১.অনেক দিন চুপ মেরে ছিলাম, ঝিম ধরা লাটিমের মত নিজের বৃত্তে বন্দী ছিলাম কোন কারণ ছাড়াই। কারণ একটা আছে বৈকি। বিজয়ের আনন্দ নিয়ে একটি চমৎকার লেখা লিখব ভেবে অপেক্ষার প্রহর কাটিয়েছি । অন্তহীন প্রতিক্ষা.. যেন সাত আসমান থেকে অবতীর্ণ হবে কাংখিত শব্দমালা, যেন পৃথিবীর অন্তস্থ কোন থেকে উঠে আসবে অচিন সুর। যেমন চাতক প্রতিক্ষায় থাকে কখন আসবে কাংখিত বৃস্টি। সিক্ত করে দিয়ে যাবে শুকনো পৃথিবীর বুক। সময় কেটে যায়, কিন্তু পারিনি। অনেক প্রচেস্টায়ও তৈরী হয়নি কোন শব্দের কারুকাজ। কিভাবে হবে। কোথায় আসবে সেই বিজয়ের সুখ। বিজয় মানেই এক অকৃত্রিম আনন্দের তরঙ্গমালা। নিস্ঠা, আন্তরিকতা, উদ্যম, সততা, মুল্যবোধ, সর্বোপরি দেশ গড়ার চেতনা যাকে পূর্ণতা দেয়। কোথায় পাবো সেই নিস্ঠা, কোথায় পাবে উদ্যমী মুল্যবোধ। আন্তরিকতা আজ হারিয়ে গেছে স্বার্থবাদিতার আড়ালে। অনেক চেস্টা করেও শষ পর্যন্ত আমি ব্যর্থ হয়েছি একটি সুন্দর ঢেউ তুলতে ।
২. ঈদ কাটলো নিজের দেশে। হিম হিম আমেজে কুয়াশার চাদর মেখে থাকে নিঝুম গাঁ। ভোরের শিশিরে সোনালী রোদের চিকচিকে চাহনি। তার মাঝেই বেড়ে ওঠে আমার গ্রাম, আমার স্বপ্নের সিড়ি। সকাল হতেই ঈদের নামাজের প্রস্তুতি। তারপর সারাদিন এটা সেটা করে কেটে যায়। সন্ধ্যা নামে। কোন একদিন হোসেন মিয়ার কথা শোনা যায়। গ্রামের সহজ সরল এ কৃষকের নিজের কিছু নেই। অন্যের জমিতে চাষ করে, সেখানেই যা পায় তাই খেয়ে শেষ। কত আয় কত ব্যয় হিসেব করারও যোগ্যতা নেই। আপাতত তার ঋনের পরিমান মাত্র এক লক্ষ টাকা। চক্রবৃদ্ধি সুদের হার বেড়েই চলছে। হাটতে হাটতে কথা বলছিলাম তার সাথে। খালি পায়ে মাথায় সবজির ঝাকা, কোন রাখঢাক না করেই বলছিলো সব কথা। শুনলাম, গৎবাধা কিছু পরামর্শ দেয়ারও চেস্টা করলাম। একসময় আলাদা হয়ে গেলো আমাদের দুজনের পথ। হোসেন মিয়া তার মত করে হেটে গেলো অচেনা বনলতা মাড়িয়ে। কদিন পরেই যে বিজয় দিবস হোসেন মিয়া কি তা জানে!!
৩. আজকের দুপুরের কথা বলছি। বিজয় দিবসকে বরণের প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। গাড়ির ফ্লাগস্টান্ডে নতুন ভাজ খোলা পতাকার আভাষ, দোকানের সামনে পতাকা উড়ানোর প্রস্তুতি, আর রাস্তায় বাশের খুটিতে বাধা বিভিন্ন সাইজের পতাকা নিয়ে ফেরী করছে হকার। ভদ্রলোক পতাকা কিনলেন , টাকা দিলেন, ঠিক এ মুহুর্তে হাত পাতলেন এক বৃদ্ধা। ভদ্রলোক একবার দেয়ার জন্য মনস্থির করলেন আবার যেনমত পরিবর্তন করলেন। আমার কোন অভিযোগ নেই, শুধু ভাবছি ঐ বৃদ্ধার কাছে ঐ পতাকার মুল্য কি।
৪. এত সব শেষেও বিজয় আমার বিজয়ই। এর কোন তুলনা হয়না। পরাজয়ের অন্তর্জালাকে আমি সহাষ্যে উপহাস করি। সবকিছু হারিয়েও একটুকরো পতাকা— আমার সম্বল। সবুজ জমিনে লাল সূর্যের রং মেখে উড়াই বিজয়ের নিশান। এই একটুকরো অবহেলিত পতাকাকে নিয়েই আমি নিস্ঠা, আনন্তরিকতা, উদ্যম, সততা, মুল্যবোধ, ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখি। লাল সবুজের টুকরো দিয়ে এমনকি শত্রুর মুখ মুছে দেই, এই টুকরো কাপরকে মাথায় বেধে সোনালী ধানের ক্ষেতে নেমে যাই, কখনো দাড়িয়ে পড়ি উদার যায়নামাজে,
প্রতিদিন সকাল হলেই যে সূর্য আমাকে স্বাগত জানায় তার হাসিতে কোন খাদ নেই। বিশাল পৃথিবী আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমার সম্ভাবনার কথা। বিজয়কে সামনে রেখে আমি ম্লান মুখে একবার তাই ক্ষমা প্রার্থনা করি। সিক্ত নয়নে অজানা সকল প্রানের মাগফেরাত কামনা করি,। তারপর... হে প্রভু, রক্ষা করো এই দেশ,, এই জনপদ..
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০১