ফিনকি দিয়ে ছ্যাৎ করে রক্ত ঘরের ছাদে যেয়ে লাগলো। কেউ যেন রক্ত ছিটাচ্ছিলো ঘরের দেয়ালগুলোতে । তখনো গোঙানির শব্দ হচ্ছিলো। রক্ত মেঝেতে গড়িয়ে গড়িয়ে ড্রেসিং টেবিল পর্যন্ত চলে আসলো। রূপা ঘুমের ঘোরেই বিছানা থেকে নামার জন্য মেঝেতে পা রাখলো। মেঝেতে পা রাখতেই তার কাছে হালকা গরম গরম কিছু লাগলো পানির মতো। নীচে তাকাতেই রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গেলো সে। এরপর যেই চোখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে নিলো তখনই দেখতে পেলো শামীমের অর্ধেক দেহ জানালার বাহিরে, বাকি অর্ধেক ঘরের ভিতর । তার পা ধরে বাহির থেকে কেউ টানছিলো, আর ঘরের ভিতরে তার গলা ধরে টানছিলো কেউ খুব বল প্রয়োগ করে । শামীমের গলা প্রায় দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায় এমন হয়ে আছে তাই গলা দিয়ে রক্ত প্রবল বেগে ঝরে পড়ছিলো । রূপা এই দৃশ্য দেখার পর খুব ভয় পেয়ে তখনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।
পাঁচ দিন পর রূপার জ্ঞান ফিরে । জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালের বিছানায় । তার পাশে তার শশুড়-শাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে । সে জ্ঞান ফিরার পর পরই শামীমের কথা জিজ্ঞেস করলো । যখন তারা কেউ শামীমের কথা বলছিলো না তখন সে হু হু করে কেঁদে উঠলো । তাদের বিয়ে হয়েছে এক সপ্তাহও হয়নি, এর আগেই শামীম চলে গেলো আর রূপা হয়ে গেলো স্বামীহারা । খুব ছোটবেলায় রূপার মা-বাবা মারা যায়, এরপর মামার কাছে অনেকটা আশ্রিতার মতোই ছিলো সে । বিয়ে হওয়ার পর সে ভাবছিলো এবার হয়তো জীবনে আসলেই একটা মাথা গোঁজার ঠাই সে পেলো । কিন্তু কি হলো, অভাগী রূপা এবার একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাইটাও হারালো । শামীম খুব ভালোবেসে ফেলেছিলো বিয়ের ঐ কয়দিনের মধ্যেই রূপাকে । রূপাও যেন শামীম ছাড়া কিছু বোঝতোনা দুনিয়াতে আর । ভালোবাসাগুলো কেমন যেন কোন সময়ের বলয়ে তাকে বাঁধা যায় না । যেই মানুষটিকে আপনি ভালোবেসে ফেলবেন তাকে যেন মনে হবে কত বছর আগে থেকে আপনি তাকে চিনেন । যেন ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়ার পরপরই ভালোবাসার বয়স কয়েক হাজার হয়ে যায়, মানুষগুলো কত সহস্র বছরের পরিচিত হয়ে যায় । আসলে ভালোবাসাকে নিছক সময়ের ফ্রেমে আনা যায়না । ভালোবাসা ভালোবাসাই, এরকোন সময় নেই । আজ হলেও ভালোবাসা , বিশ বছর হলেও ভালোবাসা । আজ, পরশু আর আগামীকাল ভালোবাসা কখনো কমে যায়না । ভালোবাসা ভালোবাসার মতোই অটুট থাকে । রূপার শামীমের প্রতি ঐ ভালোবাসা তাই হয়তো কখনো আর শেষ হবে না ।
শোনা যাচ্ছে প্রায় বাড়িতে মানুষেরা ইদানিং ভয় নিয়ে থাকে । কখন কার উপর মৃত্যুর ছোবল এসে পড়ে তা বলা যায় না । শামীমের পরই আরও দশজনকে এভাবে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে । প্রত্যেকটি মৃত্যুই ছিলো নৃশংস ।
(চলমান)
২৮ মার্চ, ২০১৭