক্ত, যুবসমাজ থেকে তারা তাদের নিজেদের উত্তরসূরি বেছে নেয়। এজন্য তারা নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষার্থে বাউলদের জটা কেটে,দাড়ি সিনা পর্যন্ত কেটে ইমাম দিয়ে তওবা পড়িয়েছিল, যেন বাউলরা সৎপথে ফিরে আসে। কিন্তু সরকার আসল বাউলদের ত্রাণকর্তারূপে, আবারও বসল সাধুসঙ্গ। যারা সাধুসঙ্গ সম্পর্কে জানে তারা বলেছে, সাধুসঙ্গ হলো বাউলদের কুকর্মের আনুষ্ঠানিক মহাযজ্ঞ। অর্থাৎ তাদের নাপাক বস্তু ভক্ষণ এবং কৃষ্ণের অনুকরণে তারা যে অবাধ মেলামেশা করে তার আসর। সাধুসঙ্গে সকালে মাইকে গান হয়, রাতে সমস্ত বাতি নিভিয়ে হয় জেনার আসর।নাউযুবিল্লাহ। এ আসরের উদ্যোক্তা কুরআন হাদীসের বিরুদ্ধে আইন করবে না, এরূপ খত দিয়ে আসা আওয়ামী সরকার! তাও আবার দেশের ৯৭ শতাংশ মুসলমানের টাকায়! মাননীয় সরকারকে আহবান করছি, নিজের ভুল স্বীকার করে সঠিকপথে ফিরে আসুন। বাউলদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে, ইসলামবিদ্বেষী যবনঠাকুরের গুণকীর্তন থেকে নিজেদের ফিরিয়ে আনুন। কারণ এদেশের মুসলমানরা চালের দাম নিয়ে হঠকারীতা সহ্য করতে পারে কিন্তু ঈমান নিয়ে নয়। তাদের জীবনের চেয়ে ঈমানের মূল্য তাদের নিকট অনেক বেশি। তারা ৫০ টাকা কেজি চাল খেতে পারে, কিন্তু নিজেদের টাকায় বাউলদের জেনার আসর বসানোকে তারা কখনোই বরদাশত করবে না।