পয়লা কিস্তি
বারাক ওবামা মার্কিন মুল্লুকের মাননীয় হর্তাকর্তা হইছেন। সে মুল্লুকের বাসিন্দারা তারে সাদা-বাড়িতে যাইবার টিকেট দিছে। তো, বারাক হোসেন ওবামা কালো চামড়ার একজন আফ্রো-আমেরিকান, ডেমোক্রাট এতো হইচই বাধাঁইলেন ক্যেমনে? এত্তো মাতামাতির হইলোটা কি? দুনিয়াতে কি সত্যিই উথাল-পাথাল পরিবর্তন আইসা পড়লো নিহি! মার্কিন মুল্লুকের শরীফ বাসিন্দারা হঠাৎ জাইগা উঠলো? কী তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দিল? এত এত সাধু রব!
এইসব আউলার মইধ্যে, বা তারোও আগে যখন জল্পনা চলতাছিলো আর নানা মুনিরা গভীর পাণ্ডিত্যের ততোধিক ভার নিয়া নানান চ্যানেল, মিড়িয়ায় কথামৃত ছড়ায়া যাইতেছিলেন তখন থেইকাই খাবি খাইতাছিলাম।
আমরা চাই বা না চাই যেহেতু সাম্যাজ্যের নতুন সম্রাটের অভিষেক হইবো, বেবাকরেই তা জানতে হইবো, বাচতে হইবো! স্মরণে আসে কিছুকাল আগে প্রয়াত মহান পোপ(সম্রাটের) কথা। তাঁর মৃত্যু ও উত্তরসরির আগমন টানা দুইটা হপ্তা জগৎবাসির অবিরাম হজম করতে হইছিলো, যেন তখনো দুনিয়ায় একটা মহাপ্রলয় ঘটিয়া গিয়াছিলো। খৃস্ট ধর্ম ও মার্কিন দেশ তাবত দুনিয়ার যা কিছু আলো ও ভালো-- সব কিছুর একচেটিয়া মালিকানা রাখে। মুক্তি ও মঙ্গলের সবটাই তাহারা উদার হস্তে দিকে দিকে সেই কবে থেকে বিতরণ করিয়া অভ্যস্ত। তবু বাদবাকি দুনিয়ার বাদামি অদমি হওয়ার জন্য অথবা খাসিলতের দরুন( কলনিয়াল মাস্টারগো ভাষায়) মন খালি খসখস করে।
পিওয়র ব্লাক বা ন্যাটিভ দুটার কনোটাই ওবামা না, হাফ কেনিয়ান লিগেসি(বাবার সহচার্যে থাকার সুযোগ পান নাই)। মার্কিন মাতা অ্যান ডানহামের ঘরে জন্ম(৪আগস্ট ১৯৬১), পরে দ্বিতীয় পিতা ইন্দোনেশিয়ান হওনের সুবাদে সেইখানে বাল্যকাল কাটাইছেন। ১০ বছর পর থেকা নানা-নানির কাছে হাওয়াইতেই বড় হইছেন। কলাম্বিয়া এবং হার্ভাড গ্রাজুয়েট-- রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইনে। নানা কমিউনিটি ও চার্চ বেইজ অর্গানাইজেশনের লগে কামকাজ করছেন। তার কারণে নির্বাচনি প্রচারণার সময়ে টুকটাক হেপাও সামলাইতে হইছে। ওবামা কোন ধরণের ও কতটুকু খ্রিস্টান তা পাই পাই কইরা হিসাব দিয়া খালাস পাইতে হইছে। বাইবেল ধইরা কিরা-কসম কাটা দেইখা অবশ্য এদেশীয় (আবাল)কিছু সেক্যুলার হায় হায় কইরা মাতম তোলার জোগাড়। যাউক সে কথা, মোটামুটি সবকয়টা জায়গাতেই ওবামা পাস করে কেবল সন্দেহ আর দুরু দুরু বুক ধুকপুকানি জারি থাকে জন্ম দোষে কালা-চামড়াটা নিয়া। ইহাতেই জগতের যত বর্ণবাদ নির্মূল আর ইতিহাস পয়দা করার হূলস্থুল বাইধা যায়।
আর কিছু না, ওবামার আর কোন বিশেষত্ব নিয়া কথা উঠে নাই। অবশ্য সেটা নাইও, হেই বাতচিতই অধমের মূখ্য আলোচ্য। পরে আসতাছি।
ওবামার চামড়া নিয়া হাউকাই লাইগা যাওনের কারণ যে নাই তা কিন্তু না। পৃথিবীতে আধুনিক সভ্যতা আর হালে 'ঈশ্বরের উপহার' গণতন্ত্র রপ্তানির সোল এজেন্ট হইলেও এরা সভ্যতার অতি প্রাথমিক বিষয়গুলাও হাসেল করতে পারে নাই। লাখ লাখ রেড ইন্ডিয়ানদের গণহত্যার মাধ্যমে যে যাত্রার সূচনা করছে তা ভূগোলের আর আর অংশে জারি তো আছেই অ-খ্রিস্টান (শুধু ইহুদিরা বাদে) ও অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীর লোকরা এখনো সেইখানে তৃতীয় চথুর্ত শ্রেণীর। আর একদা যারা গোলাম-দাস ছিলো সেই কালা আদমির বংশধররা-- মার্কিন মোট জন সংখ্যার ১২% কিন্তু মোট কয়েদির অর্ধেক--কয়েধখানায় পচতাছে। প্রতি তিজনের মইধ্যে অন্তত একজন কালা আদমিরে জীবনে একবার হইলেও কাঠগড়ায় খারাইতে হয়। আফ্রো-আমেরিকান লোকদের দারিদ্রাবস্থা মহামারির লাহান। তারা বহুত গবেষণা কইরাও তাল পাইতাছেনা যে চাকুরি, আবাসন, স্বাস্থ্য ... ইত্যকার নাগরিক সেবা পাইতে গেলে কালাদের কেন বর্ণবাদের শীকার হইতে হয়, বঞ্চনার শূলে চড়া থামে না। এত উন্নত গণতন্ত্রের মড়োলদের মুল্লুকে ইহা তো সত্যিই আজিব। কি করিয়া তাহারা প্রমাণ করিবে যে কালাদের ছাড়া মার্কিন মুলকিয়াত অচল, তাহারা কি কলিন পাওয়েল ও কন্ডলিজা রাইসকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শীর্ষ ক্ষমতাধর পোস্টে বসায় নাই। তার পর ও এইবার ওবামারে খালি ভোট না রিতিমত প্রেসিডেন্ট বানাইয়া প্রমাণ করতে হইলো তাহারা আর বর্ণবাদী না। কি মুশকিল ওবামার রাজনীতি পচন্দ না হইলেও বর্ণবাদীর খেতাব পাইতে হইবো। এ এক জটিল সমস্যা। যারা ওবামারে ভোট দিছেন তারা সবাই বর্ণবাদ ছারায়া গেছেন আর যারা ভোট দেন নাই তারা হগ্গলে রেসিস্ট?
এই সওয়াল ধইরা পরের কিস্তিতে আগানোর ইরাদা রাখি...
বারাক ওবামা: চামড়া নিয়া ডগমগ করার রাজনীতি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।